ফুলবাড়ীতে ২০১ বছরেরও পুরোনো ঐতিহ্যবাহী বুড়া চিন্তামন ঘোড়া মেলা


কংকনা রায়, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : , আপডেট করা হয়েছে : 26-04-2024

ফুলবাড়ীতে ২০১ বছরেরও পুরোনো ঐতিহ্যবাহী বুড়া চিন্তামন ঘোড়া মেলা

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর ২০১ বছরেরও পুরোনো ঐতিহ্যবাহী বুড়া চিন্তামন ঘোড়ার মেলার উদ্বোধন করা হয়েছে।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় মেলার উদ্বোধন করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান বাবুল। মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মেলা কমিটির সভাপতি সৈয়দ আবুল হাসান আজাদ। 

এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান মিজান, সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল আলম ডাবলু ও প্রধান শিক্ষক শ্যামল চন্দ্র উপস্থিত ছিলেন।

মেলাকে কেন্দ্র করে উপজেলার ২নং আলাদিপুর ইউনিয়নের মেলাবাড়ী এলাকায় বসেছে প্রামীণ এই ঘোড়ার মেলা। নাগর দোলা, গ্রামীণ বিভিন্ন খাবার দোকান ও খেলাধুলার আয়োজনসহ ঘোড়দৌঁড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে। ফলে মেলায় বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের ব্যাপক সমাগম ঘটেছে।

দিনাজপুর ফুবাড়ীতে শুরম্ন হয়েছে ২০১ বছরের ঐতিহ্যবাহী 'বুড়া চিন্তামন' ঘোড়ার মেলা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত তিন'শতাধিক ঘোড়া নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা।

দুমকী, সিডর, দুর্বার, বিজলি, কিরণমালা, রানী, সুইটিসহ বাহারি সব নাম ঘোড়ার। ক্ষিপ্রতা আর বুদ্ধিমত্তায়ও মেলে নামের সার্থকতা। এমন নানামুখী গুণের কারণে দেশি-বিদেশি ঘোড়াগুলোর কদরও যথেষ্ট। পছন্দের ঘোড়া কিনতে চলে দরকষাকষি। ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শনার্থীর পদচারণায় এভাবেই মুখর হয়ে উঠেছে ফুলবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী বুড়া চিন্তামন ঘোড়ার মেলা। দরদাম ঠিক করার পর পাশের খেলার মাঠে ক্রেতাকে দেখানো হয় ঘোড়ার দৌঁড়।

তীব্র গরমের মধ্যেও জমে উঠেছে বুড়া চিন্তামনের ঘোড়ার মেলা। পক্ষকাল ব্যাপী এ মেলাকে ঘিরে এলাকাবাসীর আনন্দের কমতি নেই। আলাদীপুর ইউনিয়নের মেলাবাড়ী এলাকায় দীর্ঘ ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বসে আসছে এ মেলা।

প্রতিবছর বৈশাখ মাসের ৯ অথবা ১০ তারিখে শুরু হয় মাসব্যাপী এ আয়োজন। ১৩ বৈশাখ থেকে কেনাবেচার ছাপা (রশিদ) কাটা হয়। মূল আয়োজন এক মাসের হলেও পশুর মেলা হয় ১০ দিন। ঘোড়া ছাড়াও মহিষ, গরম্ন, ভেড়া ও ছাগল বেচাকেনা হয়।

আয়োজকরা বলছেন, দেশের অন্যতম ঘোড়া বেচাকেনার মেলা এটি। এ জন্য আট একর জমি নির্ধারিত আছে। এখানে মাদ্রাসা ও স্কুলের প্রশস্ত মাঠে হাট বসে। তহশিল অফিস, ডাকঘর, সমবায় অফিস, ক্লিনিক, খেলার মাঠ ও ইউপি অফিসের কারণে জায়গাটি গুরুত্বপূর্ণ।

৭৫ বছর বয়সী শিক্ষক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান দছিম উদ্দীন মন্ডল বলেন, মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঘোড়া নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। মেলার শুরু এবং শেষ হওয়ার তারিখ দেশব্যাপী ঘোড়া ক্রেতা-বিক্রেতাদের মুখস্ত রয়েছে।

নওগাঁর ধামইরহাট থেকে এসেছেন গোলাম মোস্তফা (৫০)। তার কাছে রয়েছে সবচেয়ে বেশি দামের ঘোড়া। 'সম্রাট' নামে ১২ বছর বয়সী লাল ঘোড়াটির দাম হাঁকছেন তিন লাখ টাকা। তিনি বলছিলেন, দুই লাখ পর্যন্ত দাম উঠেছে। এটি রেসের ঘোড়া, দ্রুত দৌঁড়াতে পারে। নিজেই এটির যত্ন নেন। তিনি ৪০ বছর ধরে এ মেলায় আসেন।

নওগাঁর সাপাহার থেকে বারেক মোস্তাকিম মিয়া ১২টি ঘোড়া নিয়ে এসেছেন। গাইবান্ধা থেকে আসা সোহাগ ও ছমেজ উদ্দীন জানান, তারা ২৫ বছর ধরে মেলায় আসেন।

সওয়ারি আলম, সামছুল, রংপুর থেকে আসা রফিকুল ইসলামসহ ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, তাদের পূর্বপুরুষে এ মেলায় ঘোড়া কেনাবেচা করতেন। সেই সূত্রে তারাও পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুস সাকিব বাবলু বলেন, প্রশাসনের পাশাপাশি মেলা কমিটিও সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। অতি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী মেলা উত্তরবঙ্গের কোথাও নেই।

মেলা কমিটির সভাপতি সৈয়দ আবুল হাসান আজাদ বলেন, স্বাধীনতার পরও নেপাল, ভুটান, ভারত, পাকিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্য থেকে মেলায় ঘোড়া এসেছে। এখন বিদেশ থেকে ঘোড়া না আসলেও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মেলায় ঘোড়া আনেন মালিকরা।

থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোস্তাফিজার রহমান বলেন, মেলার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্যরা কাজ করছেন।

ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মাদ জাফর আরিফ চৌধুরী বলেন, ঐতিহ্যবাহী বুড়া চিন্তামন ঘোড়ার মেলার মালিক হচ্ছেন জেলা প্রশাসক।শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) থেকে মেলায় ঘোড়া বেচাবিক্রির জন্য ছাপা (রশিদ) বের করা হয়েছে।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]