ফুলবাড়ীতে ঐতিহ্যবাহী চড়কসহ গ্রামীণ মেলা অনুষ্ঠিত


কংকনা রায়, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: , আপডেট করা হয়েছে : 08-04-2024

ফুলবাড়ীতে ঐতিহ্যবাহী চড়কসহ গ্রামীণ মেলা অনুষ্ঠিত

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা ও গ্রামীণ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের পলিপাড়া ডাঙ্গা কালী মন্দির প্রাঙ্গণে উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয়।

চড়ক পূজাসহ সেখানে বসেছিল দিনব্যাপী গ্রামীণ মেলা। হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ মেলাসহ চড়ক উৎসবটি দেখতে সেখানে বিভিন্ন বয়সী কয়েক হাজার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ভক্ত ও দর্শনার্থী সমবেত হন।

আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বপন সরকার। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. মুশফিকুর রহমান বাবুল, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মঞ্জু রায় চৌধুরী, দিনাজপুর জেলা শাখা পূজা উদযাপন পরিষদের অন্যতম সদস্য সহকারী অধ্যাপক অমর চাঁদ গুপ্ত, উপজেলা শাখার সদস্য সচিব ধীমান চন্দ্র সাহা, সদস্য প্রবীণ সাংবাদিক চন্দ্র নাথ গুপ্ত, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ব্রজেন্দ্র নাথ রায়, প্লাবন শুভ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি জয়রাম প্রসাদ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুস সালাম প্রমুখ।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাজার হাজার মানুষের অপলক চোখ ৩০ ফুট উচ্চতার কাঠের দণ্ডের দিকে। একজন মানুষ শুন্যে ঘুরছেন একটি দঁড়িতে ঝুলে। দঁড়িটি বাঁধা ওই মানুষটির পিঠের চামড়ায় গাঁথা বড় দুটি বড়শির সাথে। চলছে উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনি। বাজছে ঢাকঢোল। ঘুড়ানো হচ্ছে কাঠের দণ্ডটি। আর তাতেই ঝুলে চারিদিকে গোল চক্কর খেলেন অরবিন্দ চন্দ্র রায় (৪৭) নামের এক ব্যক্তি। তাঁর সঙ্গে থাকা ফুল-জল, আবির, কলা, বাতাসা, নকুলদানা ইত্যাদি ছিটিয়ে দেন অগণিত ভক্ত-দর্শকের দিকে। অরবিন্দ রায় দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌরএলাকার চাঁদপাড়া গ্রামের মতিলালের ছেলে।

আয়োজক সূত্রে জানা যায়, বড়শিতে বিদ্ধ মানুষকে ঘোরানোর আগে সারা দিন ধরে নানা আঁচার পালন করা হয়। মানুষ ঘূর্ণনের জন্য পোঁতা কাঠের দণ্ডটি মাঠের মাঝখানে বসানো। অনেকটা লাঙলের জোয়ালের মতো আরেকটি কাঠ এই কাঠের ওপর লম্বালম্বিভাবে বসানো। কাঠের মাথায় থাকে মাটি পর্যন্ত ঝোলানো কয়েকটি লম্বা দঁড়ি। কাঠের দণ্ডের ঠিক নিচে একদল মানুষ শক্ত হাত দিয়ে ঘোরান দঁড়িগুলো। এটাই চড়ক পূজার মূল আকর্ষণ।

চড়ক পূজার উৎসবে আসা শিখা রানী রায় ও শান্তনা রানী বলেন, এই চড়ক মেলা উপলক্ষে আমাদের পুরো গ্রাম উৎসবে মেতে ওঠে। সবাই মেয়ে-জামাইসহ আত্মীয় স্বজনদের আমন্ত্রণ জানায়। তারা আসেন। রাতে কালী পূজো হয়। দিনে মেলা হয়। মেলাসহ বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ মেলা শেষ পর্যন্ত আর হিন্দু সম্প্রদায়ের মেলা থাকে না। এটা হিন্দু-মুসলিমদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।

কুড়িগ্রাম থেকে আসা মিলন চন্দ্র বর্মণ বলেন, আমি বিরামপুর ব্র্যাকে চাকরি করি। চড়ক উৎসব হচ্ছে এ কথা শুনে আর থাকতে পারিনি। গতবারও এসেছিলাম এবারো সহকর্মীকে নিয়ে মেলা চড়ক দেখতে এসেছি। খুবই ভালো আয়োজন করা হয়েছে। মেলা বসেছে। খুবই আনন্দ করছি।

উৎসব আয়োজক পলিপাড়া ডাঙ্গা শ্রীশ্রী কালী মন্দিরের সভাপতি সোহেল চন্দ্র রায় বলেন, চৈত্র মাসের শেষে চড়ক কালী পূজোর আয়োজন করা হয়। এই পূজো ও চড়ক উৎসবকে কেন্দ্র করে দিনব্যাপী মেলা বসেছে। এতে কয়েকে হাজারো ভক্ত ও দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে। বড়শিতে ঝুলে থাকা অরবিন্দ চন্দ্র রায় বলেন, দীর্ঘ ১২ বছর থেকে দেশের বিভিন্নস্থানে এই কাজ করছেন তিনি। তাঁর পিঠে অগণিত ছিদ্র রয়েছে। প্রত্যেকবার পিঠের ভিন্ন ভিন্নস্থানে ছিদ্র করে বড়শির কল লাগানো হয়। এটি করতে বেশ সাধনার প্রয়োজন।

উপজেলা শাখা পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব ধিমান চন্দ্র সাহা বলেন, ব্যাপক আয়োজনের মধ্যদিয়ে সফলভাবে চড়ক উৎসবসহ গ্রামীণ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোনোপ্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য পূজা উদযাপন পরিষদের নির্দেশনা মোতাবেক স্বেচ্ছাসেবীসহ গ্রাম পুলিশ সার্বিক দায়িত্ব পালন করেছে।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]