মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা মানছেন না জেলেরা। চলতি বছরে ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকতে জেলেদের ২৫ কেজি করে চাল দেখা হচ্ছে। বিকল্প কর্মসংস্থান নেই, কিন্তু ধারদেনা করে মেটাতে হচ্ছে সংসারের খরচ। তাই বাধ্য হয়েই গ্রেফতারের ঝুঁকি থাকলেও পদ্মা-মেঘনায় জাল ফেলছেন জেলেরা; ধরছেন মা ইলিশ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীতে জাল ফেলে মাছ শিকারে ব্যস্ত জেলেরা। ট্রলার নিয়ে অপেক্ষা জাল টানার। হঠাৎই যেন বাধ সাধলো নৌপুলিশ। তাদের টহল দলকে দেখতে পেয়েই দ্রুত সটকে পড়ার ব্যস্ততা। গ্রেফতার এড়াতে জাল ফেলে রেখেই জেলেরা ছুটছেন তীরে।
মা ইলিশ সংরক্ষণে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা- তাই ২ নভেম্বর পর্যন্ত নদীতে জাল ফেলতেও মানা। নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে নদী-সাগরসহ ইলিশের অভয়াশ্রমগুলোতে কোস্টগার্ড, নৌপুলিশসহ প্রশাসনের কড়া নজরদারি। তবুও আটকে রাখা যায়নি সব জেলেকে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অনেকেই জাল ফেলছেন নদ-নদীতে।
তাদেরই একজন শাহ আলম। পেয়েছেন সহায়তার ২৫ কেজি চাল। এ চালে সংসার চলে না। বেড়েছে ধারদেনাও; তারপরও তিনি ধারদেনা মাথায় নিয়ে ছুটছেন নদীতে। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা কেন মানছেন না?- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথাই জানান।
শুধু শাহ আলমই নন, ঝুঁকি নিয়ে নদীতে জাল ফেলা চাঁদপুরের প্রতিটি জেলেরই কথা এমন।
জেলেদের দাবি, সহায়তা হিসেবে দেয়া শুধু চাল দিয়ে পরিবার নিয়ে জীবনযাপন দুরূহ। একদিকে সংসার চালানোর চাপ সঙ্গে ধারদেনা । আয়ের পথ সীমিত হওয়ায় বাড়ছে অভাব অনটন। ২৫ কেজি চাল দিয়ে ২২ দিন সংসারের খরচ মেটানো যে অসম্ভব- তা বুঝতেও পারছেন সরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা।
তবে প্রান্তিক জেলেদের দুর্ভোগ কমাতে বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগসহ বিভিন্ন উদ্যোগের কথা জানান জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান।
তিনি বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় জেলেদের সচেতন করতে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অনন্ত ১৫টি সচেতনতামূলক সভা সমাবেশ করা হয়েছে। এতে উপস্থিত জেলেরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তারা নদীতে নামবেন না। কিন্তু তারপরও এক শ্রেণির জেলে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে মা ইলিশ নিধন করছেন। তবে এমন জেলেরা সরকারি তালিকাভুক্ত থাকলে তাদের জেলে নিবন্ধন কার্ড বাতিল করা হবে। এছাড়া প্রান্তিক পর্যায়ের যেসব জেলে ঋণগ্রস্ত তাদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক।
এদিকে, মা ইলিশ রক্ষায় নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে টহল ও কড়া নজরদারি অব্যাহত রাখার কথা জানিয়ে নৌপুলিশ সুপার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, মা ইলিশ সংরক্ষণে কঠোর অবস্থানে রয়েছে নৌপুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তাই এ সময় নদীতে যাকেই পাওয়া যাবে তাকেই আটক করা হবে।
চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনায় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন সরকারি তালিকায় এমন জেলের সংখ্যা ৫০ হাজার। আর তাদের পরিবারের সদস্য রয়েছেন আরও প্রায় দুই লাখ। এ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় পদ্মা ও মেঘনায় অভিযান চালিয়ে প্রায় শতাধিক জেলেকে আটক করা হয়েছে।
গত ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ২২ দিনের এই নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী ২ নভেম্বর পর্যন্ত। এরমধ্যে চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনাসহ দেশের উপকূলের ছয়টি অভয়াশ্রম রয়েছে। যেখানে প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ ডিম ছাড়তে বিচরণ করছে। তাই এ সময় ইলিশ ধরা, পরিবহন, মজুদ ও বিপণন নিষিদ্ধ করেছে সরকার।