তীব্র শ্রমিক সংকটের কবলে রাজশাহী অঞ্চলের বোরো চাষীরা


মঈন উদ্দীন , আপডেট করা হয়েছে : 11-05-2022

তীব্র শ্রমিক সংকটের কবলে রাজশাহী অঞ্চলের বোরো চাষীরা

রাজশাহী অঞ্চলের অধিকাংশ বোরো ধান পেকে যাওয়ায় বৈশাখের মাঝামাঝি সময় থেকে বরেন্দ্র অঞ্চল ও চলনবিল এলাকায় বোর ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টির বাগড়া ও শ্রমিক সংকটের কারণে ঘরে ধান তুলতে পারছে না অনেক চাষী। তাদের জমির ধান পানিতে পচে গাছও বের হচ্ছে। এরমধ্যে আবারও ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র প্রভাবে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে নতুন সংকটের মুখে পড়েছেন এ অঞ্চলের চাষীরা। পুরো বরেন্দ্র অঞ্চলে ঘরে ধান তোলা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার প্রায় ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩১ একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছিলো। এখন পর্যন্ত গড়ে প্রায় ২৬ থেকে ৩০ শতাংশ ধান ঘরে তুলতে পেরেছে চাষীরা। আর এখন পর্যন্ত যে ধান কৃষকরা ঘরে তুলেছেন সেখানে গড় ফলন এসেছে প্রায় সাড়ে ২০ মণ করে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গড় ফলন ২০ মণের নিচে নামার শঙ্কা প্রকাশ করছেন চাষী ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর।

চাষীরা বলছেন, কয়েকদিনের ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টিতে এ অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি ক্ষেতের কাঁঁচা-পাকা ধান নুয়ে পড়েছে। অনেক ক্ষেতে পানি জমে যাওয়ার কারণে জমিতেই ধান পচে নতুন গাছ জন্ম নিচ্ছে। লোকসানের মুখে বাড়তি খরচেও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। একমাত্র অবলম্বন কষ্টের ধান ঘরে তুলতে না পেরে বিপাকে তারা। পাঁকা ধান গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে চাষীর। রাজশাহী জেলায় ৬৬ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো। তবে শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম জমিতে আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে প্রাকৃতিক দূর্যোগের সম্মুখিন হয়ে ফলনহানির সঙ্গে নতুন সংকট তৈরি হচ্ছে।

রাজশাহীতে শ্রমিক সংকটের কারণে অনেক চাষী নিজেই বাধ্য হয়ে ধান কাটছেন। এমনি একজন বাগমারার শাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাগমারার নাককাটি, সোনাবিল, বিলসেতি, হাগড়াকান্দি, জুকার বিলসহ কয়েকটি বিলে বোরো ধানের আবাদ হয়। ধান কাটার সময় হলেই এখন শ্রমিকের সংকট দেখা দিচ্ছে। প্রতি বছর এই সংকট প্রকট হচ্ছে। আগের চেয়ে দ্বিগুন ধান চাচ্ছে শ্রমিকরা। বিঘাপ্রতি চার-পাঁচ মণ ধান যদি শ্রমিকদের কাটতেই দিতে হয় তবে নিজে কিভাবে চলবো। তাই নিজেই ধান কাটতে নেমেছি। একা মানুষ কষ্টও হচ্ছে। কিন্তু কিছু করার নাই।

নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শামসুল ওয়াদুদ বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৮৭ হাজার হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৭০ শতাংশ ধান পাকলেও ধান কাটা হয়েছে ২৫ শতাংশ। আমরা কৃষকদের দ্রুত মাঠের ধান কেটে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছি।কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষকেরা ধান কাটতে পারছেন না এমন কথা শোনা যাচ্ছে। বাইরের জেলার শ্রমিক কম আসায় শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। অপরদিকে সকল কৃষক এক সঙ্গে ধান কাটা শুরু করায় এই শ্রমিক সংকট সৃষ্টির একটি অন্যতম কারণ।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, রাজশাহীতেও বোরো ধান কাটার সময় শ্রমিক সংকট আছে। কিছু ধান কাটতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। তবে তা পর্যপ্ত না। নগরীতে অনেক উন্নয়ন কাজ হচ্ছে। সেখানে শ্রমিকরা কাজ করছে। এই সময়টায় যদি এই উন্নয়ন কাজ রাতে করা হয় বা কিছুদিনের জন্য যদি বন্ধ রাখা যায় তবে ধান কাটতে শ্রমিকের সংকট থাকবে না।

এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ খয়ের উদ্দিন মোল্লা জানান, এ অঞ্চলে শ্রমিক সংকট কিছুটা আছে। তবে কম্বাইন হার্ভেস্টারের মাধ্যমে অনেক জমির ধান কাটা হচ্ছে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন সংকট থাকেই। আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে জেলা অফিসাররা কাজ করছে।

রাজশাহীর সময়/এএইচ

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]