ট্রেনের ‘২৫ ভাগ’ টিকিট নিমিষেই উধাও!


Rajshahir Somoy Desk , আপডেট করা হয়েছে : 20-01-2022

ট্রেনের ‘২৫ ভাগ’ টিকিট নিমিষেই উধাও!

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী টু ঢাকা ট্রেনের ২৫ শতাংশ আসনের টিকিট নিমিষেই উধাও হয়ে যাচ্ছে। ফলে যাত্রীরা অনলাইনে কিংবা দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট পাচ্ছেন না। যাত্রীরা প্রশ্ন তুলছেন, এই সব টিকিট যাচ্ছে কোথায়?

করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে ট্রেনে ৫০ শতাংশ আসনের টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। এই ৫০ শতাংশের মধ্যে ২৫ শতাংশ টিকিট অনলাইনে, বাকি ২৫ শতাংশ কাউন্টারে বিক্রি করা হচ্ছে। আসনের তুলনায় যাত্রীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় অনেকেই টিকিট না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। 

এমনই একজন ভুক্তভোগী মাসুদ রানা। গতকাল বুধবার (১৯ জানুয়ারি) সকালে তিনি ২২ জানুয়ারির ঢাকাগামী আন্তঃনগর ‘পদ্মা এক্সপ্রেস’ ট্রেনের টিকিট নিতে কাউন্টারের সামনে দাঁড়ান। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ওইসময় অনলাইনেও ছিলেন। তিনি বলেন, ‘সকাল ৯টায় অনলাইনে টিকিট ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সার্ভারের গতি কমে যায়। এক মিনিট যেতে না যেতেই অনলাইনে কোনো আসন ফাঁকা দেখাচ্ছিল না। একারণে কাউন্টারের সামনের লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। ২০-২৫ জনের পর যখন কাউন্টার পর্যন্ত পৌঁছাই, তখন সেখানেও টিকিট শেষ। কাউন্টার থেকে বলা হয়, শোভন চেয়ারের আসন শেষ। এভাবেই নিমিষেই শেষ হচ্ছে টিকিট। তবে একটি বেশি টাকা দিলেই কিছুক্ষণ পরই দালালের হাতে পাওয়া যাচ্ছে টিকিট।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, টিকিট কালোবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। অনলাইনে টিকিট বিক্রি শুরুর পরপরই আসন শেষ হওয়ায় যাত্রীরা মনে করছেন, কালোবাজারী চক্র টিকেট কেটে নিচ্ছে। কাউন্টারে টিকিট না পেয়ে ভুক্তভোগীরা রেলকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ করছেন। 

গত ১৭ জানুয়ারি রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে বিক্ষোভ করেছে একদল চাকরির পরীক্ষার্থী। ২১ জানুয়ারি ঢাকায় পরীক্ষায় অংশ নিতে যাওয়ার জন্য তারা লাইনে দাঁড়ান। সকালে টিকিট বিক্রি শুরুর কিছুক্ষণ পরই শেষ হয়ে যাওয়ায় তারা বুকিং সহকারীদের সঙ্গে বাগবিত-ায় জড়ান। বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য তাদের পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জিএমর (মহাব্যবস্থাপক) কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে টিকিট প্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ডেপুটি চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার।

এ সময় কয়েকজন টিকিট প্রত্যাশী জানান, কাউন্টার থেকে বলা হয়েছিল ১০টি আসনের টিকিট আছে। বুকিং সহকারী সাতটি বিক্রির হিসাব দিতে পেরেছেন। তখন বাকি তিনটি টিকিট নিয়ে প্রশ্ন তোলেন টিকিট প্রত্যাশীরা। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ শেষ পর্যন্ত ওই চাকরি প্রত্যাশীদের টিকিট দিতে পারেনি। এ নিয়ে তারা একটি লিখিত অভিযোগ দেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আনলাইনে টিকিট বিক্রির সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে কালোবাজারিরা। একাধিক চক্র সফটওয়্যারের মাধ্যমে টিকিট ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিয়ে অনলাইন থেকে টিকিট কেটে নিচ্ছে। রেলওয়ের সার্ভারে নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাইয়ের সুযোগ না থাকায় চক্রটি সব আসনের টিকিটই কিনে ফেলছে। ফলে সাধারণ যাত্রীরা টিকিট পাচ্ছেন না। কালোবাজারীদের ওই টিকিটই কাউন্টারের সামনে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। আগেও এমন চক্রের সদস্যরা কাউন্টারের সামনে থেকে র‌্যাব-পুলিশের হাতে ধরাও পড়েছে। 
বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) সরেজমিনে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে একাধিক ব্যক্তির কাছে ঢাকাগামী ট্রেনের আসনসহ টিকিট পাওয়া যায়। তবে প্রতিটির দাম ৫০০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি টিকিটের দাম ২৩৫ টাকা বেশি। 

এ বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ ভুঁঞা বলেন, ‘রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী চারটি ট্রেনের গড় আসন ৯০০। কিন্তু করোনার জন্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে অর্ধেক ৫০ শতাংশ আসনের বিপরীতে টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে। অর্থাৎ ৪৫০টি আসনের টিকিট বিক্রি করতে পারছি। তারও অর্ধেক অর্থাৎ ২৫ শতাংশ অনলাইনে বিক্রি করা হচ্ছে। অনলাইনে প্রতিটি ট্রেনের জন্য গড়ে ২২৫ টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে।’ 

এক মিনিটেই সব টিকিট শেষ হওয়ার বিষয়ে আহসান উল্লাহ বলেন, ‘‘মাত্র ২২৫টি আসন। চারদিক থেকে সবাই কিনতে চায়। এটা তো ‘হট কেকের মত’। তাই টিকিট ছাড়ার সময়ই দ্রুত শেষ হয়ে যায়। দেশজুড়ে অনেকগুলো কাউন্টারের মাধ্যমেও তো পাঁচ মিনিটের মধ্যেই বিক্রি হয়ে যায় ২২৫ আসনের টিকিট।’ তবে কালোবাজারির বিষয়টি তার জানা নেই বলেও তিনি দাবি করেন।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]