দুদুকের চার্জশীটভুক্ত আসামি আরডিএ’র কর্মকর্তা কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির আরেকটি মামলা


মঈন উদ্দীন , আপডেট করা হয়েছে : 02-06-2022

দুদুকের চার্জশীটভুক্ত আসামি আরডিএ’র কর্মকর্তা কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির আরেকটি মামলা

জ্ঞাত আয়বহির্ভৃত বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) সহকারী প্রকৌশলী শেখ কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের রাজশাহী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন বাদী হয়ে বুধবার দুপুরে দুর্নীতি দমন আইনের ২০০৪ সালের ২৬ (২) ও ২৭ (১) এবং ২০১২ সালের মানিলন্ডারিং আইনের ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলার পর পরই দুদক থেকে রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়েছে পরবর্তী আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তাও হয়েছেন সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন।

এদিকে, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) সহকারী প্রকৌশলী। ২০০৪ সালে শেখ কামরুজ্জামানের  অবৈধভাবে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি লাভ করেন। চাকরির লিখিত পরীক্ষায় তিনি অকৃতকার্য হলে সেই পরীক্ষা বাতিল করা হয়। পরে শুধুমাত্র মৌখিক পরীক্ষায় কৃতকার্য দেখিয়ে তাকে নিয়োগ প্রদান করা হয়। অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ১৭ বছর পার করছেন তিনি। আর দুর্নীতি মামলায় তার বিরুদ্ধে প্রায় ৪ বছর আগে চার্জশীট হলেও কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, আরডিএর উর্ধ্বতন কতিপয় কর্মকর্তার সাথে পরষ্পর যোগসাজসের মাধ্যমে এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন বহুল আলোচিত সহকারী প্রকৌশলী শেখ কামরুজ্জামান। এনিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আরডিএ’তে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। নথিপত্র পর্যালোচনা করে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রাপ্ত তথ্যানযায়ী, ২০০৪ সালের ১৬ আগস্ট ১০টি পদের বিপরীতে ১১ জন জনবল নিয়োগে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে শেখ কামরুজ্জামান সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) পদে আবেদন করেন। কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় তিনি অকৃতকার্য হন। লিখিত পরীক্ষায় পূর্ণমান ছিল ১০০। আর নূন্যতম পাস নম্বর ছিল ৩৩। এরমধ্যে শেখ কামরুজ্জামান লিখিত পরীক্ষায় ২৪ নম্বর পেলে তিনি অকৃতকার্য হন। পরে লিখিত পরীক্ষা বাতিল করে অবৈধভাবে মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হয় কামরুজ্জামানকে। মৌখিক পরীক্ষায় কামরুজ্জামানকে সর্বোচ্চ ৬৬ নম্বর দিয়ে কৃতকার্য দেখানো হয়। এরপর সহকারী প্রকৌশলী পদে তিনি চাকরিতে যোগ দেন। যা বিধিবহির্ভূত।

এদিকে দুদুকের মামলাসূত্রে জানা গেছে, আরডিএর সহকারী প্রকৌশলী শেখ কামরুজ্জামানের বিপুল অবৈধ সম্পদের অভিযোগ হলে ২০১৭ সালে দুদক প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু করেন। শেখ কামরুজ্জামানকে তার সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ হয়। একাধিকবার তাকে দুদক কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। শেষে তিনি তার সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। দুদক থেকে তার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীর সত্যতা নিরূপণে গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া ও বর্তমান নিবাস রাজশাহীতে মাঠে পর্যায়ে ব্যাপক অনুসন্ধান পরিচালনা করা হয়।

দুদক সূত্রমতে, শেখ কামরুজ্জামান আয়ের সঙ্গে অর্জিত সম্পদের ব্যাপক অসামঞ্জস্য পাওয়া যায়। এতে দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে সম্প্রতি দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে শেখ কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত  ও অনুমোদন প্রদান করা হয়। সে মোতাবেক বুধবার দুদক শেখ কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন।

দুদক সূত্রে আরও জানা যায়, দুদকের নোটিশ প্রাপ্তির পর শেখ কামরুজ্জামান তার অবৈধ সম্পদ ও সম্পত্তি গোপন করার লক্ষ্যে তড়িঘড়ি করে মালিকানা স্থানান্তর করেন। সম্পদের প্রকৃতি বদল করেন। একই সঙ্গে উৎস গোপন করার বিভিন্ন চেষ্টা করেন।

দুদক আরও জানায়, শেখ কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে আরডিএতে ঘুস দিয়ে নিয়োগ লাভ ও চাকরি প্রাপ্তির অভিযোগে আরও একটি দুর্নীতির মামলা রাজশাহীর স্পেশাল জজ আদালতে চলমান আছে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রদান করে দুদক। এই মামলায় সে উচ্চ আদালতে জামিনে থাকার কথা দাবি করেছেন। যদিও উচ্চ আদালতের আদেশের কোনো কপি গত দুই বছরেও তিনি আদালতে দেখাতে পারেননি বলে সংশ্লিষ্ট আদালতের স্পেশাল পিপি সূত্রে জানা গেছে।  

এদিকে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, শেখ কামরুজ্জামান সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে আরডিএতে যোগদান করলেও পরবর্তীতে তিনি এষ্টেট অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ে দোকান ও প্লট বরাদ্দে ব্যাপক দুর্নীতি করেন। এভাবেই সে বিপুল অবৈধ সম্পদের মালিক হন।

রাজশাহীর সময়/এএইচ


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]