টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কৃষি প্রযুক্তি কেন্দ্র স্থাপন করবে সরকার। দেশের তিনটি বিভাগের চার জেলার চার উপজেলায় স্থাপিত হবে এই কৃষি প্রযুক্তি কেন্দ্রগুলো। সরকার তথা কৃষি মন্ত্রণালয় মনে করে, এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের কৃষি গবেষণায় সক্ষমতা বাড়বে। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জোসেফ ফিলিপ পিয়ের ইভেস এলিয়ট ট্রুডোর নামে নামকরণ করা হচ্ছে এই চারটি কৃষি প্রযুক্তি কেন্দ্রের।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, ‘বঙ্গবন্ধু-পিয়ের এলিয়ট ট্রুডো কৃষি প্রযুক্তি কেন্দ্র (বিপি-এটিসি) স্থাপন এবং বাংলাদেশের কৃষি গবেষণায় সক্ষমতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া ৪৫৪ কোটি ৮২ লাখ ৭৮ হাজার টাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে ঢাকা, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগের চার উপজেলায়। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে শুরু করে ২০২৮ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে লিড এজন্সির দায়িত্ব পালন করবে কৃষি মন্ত্রণালয়। কো-লিড এজেন্সি হিসেবে থাকবে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল এবং ৮টি স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার।
১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে ক’টি দেশ প্রথম দিকে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় তার মধ্যে কানাডা অন্যতম। কানাডার তখনকার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন পিয়ের ট্রুডো। তিনি দেশটির ১৫তম প্রধানমন্ত্রী। মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন দেওয়ার পাশাপাশি তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের পক্ষে দৃঢ়ভাবে কথা বলেন। পরবর্তীতে কমনওয়েলথ ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের বিষয়েও ট্রুডো দৃঢ় সমর্থন দিয়েছিলেন। এ জন্য তাকে বাংলাদেশ সরকার ২০১৬ সালে মরণোত্তর ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ প্রদান করে।
কানাডার প্রতি ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পিয়ের ট্রুডোর নামে এসব গবেষণা কেন্দ্রের নামকরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, প্রকল্পের আওতায় আন্তর্জাতিক মানের সুযোগ-সুবিধাযুক্ত কৃষি প্রযুক্তিকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হবে। একইভাবে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষিত জনবল দিয়ে গবেষণাকেন্দ্র কমপ্লেক্স, গবেষণাগার, গ্রোথ চেম্বার, টিস্যু কালচার ল্যাব, এনালাইটিক্যাল ল্যাব স্থাপন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ফসলের লক্ষ্যভিত্তিক জাত সুনির্দিষ্টভাবে ও কম সময়ে উদ্ভাবনের জন্য অত্যাধুনিক জিনোম এডিটিং প্রযুক্তি দেশের গবেষণায় সন্নিবেশ ঘটানো এবং প্রধান ফসলের স্পিড ব্রিডিং বা এক্সিলারেটেড ব্রিডিং গবেষণা ত্বরান্বিত করা হবে।
কানাডার কাছ থেকে উন্নত জার্মপ্লাজম সংগ্রহ বা বিনিময় করার মাধ্যমে (ধান, গম, ডাল জাতীয় এবং তেল জাতীয় ফসল) এবং জিনোমিক সম্পদের পুল সমৃদ্ধ করা হবে। খরা সহনশীলতা, পানি ব্যবহার দক্ষতা, পুষ্টির ব্যবহার দক্ষতা, সালোকসংশ্লেষ দক্ষতা, বীজ সেলেনিয়াম জমাকরণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে যাচাই-বাছাই পরিচালনা এবং ধান, গম ও মসুর ফসলের কার্যক্ষমতা এবং উৎপাদনশীলতার বৈশিষ্ট্যগুলোর জন্য মলিকুলার মার্কার এবং জিনগত বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করা হবে। একইসঙ্গে প্রকল্পের আওতায় পোস্ট ডক্টরেট ও পিএইচডি’র মাধ্যমে এনএআরএস-ভুক্ত প্রতিষ্ঠানের দক্ষ জনবল গড়ে তোলা হবে।
প্রকল্পটি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপিতে অননুমোদিত নতুন প্রকল্প হিসাবে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছে। এটি সরকারের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে আধুনিক কৃষি গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা এবং এর ফলে ফসলের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রকল্পটি অত্যন্ত সময়োপযোগী। কারণ, এটি খাদ্য নিরাপত্তায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এসব দিক বিবেচনায় প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে।