বেশি খাজনা চাওয়ার প্রতিবাদ করা তরুণকে বাজারে বসতে দেননি ইজারাদার


ইব্রাহীম হোসেন সম্রাট: , আপডেট করা হয়েছে : 29-04-2023

বেশি খাজনা চাওয়ার প্রতিবাদ করা তরুণকে বাজারে বসতে দেননি ইজারাদার

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারে কয়েক গুণ বেশি খাজনা চাওয়ার প্রতিবাদ করা তরুণ কলি মাহমুদকে মাছের দোকান নিয়ে বসতে দেওয়া হয়নি। আজ শুক্রবার ওই বাজারে মাছ নিয়ে বসতে না পেরে বাড়ি ফিরে যান তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার চার ঘণ্টা ধরে মাটিতে বসে থেকে রসিদ ছাড়া কয়েক গুণ বেশি খাজনা চাওয়ার প্রতিবাদ করেছিলেন কলি মাহমুদ। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসে বিষয়টি মিটমাট করে দেন।

ওই বাজারের ইজারাদার ও বানেশ্বর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এরই মধ্যে সে (কলি মাহমুদ) যা করেছে তাতে সবাই ক্ষিপ্ত। এই পরিস্থিতিতে আমি বলেছি, রোববার বিষয়টি নিয়ে বিচার বসবে। এর আগপর্যন্ত তাঁর দোকান দেওয়ার দরকার নেই। সেই দিনই সব সিদ্ধান্ত হবে।’

বাজারের আর কোনো ব্যবসায়ীর অভিযোগ নেই দাবি করে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ওই ছেলে ঠিকমতো খাজনা দেয় না। আমি ওকে বলেছিলাম, খাজনা আদায়কারীর সঙ্গে তর্ক করবি না, যা খাজনা চায় দিয়ে দিবি। যদি বেশি নিয়ে থাকে তাহলে রোববার বসে বাড়তি টাকা ফেরত দিয়ে দেব। এরপরও সে মাটিতে বসে পড়েছে। সিনক্রিয়েট করেছে। ইউএনও-পুলিশ ডেকে আমাকে বেইজ্জতি করেছে।’

এ বিষয়ে পুঠিয়ার ইউএনও নূরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ প্রথম আলোকে বলেন, ওনারা নতুন ইজারাদার, তাই বুঝতে পারছেন না। সব ঠিক হয়ে যাবে।

কলি মাহমুদ রাজশাহী নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজে বাংলায় স্নাতক (সম্মান) পড়ছেন। তাঁর বাবা ইদ্রিস আলী জেলার পুঠিয়ার বানেশ্বর বাজারের একজন খুচরা মাছ বিক্রেতা। বাড়ি চারঘাট উপজেলার মাড়িয়া গ্রামে। কলি মাহমুদ ছুটির দিনে বাবাকে মাছ বিক্রিতে সহায়তা করেন। তাঁরা বানেশ্বর হাটের দিন ছাড়া অন্য দিনগুলোয় আড়ত থেকে মাছ কিনে ওই বাজারে খুচরা বিক্রি করেন।

কলি মাহমুদ আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ইজারাদারের লোকজন তাঁকে জানিয়ে দিয়েছেন, রোববার তাঁর বিচার হবে। এরপর সিদ্ধান্ত হবে তিনি বানেশ্বর বাজারে মাছের ব্যবসা করতে পারবে কি না। একজন খাজনা আদায়কারী তাঁকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘দোকান দিলে তোক আজ ফাটাব।’ ইউএনওর প্রসঙ্গ তুলতেই ওই খাজনা আদায়কারী বলেন, মাছ যদি কিনিস তোর কোন বাপ আছে, কোন ইউএনও আছে, ম্যাজিস্ট্রেট আছে দেকপনি আইজ।’ এরপরও কলি মাছ কেনার অনুমতি চাইলে তিনি বলেন, ‘তুই মাছ কিনবু কি না কিনবু সেডি তোর ব্যাপার। আমি যা বুলিচি সেডি বাস্তবায়ন কইরব আইজ। তুই আমাক চিনিস!’ এ কথা শোনার পর তিনি আর মাছ কিনতে সাহস পাননি।

কলি মাহমুদ আরও বলেন, খবর পেয়ে ইউএনও ইজারাদারের একজন অংশীদারকে পাঠান। তিনি কলি মাহমুদকে অন্য অংশীদারদের কাছে নিয়ে যান। তাঁদের তোপের মুখে তিনি কোনো কথা বলতে পারেননি। তাঁরা কলিকে রোববার বিচারের সময় আসতে বলেন এবং এ কদিন দোকান বন্ধ রাখতে বলেন। এরপর কলি বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরে যান।

বানেশ্বর বাজার উত্তরাঞ্চলের একটি বড় ব্যবসাকেন্দ্র। এখানে সপ্তাহে দুই দিন হাট ও প্রতিদিনই বাজার বসে। এবার বাজারটির ইজারা নিয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ।

তিনি বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হয়েছে ৫০ বছর আগে আর বানেশ্বর বাজার স্বাধীন হয়েছে ২০২৩ সালে। এত দিন পর্যন্ত এই বাজার জামায়াত-বিএনপির লোকেরা ইজারা নিয়েছে। এই প্রথম আমরা ইজারা পেয়েছি। ওই ছেলে তো (কলি মাহমুদ) শিবির করে। এই জন্য মুখে মুখে তর্ক। ২ কোটি ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে হাট ইজারা নিয়েছি, যা আগেরবারের দ্বিগুণ। এখন আমি খাজনার পরিমাণ বাড়াতে পারতাম। তা না করে আরও কমিয়েছি।’

কলি মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাবা ১৫ বছর বানেশ্বর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি (কলি মাহমুদ) যুব মৈত্রী পুঠিয়া উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক।

গতকাল সকালে বানেশ্বর বাজারের মাছের আড়ত থেকে ২০ কেজি মাছ কেনেন কলি মাহমুদ। এই সময় ইজারাদারের খাজনা আদায়কারী কুরবান আলী ৬০ টাকা খাজনা দাবি করেন তাঁর কাছে। সরকার নির্ধারিত খাজনা হচ্ছে প্রতি মণে ২০ টাকা। কলি মাহমুদ জানান, সেই হিসাবে তাঁর ২০ কেজি মাছের জন্য খাজনা হবে ১০ টাকা। ছয় গুণ বেশি খাজনা দাবি করায় কলি আদায়কারীর কাছে রসিদ চান। কিন্তু রসিদ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন কুরবান আলী। তবে ৬০ টাকা খাজনা না দিলে তাঁকে স্থান ত্যাগ করতে দেবেন না বলেও জানান তিনি।

এ ঘটনার প্রতিবাদে সকাল সোয়া ৬টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মাছ বিক্রি না করে মাটিতে বসে থাকেন কলি মাহমুদ। পাশে অন্য ব্যবসায়ীরা দাঁড়িয়ে থেকে তাঁকে সমর্থন দেন। ইউএনও আসার পর তিনি ওঠেন।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]