সক্রিয় অনলাইন জুয়াড়ি সিন্ডিকেট, সর্বশান্ত হচ্ছে যুবকরা


পুঠিয়া (রাজশাহী) প্রতিনিধি: , আপডেট করা হয়েছে : 14-04-2022

সক্রিয় অনলাইন জুয়াড়ি সিন্ডিকেট, সর্বশান্ত হচ্ছে যুবকরা

আইপিএল ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে রাজশাহী মহানগরের সব শীর্ষ বাজিগাররা। আর অনলাইনে জুয়া খেলে কেউ রাতারাতি কোটিপতি হচ্ছে আর কেউ বা সব কিছু হেরে সর্বশান্ত হয়ে যাচ্ছে। শুধু ক্রিকেট নয়, ক্যসিনো, ফুটবলসহ বিভিন্ন বেট সাইডে অনলাইনে জুয়া খেলার কারণে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে।

দেশে সাইবার ক্রাইম অপরাধের মধ্যে অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে অনলাইনে জুয়া খেলে ও অর্থ পাচার। মাঝে মধ্যে দুই একটা জুয়াড়ি গ্রেপ্তার হলেও শীর্ষ জুয়াড়ি যারা রাতা-রাতি এসব জুয়া খেলে কোটিপতি হয়েছে তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে। ক্রিকেট জুয়াড়িদের কাছে জনপ্রিয় বেশকিছু সাইট বন্ধ করে দেওয়া হলেও রাজশাহীতে বেট-৩৬৫ এ চলছে জমজমাট জুয়া।

অনুসন্ধানে জানান গেছে, সম্প্রতি নিজেদের একাউন্টের মাধ্যমে ডলার দিয়ে এসব জুয়া খেলার প্রবণতা বেড়েছে। এই চক্রের সঙ্গে রয়েছে কিছু ব্যাংকার ও এজেন্ট। যাদের মাধ্যমে ডলার দিয়ে জুয়ায় জড়িয়ে পড়ছে সব বয়সী মানুষ। গুগলে ‘টপ টেন বেটিং সাইট ইন বাংলাদেশ’ লিখে সার্চ দিলে ‘জালাগাম ডটনেট/এজেড’ ঠিকানায় পাওয়া প্রায় সবগুলো সাইটই।

এছাড়া বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া বেশকিছু বেটিং সাইটও চালু অবস্থায় পাওয়া যায়। বাংলাদেশ থেকে এখনও এসব সাইটে জুয়ার আসর বসছে। মোট ৮টি সাইটের মধ্যে রাজশাহীতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বেট-৩৬৫। এই সাইটের মাধ্যমেইে ধরা হচ্ছে বাজি। এমনকি খেলা হচ্ছে বিভিন্ন ম্যাচের নানা দিক নিয়েও।

জানা গেছে, রাজশাহী সিটি ও জেলার কিছু শীর্ষ জুয়াড়িদের নাম উঠে এসেছে অনুুসন্ধান প্রতিবেদনে। এসব জুয়াড়িরা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘদিন যাবত অনলাইনে জুয়া খেলার জন্য গড়ে তুলেছে বিশাল সিন্ডিকেট। সাম্প্রতিক আইপিএল ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে সক্রিয় এসব অনলাইন জুয়াড়িরা।

অনলাইনে ডলারের মাধ্যমে বাজি ধরে দেশের কোটি কোটি টাকা বিদেশ পাচার করছে এই চক্রটি। জুয়া খেলার জন্য সাম্প্রতিক রাজশাহীর ফাইসাল নামের এক ব্যাংকার ব্যাংকের ভোল্ট থেকে তিন কোটি টাকা সরিয়ে গ্রেপ্তার হয়ে জেল হাজতে রয়েছে। অনলাইন জুয়া খেলা মাদকাসক্তের মতো নেশা । ফলে তারা অর্থ সংগ্রহে জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধে।

রাজশাহীর নগরীর শীর্ষ অনলাইন বাজিগারের মধ্য প্রশাসনের তালিকায় নাম এসেছে নগরীর শাহমুখদুম এলাকার পিন্টু, আলুপোট্রি এলাকার অসোক, মোল্লাপাড়ার সরিফুল ইসলাম জ্যক, লক্ষিপুর এলাকার পায়েল, নগরীর বসুয়া উত্তরপাড়ার হাফেজ মোল্লার ছেলে রুবেল হোসেন (৩৩), রাজপাড়া থানার শ্রীরামপুরের বাসিন্দা টুটুল শেখের ছেলে বিশাল (১৭), চন্ডিপুর এলাকার রাজুর ছেলে বুলবুল (৩০), একই এলাকার আলী পান্নার ছেলে তুষার আহম্মেদ (৩১) ভাটাপাড়া এলাকার মাইনুল ইসলামের ছেলে মিলন (৩০), কয়েরদাড়া বিলপাড়া এলাকার নাজিম শেখের ছেলে স্বজল (২৫), ধরমপুর এলাকার মো. আলতাব হোসেনের ছেলে মো. আনোয়ার পারভেজ (২৬) ও কাশিয়াডাঙ্গা নিবাসী জাহানের ছেলে ফরিদুল ইসলাম হামিম (২০)।

এরা বেশ কিছু দিন আগে একবার আরএমপি পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার হয়েছিলো। পরে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয় পুলিশ। তবে বর্তমানে তারা আইপিএল ক্রিকেট নিয়ে জুয়া খেলা চালিয়ে যাচ্ছে। কেউ বাড়িতে, কেউ চেম্বারে, কেউ দোকানে বসে অনলাইনে জুয়া খেলা পরিচালনা করছে।

অপরদিকে, রাজশাহী জেলার বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়ে চলছে আইপিএল ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে অনলাইনে জুয়া। জেলা পর্যায়ে শীর্ষ জুয়াড়িদের মধ্যে রয়েছেন গোদাগাড়ী উপজেলার বিদিরপুর এলাকার মাইনুল কশাইয়ের ছেলে হামিম, দেউপাড়া বিয়ানাবুনা গ্রামের শরিফ।

এদিকে, রাজ্জাক নামের এক জুয়াড়ির কাঁকনহাট বাজারের মুদির দোকান রয়েছে। সেই দোকানের আড়ালে তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন জুয়ার আসর। উজ্জলের কাছে থেকে বিভিন্ন বাজির সাইট নিয়ে এলাকার যুবকদের কাছে ছড়িয়ে দেয়া তার কাজ। এতে তিনি হঠাৎ করে লাখ লাখ টাকার মালিক বনে গেছেন। তার কাছে জুয়া খেলে সর্বশান্ত হয়েছে এলাকার প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন যুবক।

অপরদিকে, দূর্গাপুর উপজেলার শীর্ষ জুয়াড়িদের তালিকায় রয়েছে নাহিদ। সে দূর্গাপুর থেকে এসে রাজশাহী নগরীতে জুয়ার লাখ লাখ টাকা কালেকশন করে প্রতিদিন। এসব টাকা কালেকশন করে আবার ফিরে যায় দূর্গাপুরে।

তবে জুয়াড়িদের দেয়া তথ্যমতে, এই সাইট ছাড়াও আরও একাধিক সাইটের মাধ্যমেও জুয়া খেলা হচ্ছে। রাজশাহীর বিপুল সংখ্যক জুয়াড়ি এখন ব্যস্ত এ নিয়ে। আইপিএল খেলাকে কেন্দ্র করে জমজমাট জুয়ায় মেতেছিলেন অনেকেই। ‘বাজিকর’দের বেশির ভাগই শিক্ষিত শ্রেণির। অনলাইনে বাজি ধরা হচ্ছে ডলারে এবং এজন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ক্রেডিট কার্ড। প্রথমে এসব সাইটে জুয়াড়িরা অনলাইনে নিবন্ধন করছে।

আর জুয়ায় অংশ নিতে অর্থ পরিশোধ করা হয় ক্রেডিট কার্ডে। যাদের ক্রেডিট কার্ড নেই অথবা যেসব সাইটে বাংলাদেশ থেকে নিবন্ধন করা যায় না সেখানেও আছে বিকল্প ব্যবস্থা। দেশে এসব জুয়ার সাইট নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ‘এজেন্ট’। তারাই অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া এবং অর্থ পরিশোধের কাজটি করে দেয়। টাকার বিনিময়ে তারা ডলার কিনে নেয় জুয়াড়িদের কাছ থেকে।

অনলাইন বেটিংয়ে জড়িত ছিলেন এমন একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রাজশাহীতে বেট ৩৬৫ নামক আন্তর্জাতিক সাইটটিতে সবচেয়ে বেশি বেটিং করা হয়। সাইটটিতে বেটিংয়ে অর্থের ক্ষেত্রে দুটি মুদ্রা ব্যবহৃত হয় ইউএসডি (মার্কিন ডলার) ও ইউরো। অ্যাকাউন্ট ভেরিফায়েড হওয়ার পর এবং নিজের অ্যাকাউন্টে অর্থ জমা করার পর বাজি ধরা যায়। যেকোনো খেলার লাইভ স্ট্রিমিং চলাকালে বাজি ধরা যায়।


ক্রিকেটের ক্ষেত্রে ম্যাচ, বল, ওভার, খেলোয়াড় ভিত্তিক বিট করা যায়। কোন দল জিতবে, কে কত রান করবে, কোন ওভারে কত রান হবে বাজিগুলো সাধারণত এমন হয়ে থাকে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্যাসিনো বা পোকারের লাইভ স্ট্রিমিংয়ের সময়েও বাজি ধরা যায়।

এ বিষয় নগরীর শীর্ষ জুয়াড়ি আলুপট্রি এলাকার অসোক বলেন, আগে খেলতাম বেট-৩৬৫ তে। তিনি বলেন, বেট-৩৬৫ দিয়ে তিনি বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে ডলার তুলে নেয় অ্যাকাউন্টে। এরপর ক্রিকেট, ক্লাবের ফুটবলে বাজিধরি ডলারে। আর জিতলে আবারও সেই ডলার এজেন্টের মাধ্যমেই বিক্রি করে দেই।

তিনি আরো বলেন, এখন খেলি না। একসময় খেলে বহু টাকা হেরে গেছি। মানুষ বাজির টাকা পাবে অনেকে। এছাড়া অন্যান বাজিগারদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বাজিখেলার কথা স্বীকার করে জানান, এক সময় খেলেছি। তবে বর্তমানে খেলি না।

এ বিষয় আরএমপি সাইবার ক্রাইম ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএসপি উৎপল চৌধুরী বলেন, তালিকা করা হচ্ছে নগরীতে যারা অনলাইনে জুয়া খেলার সাথে জড়িতোদের। আইপিএল ক্রিকেট খেলার সময় এসব জুয়াড়িরা সক্রিয় হয়ে উঠে। দ্রুত এসব জুয়াড়িদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান চলবে বলে জানান তিনি। 

রাজশাহীর সময় / এম আর


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]