ফের তীব্র হচ্ছে ডলার সংকট, ব্যাংকগুলো ডলার কিনছে ৯৯ টাকা করে


অনলাইন ডেস্ক : , আপডেট করা হয়েছে : 24-06-2022

ফের তীব্র হচ্ছে ডলার সংকট, ব্যাংকগুলো ডলার কিনছে ৯৯ টাকা করে

বুধবার হাউজগুলো ৯৭-৯৭.৫০ টাকা রেটে ডলার বিক্রি করেছিল। সে হিসাবে একদিনেই ডলারের দাম বেড়েছে ১ থেকে ১.৫০ টাকা।

বাজারে আবার ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে। মূলত কয়েকমাস আগে খোলা এলসিগুলো সেটেলমেন্টের চাপ আসায় ব্যাংকগুলো ডলারের স্বল্পতায় ভুগছে। ফলে এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো থেকে ডলার কেনার জন্য প্রতিযোগিতা বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যাংকগুলো। চাহিদা বেশি থাকায় এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোও ডলারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। বৃহষ্পতিবার (২৩ জুন) এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো থেকে ৯৮.৫০ থেকে ৯৯ টাকা রেটে ডলার কিনেছে ব্যাংকগুলো।

বুধবার হাউজগুলো ৯৭-৯৭.৫০ টাকা রেটে ডলার বিক্রি করেছিল। সে হিসাবে একদিনেই ডলারের দাম বেড়েছে ১ থেকে ১.৫০ টাকা। একদিনে ডলারের দাম এক টাকা বেড়ে যাওয়াকে বড় ঘটনা বলছেন ব্যাংকাররা।

সূত্র জানায়, গত বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের চাহিদা দিয়েছিল বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মাত্র ২০৪ মিলিয়ন ডলার সরবরাহ করেছে। এর মধ্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি পেমেন্টের জন্য অগ্রণী ব্যাংক পেয়েছে ৫৪ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া বাকি ১৫০ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো।

প্রাইভেট ব্যাংকগুলো ডলারের চাহিদার কথা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানালেও সর্বশেষ বুধবার এসব ব্যাংক এক ডলারও পায়নি। ফলে, প্রাইভেট ব্যাংকগুলোকে বাধ্য হয়ে ডলার সংগ্রহ করতে এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর কাছে ধর্না দিতে হচ্ছে।

ডলার সংকটের কারণে গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকটি ব্যাংক সময়মতো এলসি মূল্য পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে বলেও জানিয়েছে সূত্র। অবশ্য বিষয়টি নতুন নয়। এলসি মূল্য পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার মতো ঘটনা আমাদের দেশে নিয়মিতই ঘটে। তবে এখন এই সংখ্যাটি বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন পলিসি নেওয়ার কারণে আমদানি এলসি খোলা আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে বলে উল্লেখ করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান। তিনি টিবিএসকে বলেন, 'এখন এলসি খোলার হার কমলেও কয়েকমাস আগে যেসব এলসি খোলা হয়েছিল, সেগুলোর পেমেন্টের প্রেশার আসছে এখন।'

এই মুহূর্তে ডলার কতোটা জরুরি তা বোঝাতে এ ব্যাংকার বলেন, 'প্রতিটা ব্যাংককেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমদানি এলসির টাকা পরিশোধ করতে হয়, নাহলে তারা ডিফল্টার হয়ে যাবে। এমন হলে, বিদেশি ব্যাংকগুলো এলসি খোলার ক্ষেত্রে আমাদের উপর আর ভরসা করতে পারবে না। এর প্রভাবে কনফার্মেশন চার্জ বেড়ে যেতে পারে। তাই, ডলার সংকটের কারণে আমাদের এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হলে, সেটি কোনো দিক থেকেই সুখকর হবে না।'

সাধারণত, একটি দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের সক্ষমতা ও পেমেন্টের নিশ্চয়তার ভিত্তিতে ব্যাংকগুলোকে মোট এলসি ভ্যাল্যুর উপর একটি নির্দিষ্ট এলসি কনফার্মেশন চার্জ দিতে হয়। বাংলাদেশে কাজ করা ব্যাংকগুলোকে মোট এলসি ভ্যাল্যুর ২% থেকে ৩% এলসি কনফার্মেশন চার্জ দিতে হয়। পাশ্ববর্তী ভারতের ব্যাংকগুলোকে দিতে হয় মাত্র ০.৫০% থেকে ০.৭৫%। এমনকি তুলনামূলক দূর্বল অর্থনীতির দেশ পাকিস্তানের ব্যাংকগুলো এই চার্জ দেয় ১.২৫% থেকে ১.৭৫%। এলসি পেমেন্ট করতে দেরি হওয়ার পরিমাণ বাড়তে থাকলে এই চার্জ আরো বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ব্যাংকগুলো।

অবশ্য, কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে। চলতি অর্থবছরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করা হয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ১০০ মিলিয়ন ডলার সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। ফলে রিজার্ভও কমছে। গত আগস্টে রিজার্ভ যেখানে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলকে পৌঁছেছিল, সেটি এখন ৪২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে।

এদিকে, ডলার সংকটের এই আঁচ লেগেছে দেশের কার্ব মার্কেটেও। গত কয়েকদিন ধরে এই মার্কেটে ৯৮ টাকার কাছাকাছি রেটে ডলার কেনাবেচা চলছে। গতকাল বৃহষ্পতিবারও এখান থেকে ডলার কিনতে রেট দিতে হয়েছে ৯৮.৩০ থেকে ৯৮.৫০ টাকা। নগদ ডলার বিক্রি করার ক্ষেত্রে ৯৮ থেকে ৯৮.১০ টাকা রেট পাওয়া গেছে। 


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]