স্বামীকে জিম্মি করে গর্ভবতী স্ত্রীকে ধর্ষণ


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 28-02-2024

স্বামীকে জিম্মি করে গর্ভবতী স্ত্রীকে ধর্ষণ

পাবনার আমিনপুরে স্বামীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গর্ভবতী স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই নারীর গর্ভের সন্তানটি মারা যায়। 

বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঘটনার বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করেছেন আমিনপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ। এর আগে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে আমিনপুরের সাগরকান্দি ইউনিয়নের চর কেষ্টপুরে এ ঘটনা ঘটে। ৫ দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।

অভিযুক্তরা হলেন, চর কেষ্টপুরের মাজেদ প্রামাণিকের ছেলে সেলিম প্রামাণিক (২৩), একই এলাকার মো. শরীফ (২৪), আনিছ সরদারের ছেলে রাজীব সরদার (২১), তালেব মন্ডলের ছেলে রুহুল মন্ডল (২৬), শফিক সরদারের ছেলে লালন সরদার (২০) ও  মো. শামসুলের ছেলে সিরাজুল (২৩)।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে চর কেষ্টপুরের কাদেরিয়া তরিক্বাপন্থিদের একটি ওয়াজ মাহফিল আয়োজন করা হয়। মাহফিলের ডেকোরেশনের কাজ করেছিলেন ভুক্তভোগী নারীর স্বামী। সেখান থেকে ওয়াজ শুনে স্ত্রীসহ রাত ১২টার দিকে পাশের এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার পথে তাদের গতিরোধ করেন অভিযুক্ত ৬ যুবক। তাদের নানা প্রশ্ন করে। এক পর্যায়ে ওই নারীর স্বামীকে অস্ত্র ও ব্লেড দেখিয়ে জিম্মি করে তাকে ভুট্টা ক্ষেতে নিয়ে গিয়ে দুইজন পালাক্রমে ধর্ষণ করেন। এক পর্যায়ে ওই নারীর স্বামী তাদের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে স্থানীয়দের নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্তদের একজনকে আটক করে গণধোলাই দেন এবং বাকিরা পালিয়ে যান। এ সময় ধর্ষিত নারীকে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

স্থানীয় লিটন মন্ডল, রাজ্জাক মন্ডল, নিফাস মন্ডল ও শহিদ মন্ডল বলেন, ‘আমাদের ওয়াজ মাহফিল চলা অবস্থায় রাত ১টার দিকে ওই ছেলে ছুটে এসে বলল, কিছু ছেলে তাকে মারধর করে তার স্ত্রীকে ধরে নিয়ে গেছে। একথা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই স্থানীয়রা গিয়ে একজনকে হাতেনাতে ধরে গণধোলাই দেন। আর মেয়েটাকে উদ্ধার করে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক তোফাজ্জল হোসেন কাদেরীর কাছে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হাসপাতালে পাঠানো হয়।’

ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘আমরা আত্মীয় বাড়িতে যাওয়া পথে কয়েকজন যুবক আমাদের পথ আটকায়। আমাদের জিজ্ঞেস করে, তোরা স্বামী-স্ত্রী কিনা। আমরা নিজেদের স্বামী-স্ত্রী দাবি করলেও তারা কর্ণপাত করেনি। ফোনে আমাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বললেও ওরা শোনে না। এক পর্যায়ে আমার স্বামীকে ব্যাপক মারধর করে এবং অস্ত্র আর ব্লেডের মুখে তাকে জিম্মি করে আমাকে ভুট্টা ক্ষেতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। এসময় আমার স্বামী ছুটে গিয়ে লোকজন ডেকে আনলে একজনকে আটক করা হয় এবং বাকিরা পালিয়ে যায়।’

ভুক্তভোগীর নারীর স্বামী মামলার বাদী বলেন, ‘আমার স্ত্রী ৩ মাসের গর্ভবতী ছিল। ধর্ষণে আমাদের গর্ভের সন্তানটা পর্যন্ত মরে গেছে। মামলা হলেও আমাদের এখনো কোনো কাগজপত্র দেওয়া হয়নি। পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করছে না। থানায় গেলে নানান কথা বলেন। আর যারা ধর্ষণ করেছে তাদের পক্ষ থেকেও নানা হুমকি ও চাপ আসছে। বলছে এ ঘটনায় কিছুই হবে না, তোমাদেরই বিপদ হবে তাই মীমাংসা করো। আমরা ধর্ষণ এবং আমাদের সন্তান হত্যার বিচার চাই।’

স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক তোফাজ্জল হোসেন কাদেরী বলেন, ‘স্থানীয়রা ওই নারীকে উদ্ধার করে আমার কাছে নিয়ে এলে আমি প্রাথমিক চিকিৎসা দেই। পরে তাদেরকে বলি মেয়েটাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতাল বা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে।’

অভিযুক্তরা এখনো গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাগরকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহীন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘অভিযুক্তরা প্রকাশ্যে দিবালোকে ঘুরছেন কিন্তু পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করতে পারছে না। এটা নিয়ে প্রশাসনের তেমন তোড়জোড় আছে বলে তেমনটা মনে হচ্ছে না। আমরা এরকম একটা নেক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানাই।’

তবে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে দাবি করেছেন আমিনপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ। তার দাবি, ‘অভিযুক্তরা সবাই পলাতক আছেন। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে। গাফিলতার বিষয়টি মিথ্যা। আমরা চেষ্টা করছি। ধর্ষণের ঘটনা মিমাংসা হয় না, বাদীকে হুমকি-ধামকির বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে। তাদের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।’


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]