প্রতিবাদের প্রতীক যখন টিপ, বাংলাদেশের অনন্য উদ্যোগে শামিল জয়া, মিথিলা


তামান্না হাবিব নিশু , আপডেট করা হয়েছে : 14-03-2024

প্রতিবাদের প্রতীক যখন টিপ, বাংলাদেশের অনন্য উদ্যোগে শামিল জয়া, মিথিলা

কপালের কেন্দ্রে গোলাকার টিপ যেমন নারী সৌন্দর্যের প্রতীক হতে পারে, তেমনই কেন্দ্র থেকে তার সামান্যতম বিচ্যুতি তাঁর ভাল না থাকার ইঙ্গিতও দিতে পারে। হয়ে উঠতে পারে 'নির্যাতন'-এর প্রতীক। আর এই টিপকেই নির্যাতনের প্রতিবাদে হাতিয়ার করে নিয়েছেন বাংলাদেশের মহিলা সমাজের একাংশ।

কপালে লাল টিপটি যথাস্থান থেকে একটু সরেছে। সঙ্গে হ্যাশট্যাগ হিসেবে লেখা 'অড ডট সেল্‌ফি'। সাধারণ মহিলাদের সঙ্গে এই উদ্যোগে শামিল হয়েছেন জয়া আহসান, রাফিয়াত রশিদ মিথিলা ও নুসরত ইমরোজ তিশার মতো সে দেশের অভিনেত্রীরা। সময়ের সঙ্গে এই আন্দোলনে শামিল হয়েছেন সে দেশের একাধিক সমাজমাধ্যম প্রভাবী ও সাধারণ মহিলারা।

এই উদ্যোগে যে নিজস্বী সমাজমাধ্যমে পোস্ট করা হচ্ছে, তার সঙ্গে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লেখা হচ্ছে, ''বাংলাদেশে প্রতি তিন জনে এক জন নারী ঘরে-বাইরে নানা ভাবে নির্যাতনের শিকার। প্রতি বছর ক্রমেই নারী নির্যাতনের এই হার বেড়ে চলেছে। কিন্তু সেই অনুপাতে সবাই মিলে প্রতিবাদ হচ্ছে না। কারণ, আমাদের সমাজে নারীদের শেখানো হয় চুপচাপ নীরবে সহ্য করতে। কিন্তু এ ভাবে আর কত দিন?'' এই উদ্যোগের নেপথ্যে রয়েছে বাংলাদেশের 'মঙ্গলদীপ ফাউন্ডেশন'। সম্প্রতি নারী দিবসকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে এই উদ্যোগ।

শুধু বাংলাদেশ নয়, জয়ার মতে, ভারতীয় উপমহাদেশে নারীদের উপর খুব 'বড়' নির্যাতনের ঘটনা না ঘটলে প্রতিবাদের স্রোত তৈরি হয় না। তিনি বললেন, ''অন্যথায় যেন ধরে নেওয়া হয় যে, নির্যাতন গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। অনেক সময়ে সংবাদমাধ্যম নীরব থাকে। ফলে আমরাও ভুলে যাই।'' নির্যাতনের প্রতিবাদের ইচ্ছে থাকলেও সমাজের সব মহিলা তা করতে পারেন না বলেই মনে করেন জয়া। তাঁর কথায়, ''একটা সময় পরিবার ও নির্যাতিতার অসম্মানের ভয়ে শেখানো হত মুখ না খুলতে। কিন্তু এখন সেই দিন আর নেই।'' তবে নির্দিষ্ট কোনও দিন বা 'নারীবাদ' নিয়ে আলাদা করে জয়ার কোনও উত্‍সাহ নেই। বছরের প্রতিটা দিনই তিনি নারীদের জন্য উদ্‌যাপন করতে চান। তাঁর যুক্তি, ''যার জন্য ৮ মার্চ আমি আলাদা করে কিছু সমাজমাধ্যমে পোস্টও করি না।''

সম্প্রতি বাংলাদেশে হাতিদের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদে আদালতে একটি মামলা করেছিলেন জয়া। আদালত তাঁর আবেদনের পক্ষেই রায় দিয়েছে। তবে 'অড ডট সেল্‌ফি' প্রসঙ্গে জয়া বললেন, ''আমার মনে হয়েছে নারীদের ক্ষমতায়নের জন্যই এ রকম একটা উদ্যোগে অংশ নেওয়া যেতে পারে। তাঁদের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার একটা প্রকাশ মাত্র। তবে বিষয়টা নিয়ে আলাদা কোনও প্রচার আমি করতে চাই না।'' জয়ার আশা, আগামী দিনে এই উদ্যোগটি বাংলাদেশের সীমা অতিক্রম করে ভারত, পাকিস্তান-সহ পড়শি দেশেও ছড়িয়ে পড়বে।

নারীর পাশে দাঁড়াতে জয়া কিন্তু পুরুষদের ব্রাত্য করতে রাজি নন। তাঁর স্পষ্ট উত্তর, ''আমি কিন্তু কোনও ভাবেই পুরুষবিদ্বেষী নই। আমি দু'জনের সমানাধিকারে বিশ্বাসী।'' অভিনেত্রী মনে করেন, নারী-পুরুষ উভয়ই হাতে হাত মিলিয়ে এগোলে তবেই সমাজ সার্বিক ভাবে সুন্দর হয়ে উঠবে।

বিভিন্ন সমীক্ষা বলছে বাংলাদেশে প্রতি তিন জন মহিলার মধ্যে এক জন নির্যাতনের শিকার। নারী নির্যাতনের পরিসর শুধুই বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তেই রয়েছে বলে মনে করেন মিথিলা। তিনি বললেন, ''নির্যাতনের কোনও ঘটনা প্রকাশ্যে এলে কত জন তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন? প্রাথমিক ভাবে হলেও পরে আমরা ভুলে যাই। তার পর আরও একটা হিংসার খবর প্রকাশ্যে আসে। নির্যাতন অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত।'' একই সঙ্গে মিথিলা স্মরণ করিয়ে দিতে চাইলেন পুরুষদের উপর নির্যাতনের প্রসঙ্গ। তাঁর কথায়, ''কিন্তু সমীক্ষা বলছে পুরুষদের তুলনায় নারীদের উপর নির্যাতনের হার অনেক বেশি।''

নারীদের উপর নির্যাতন যে শুধুমাত্র 'গার্হস্থ্য হিংসা'র মধ্যে আটকে থাকে না, তা মনে করিয়ে দিতে চাইছেন মিথিলা। বললেন, ''রাস্তায় বা গণ পরিবহনেও তো নারীদের নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। তার থেকেও বড় কথা এখন সমাজমাধ্যমে তাদের উপর অসম্মানের হার ক্রমশ বাড়ছে।'' বিভিন্ন সময়ে সমাজমাধ্যমে কটাক্ষের শিকার হতে হয়েছে মিথিলাকে। এই প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ''বিষয়টা এখন আর শুধুই তারকাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। আমাদের চারপাশে অধিকাংশ মহিলাকেই এই ধরনের আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে। ''

বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে নারী নির্যাতনের খবরকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু মিথিলা মনে করেন, এই ধরনের খবরের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করা উচিত। ফলে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সর্বত্র সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। তাঁর কথায়, ''পাশাপাশি প্রশাসনকেও আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। নির্যাতিতা যেন চুপ না থেকে অভিযোগ জানাতে পারেন, সেটাও দেখতে হবে।'' মিথিলা নিজে এক জন সমাজকর্মী। ব্যক্তিগত স্তরেও বিভিন্ন সময়ে মিথিলা নারী ক্ষমতায়নের পক্ষে সমাজমাধ্যমে বার্তা দেন। বললেন, ''নারী এবং শিশুদের নিয়েই যে হেতু প্রতি দিন আমাকে কাজ করতে হয়, তাই সব সময়েই তাঁদের উন্নতি সাধনের চেষ্টা করি।''


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]