স্ত্রীর প্রতি স্বামীর আচরণ ও করণীয়


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 20-07-2022

স্ত্রীর প্রতি স্বামীর আচরণ ও করণীয়

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি ঘরে (স্ত্রীদের সহযোগিতায়) কাজ করতেন? উত্তরে হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরের মানুষদের সেবায় নানা কাজে অংশ নিতেন। নামাজের সময় হলে বেরিয়ে যেতেন। (বুখারি)

স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর আচরণ হবে উত্তম। স্ত্রীর সঙ্গে উত্তম আচরণ করা স্বয়ং নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত। তিনি তাঁর স্ত্রীদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করতেন। নবিজীর আচরণ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উম্মতের জন্য  একান্ত আবশ্যক। কারণ স্ত্রীদের প্রতি উত্তম আচরণ ও করণীয় সম্পর্কে সার্বিক সহযোগিতায় নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন এক অনুকরণীয় আদর্শ। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তা প্রমাণিত।

নবিজী নিজের কাজ নিজে করতেন। ঘরের কাজে স্ত্রীদের সহযোগিতা করতেন। হাদিসে এসেছে-

আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানি বলেন, উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাতে তাঁর কাপড় সেলাই করতেন; নিজের জুতা মেরামত করতেন এবং সাংসারিক যাবতীয় কাজে অংশ গ্রহণ করতেন।’ (ফতহুল বারি)

আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে স্বামী-স্ত্রীকে পরস্পর এক বলে সম্বোধন করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

فَاسۡتَجَابَ لَهُمۡ رَبُّهُمۡ اَنِّیۡ لَاۤ اُضِیۡعُ عَمَلَ عَامِلٍ مِّنۡکُمۡ مِّنۡ ذَکَرٍ اَوۡ اُنۡثٰی ۚ بَعۡضُکُمۡ مِّنۡۢ بَعۡضٍ

‘এরপর তাদের প্রভু তাদের দোয়া (এই বলে) কবুল করে নিলেন যে, আমি তোমাদের কোনো পরিশ্রমকারীর পরিশ্রমই বিনষ্ট করি না, তা সে পুরুষ হোক কিংবা স্ত্রীলোক। তোমরা পরস্পর এক।’ (সুরা ইমরান : আয়াত ১৯৫)

কোরআনের ঘোষণা নারীর প্রতি পুরুষের আচরণ এবং পুরুষের প্রতি নারীর আচরণ হবে সুন্দর ও সযোগিতাপূর্ণ। কেউ কারো প্রতি বিরূপ আচরণ করবে না। তবেই স্বামী-স্ত্রীর মাঝে তৈরি হবে সুসম্পর্ক ও মধুর বন্ধন। এ লক্ষ্যে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের প্রতি যথাযথ মর্যাদা দেবে। অনেক ক্ষেত্রে স্বামীর কাছ থেকে যেমন স্ত্রীরা যথাযথ মর্যাদা পায় না। তেমনি স্ত্রীদের কাছ থেকেও স্বামীরা যথাযথ মর্যাদা পায় না। যার ফলে পারিবারিক জীবনে শুরু হয় অশান্তি। এমনটি কাম্য নয়।

স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর করণীয়

স্বামীর সবচেয়ে বড় গুণ হলো স্ত্রীর প্রতি সদাচরণ করা। স্ত্রীকে তার কাজে সহযোগিতা ও সম্মান করা। বিশেষ করে স্ত্রীর সঙ্গে স্বামী আচরণগুলো হওয়া উচিত এমন-

১. সবসময় স্ত্রীর সঙ্গে ভালো আচরণ করা।

২. স্ত্রীর কোনো কথা বা কাজে কষ্ট পেলে ধৈর্য ধারণ করা।

৩. স্ত্রীর উচ্ছৃঙ্খল বা অন্যায় চলাফেরায় তাকে বার বার কোমল ও নম্র ভাষায় বোঝানো।

৪. সামান্য অজুহাতে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ না করা। সুযোগ পেলেই কথায় কথায় ধমক না দেওয়া এবং রাগ না করা।

৫. আত্মমর্যাদায় আঘাত আসে এমন বিষয় নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে কথা না বলা। এ ধরনের কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সংযত থাকা।

৬. অকারণে সন্দেহবশতঃ স্ত্রীর প্রতি কুধারণা না করা।

৭. স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব পালন ও খোঁজ-খবর রাখাসহ যথাযথ আদর-যত্নে উদাসীন না থাকা।

৮. সামর্থ্যানুযায়ী স্ত্রীকে যথাযথা খোরপোষ দেওয়া। আবার খোরপোষের নামে অযথা অপচয় যেন না হয় সে দিকেও লক্ষ্য রাখা।

৯. নামাজ এবং দ্বীনের আহকাম মেনে চলার ব্যাপারে স্ত্রীকে উৎসাহিত করা এবং বোঝানো।

১০.  পবিত্র ও দাম্পত্য জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা ও নিয়ম-কানুনগুলো স্ত্রীকে ভালোভাবে শেখানোর ব্যবস্থা করা। ইসলামি শরিয়তের পরিপন্থী কাজ থেকে বিরত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করা।

১১. একাধিক স্ত্রী থাকলে সবসময় সবার মাঝে সমতা রক্ষার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।

১২. স্ত্রীর চাহিদানুযায়ী তাদের সঙ্গে সময় দেওয়া। মেলামেশা ও ওঠা-বসায় তাদের চাহিদার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া। এমনকি তাদের মতামতের ব্যাপারেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক।

১৩. স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া (মেলামেশায়) আজল না করা। অর্থাৎ মেলামেশার সময় শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত স্বাভাবিক স্থান ত্যাগ না করা।

১৪. একান্ত নিরুপায় না হলে স্ত্রীকে তালাক না দেওয়া। কেননা ইসলামে সবচেয়ে নিকৃষ্ট বৈধ কাজ হলো তালাক। যদি তালাক দিতেই হয় তবে ইসলামি শরিয়তের আলোকে তালাক প্রদান করা।

১৫. স্ত্রীর স্বাভাবিক চাহিদা অনুযায়ী থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা স্বামীর দায়িত্ব। সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে এ দায়িত্ব পালন করা।

১৬. স্ত্রীকে নিয়ে মাঝে মাঝে স্ত্রীর নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত করতে যাওয়া। স্বামী যদি একান্তই সময় না পায় তবে অন্তত স্ত্রীকে তার আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ করে দেওয়া।

১৭. কোনোভাবেই স্ত্রীর ব্যাপারে কিংবা দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীর সঙ্গে মেলামেশার বর্ণনা বা চিত্র অন্য কারো কাছে প্রকাশ না করা স্বামীর একান্ত কর্তব্য।

১৮. স্ত্রীর অধিকারের প্রতি সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার পরও যদি স্ত্রী বেপরোয়া হয় তবে প্রয়োজনে স্ত্রীকে প্রথমে বারবার সতর্ক করা। এরপর ইসলামের নির্দেশনা অনুসারে হালকা শাসন করা। তবে ইসলামি শরীয়ত যতটুকু অনুমতি দিয়েছে তার চেয়ে বেশি শাসন না করা। সর্বোপরি প্রয়োজনে পারস্পরিক সমযোতার মাধ্যমে আলাদা হয়ে যাওয়া।

সুখ-শান্তিময় পারিবারিক দাম্পত্য জীবনের জন্য সব স্বামীর উচিত, তাদের স্ত্রীদের কাজের মৌখিক স্বীকৃতি ও প্রশংসার পাশাপাশি সাংসারিক কাজে সামান্য সময়ের জন্য হলেও স্ত্রীকে সহযোগিতা করা। তবেই স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর সুসম্পর্ক বজায় থাকবে। পারিবারিক জীবনে অনিন্দ্য সুন্দর শান্তিপূর্ণ সংসারের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব স্বামীকে তাদের স্ত্রীর প্রতি সদাচরণ, সহযোগিতা ও সম্মান করার তাওফিক দান করুন। শান্তিপূর্ণ পরিবার গঠনে স্ত্রীর প্রতি সার্বিক সমর্থন, সদাচরণ ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

রাজশাহীর সময়/এ


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]