মৃত্যুর পরেও মানুষের মস্তিষ্কে আজব কাণ্ডকারখানা হয়, বিজ্ঞান


তুরজিন তানজিম : , আপডেট করা হয়েছে : 03-05-2023

মৃত্যুর পরেও মানুষের মস্তিষ্কে আজব কাণ্ডকারখানা হয়, বিজ্ঞান

মৃত্যুতেই সব শেষ নয়। এর পরেও এক অপার্থিব জগতের ব্যাখ্যা দেন অনেকে। মৃত্যুর পরবর্তী পর্যায় নিয়ে কৌতূহল সীমাহীন। নানারকম গবেষণা আছে একে ঘিরে। বিশিষ্ট জনেরা বিভিন্ন সময়ে মৃত্যু পরবর্তী অধ্যায় নিয়ে লেখালিখি করে গেছেন। আধ্যাত্মিক বিশ্বাসও আছে, প্রাচীন বিভিন্ন গ্রন্থে তার প্রমাণ মেলে। তবে সেসব পরের কথা। মৃত্যুপথযাত্রী যখন শেষ নিঃশ্বাস ফেলছেন অথবা কোমায় আছেন ব্যক্তি, ব্রেন ডেথ হয়ে গেছে এমন মানুষের মস্তিষ্কে কী চলে, সে নিয়েই যুগান্তকারী গবেষণা চলছে।

ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স বিজ্ঞান পত্রিকায় এই নিয়ে গবেষণাপত্র ছাপা হয়েছে। মিশিগান ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা এই নিয়ে গবেষণা করছেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ইইজি রেকর্ডিং খতিয়ে দেখে গবেষকরা জানতে পেরেছেন, মৃত্যুর সময় নানা ধরনের তরঙ্গে আলোড়িত হয় মস্তিষ্কে। ব্রেন ডেথ হয়ে গেলেও গামা রশ্মির আলোড়ন চলতে থাকে। মৃত্যুর ঠিক পর পরই ব্রেনের ভেতরে যে পরিবর্তনগুলো হয় তা ধরতে একটি বিশেষ রকম যন্ত্র ব্যবহার করেন তাঁরা, এর নাম ইলেকট্রো-এনসেফ্যালোগ্রাফি। আর আগের বহু গবেষণায় দেখা গেছে, মৃত্যুর পরে মানব মস্তিষ্কে স্নায়বিক তরঙ্গ প্রবাহিত হয়। এমন এক আলোড়ন তৈরি হয় যা ধরার জন্য ইলেকট্রো-এনসেফ্যালোগ্রাফি যন্ত্র কাজে লাগানো হয়।

মৃত্যুর ঠিক ৩০ সেকেন্ড আগে ও মৃত্যুর ৩০ সেকেন্ড পর এই সময়টা ধরেই মানব মস্তিষ্কে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা চমকে দেওয়ার মতোই। মৃত্যুতে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ করা হন্ধ করে দিলেও জেগে থাকে মস্তিষ্ক। বরং মস্তিষ্ক অতি সক্রিয় হয়ে ওঠে। ব্রেনের ভেতর দিয়ে যেন আলোর তরঙ্গ দৌড়তে শুরু করে। বিদ্যুতের মতো খেলে যায় আলোর ছটা। তরঙ্গে তরঙ্গে ধাক্কাধাক্কি লাগে। স্নায়ুর ক্রিয়াও সক্রিয় থাকে।

গবেষকদের বক্তব্য, মৃত্যুর পরেও কিছু ক্ষণ ওই রোগীর মস্তিষ্কে আলফা ও গামা তরঙ্গের মতো যে তরঙ্গগুলির প্রবল আন্দোলন রেকর্ডিংয়ে ধরা পড়েছে সেই তরঙ্গগুলি চেতনার দ্যোতক। সেই তরঙ্গগুলি মস্তিষ্কের স্মরণশক্তির কোষ (‘মেমরি সেল’)-গুলিরও সজীব সক্রিয় থাকার প্রমাণ। সেই তরঙ্গগুলিকে মৃত্যুর ৩০ সেকেন্ড পরেও রোগীর মস্তিষ্কে প্রবল ভাবে আন্দোলিত হতে দেখে গবেষকদের ধারণা, রোগীর জীবনের স্মৃতি সেই সময়ও জাগ্রত থাকে।

মৃত্যুর পরে মানব শরীরে কী হয় সে নিয়ে যত গবেষণা, লেখালিখি হয়েছে তার মধ্যে কয়েকটি মনে রাখার মতো। মনে পড়ে, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে-র কথা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রণক্ষেত্রে গুলি লেগে মৃত্যু হয় আর্নেস্টের। বেশ কিছুদিন ভুগেছিলেন তিনি। সেই সময় ডায়রি লিখতেন আর্নেস্ট। মৃত্যুর ঠিক আগে কিছু কথা ডায়রিতে লিখে গিয়েছিলেন তিনি। আর্নেস্ট তাঁর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে লিখেছিলেন, “আমি মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখেছি। মৃত্যু খুব সাধারণ একটা ব্যাপার। আমি অনুভব করেছি মৃত্যুকে। নিজের চোখে নিজের মৃত্যু দেখেছি।” নিজের শরীর থেকে আত্মাকে বেরিয়ে যেতে দেখেন অনেকে। মৃত্যুর পথ থেকে ফিরে এসে এমন অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন অনেকেই। ‘দ্য স্নো অব কিলিমাঞ্জারো’ ছোট গল্পে আর্নেস্টের অভিজ্ঞতার সেই কথা লেখা আছে।

হার্ট অ্যাটাকে হৃদযন্ত্র থেমে যাওয়ার পরেও বেঁচে ফিরেছেন অনেকে। তেমনই একজন বলেছিলেন, কিছুক্ষণের জন্য তিনি আলোর তরঙ্গ দেখতে পান। উজ্জ্বল আলোর বিন্দু ঘোরাফেরা করছিল তাঁর চারপাশে। মৃত্যুর মুখে থেকে ফিরে আসার পরেও সেই ক্ষণটুকুর স্মৃতি টাটকা থাকে অনেকেরই। কেউ দেখতে পান আলোর জ্যোতি, কেউ বলেন অন্ধকার সুড়ঙ্গে নিজেকে হাঁটতে দেখেছেন, সেই সুড়ঙ্গের শেষে ছিল উজ্জ্বল আলো। কেউ আবার নিজের মৃত আত্মীয়-পরিজনকে দেখতে পান, নিজের মৃতদেহও দেখতে পান অনেকে। কেউ দেখেন সারা জীবনের টুকরো টুকরো স্মৃতি। গবেষকরা বলছেন, অলৌকিক নয়, সবটাই বিজ্ঞান।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]