বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি


আবহাওয়া ডেস্ক: , আপডেট করা হয়েছে : 17-11-2023

বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি

বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’। বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার সকালের মধ্যে সর্বশক্তি দিয়ে বাংলাদেশের উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে। ৮০ কিলোমিটার গতিবেগে সেটি বাংলাদেশের উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন আবহবিদরা।

গত মাসেই বাংলাদেশের উপর আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’। যদিও এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব বাংলায় সে ভাবে পড়েনি। বাংলাদেশেও খুব বেশি তাণ্ডব চালাতে পারেনি সেই ঝড়।

তার এক মাস পেরোতে না পেরোতেই আবার বাংলাদেশের শিয়রে ঘূর্ণিঝড়। উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের বুকে ‘জন্ম’ নিয়ে মিধিলি ‘রওনা’ দিয়েছে বাংলাদেশের উদ্দেশে।

বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হাওয়া অফিসের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘূর্ণিঝড়ের কোনও নাম ঘোষণা করা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী, সাগরে তৈরি কোনও ঘূর্ণাবর্ত, ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে তবেই আনুষ্ঠানিক ভাবে নাম ঘোষণা করা হয়। সেই মতো শুক্রবার ভোরে গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পরেই নামকরণ হয়েছে সেই ঝড়ের।

২০২০ সালে মৌসম ভবনের তালিকাভুক্ত ১৬৯টি ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে একটির নাম দেওয়া হয় মিধিলি। ঘূর্ণিঝড়ের নামের তালিকা তৈরির সিদ্ধান্ত ২০১৯ সালের এপ্রিলে আন্তর্জাতিক আবহাওয়া দফতর (ওয়ার্ল্ড মিটিওরোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট)-এ গৃহীত হয়েছিল।

ঘূর্ণিঝড় আমফানের পর থেকে আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগর অর্থাৎ, উত্তর ভারত মহাসাগরে তৈরি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের জন্য এই তালিকা প্রস্তুত করা হয়।

তালিকায় ১৩টি সদস্য দেশের প্রতিটি দেশ ১৩টি করে নাম যোগ করেছে। মোট ১৬৯টি নাম। ১৩টি ঘূর্ণিঝড়ের পরে যখন প্রথম তালিকা সম্পূর্ণ শেষ হবে, তখন দ্বিতীয় তালিকা থেকে নামকরণ শুরু হবে।

এর প্রথম তালিকা ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। সেই তালিকার প্রথমে ছিল ঘূর্ণিঝড় ‘নিসর্গ’-এর নাম। নাম দিয়েছিল বাংলাদেশ। প্রথম তালিকার শেষে ছিল ইয়েমেনের দেওয়া ‘মোকা’ ঘূর্ণিঝড়ের নাম।


দ্বিতীয় তালিকার প্রথমে নাম রয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’-এর। চার নম্বরে রয়েছে ‘মিধিলি’। এই তালিকা আবার শেষ হবে ইয়েমেনের দেওয়া ‘দিতওয়া’ ঘূর্ণিঝড় দিয়ে।

ভারত যে নামগুলি দিয়েছে সেগুলি হল— ‘গতি’, ‘তেজ’, ‘মুরাসু’, ‘আগ’, ‘ব্যোম’, ‘ঝড়’, ‘প্রবাহ’, ‘নীর’, ‘প্রভঞ্জন’, ‘ঘূর্ণি’, ‘অম্বুদ’, ‘জলধি’ এবং ‘ভেগা’।

প্রসঙ্গত, হাওয়া অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার রাত থেকে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর থেকে ২০ কিলোমিটার বেগে ক্রমশ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে সরে যায় গভীর নিম্নচাপ। ক্রমশ শক্তি বাড়িয়ে পরিণত হয় ঘূর্ণিঝড়ে। ঘণ্টায় ঘণ্টায় শক্তি বাড়িয়ে সেটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে সরে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর।


হাওয়া অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টার হিসাবে ‘মিধিলি’ বর্তমানে ওড়িশার পারাদ্বীপ থেকে ১৯০ কিমি পূর্বে, দিঘা থেকে ২০০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে ২২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে।

আবহবিদদের মতে, আগামী কয়েক ঘণ্টায় আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে ‘মিধিলি’। এর পর শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকালের মধ্যে ৮০ কিলোমিটার গতিবেগে সেটি বাংলাদেশের উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে।

মোংলা ও খেপুপাড়ার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করার কথা ‘মিধিলি’র। এর প্রভাবে শুক্রবার এবং শনিবার খেপুপাড়া এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়া হাওয়া বইতে পারে। হাওয়ার গতিবেগ বেড়ে ৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে।

গত ২৪-২৫ অক্টোবরের মধ্যবর্তী রাতে ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ মায়ানমার উপকূলে আছড়ে পড়েছিল। তার পর এই মরসুমে বঙ্গোপসাগরের বুকে দ্বিতীয় ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’।

এর আগেও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে একাধিক বার তছনছ হয়েছে বাংলাদেশের উপকূলবর্তী জেলাগুলির বিস্তীর্ণ এলাকা। তাই ‘মিধিলি’ ধেয়ে আসার খবর পাওয়ার পর থেকেই আশঙ্কায় খেপুপাড়া এবং তৎসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা।

তবে আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস বলছে, পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে ‘মিধিলি’র আছড়ে পড়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। পশ্চিমবঙ্গের দিকে ধেয়ে না এলেও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়বে রাজ্যে। দক্ষিণবঙ্গে বৃহস্পতিবারই হলুদ সতর্কতা জারি করেছিল হাওয়া অফিস। শুক্রবার আরও এক ধাপ এগিয়ে কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

হাওয়া অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার ভারী বৃষ্টি হতে পারে দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর এবং হাওড়ার কিছু কিছু এলাকায়। কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলা যেমন হুগলি, নদিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান এবং মুর্শিদাবাদে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে শনিবার পর্যন্ত। উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে থাকা মৎসজীবীদেরও সাগরে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]