বিদ্যুৎ ঘাটতি আরও ভোগাতে পারে


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 21-07-2022

বিদ্যুৎ ঘাটতি আরও ভোগাতে পারে

জ্বালানি সংকটে চলমান বিদ্যুৎ ঘাটতি আগামীতে আরও ভোগাতে পারে। বিশেষ করে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলে বাড়তে পারে এই সংকট। জ্বালানির ঘাটতিজনিত বাস্তবতায় এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছেন খাত-সংশ্নিষ্টরা।

দেশজুড়ে সূচি ধরে লোডশেডিং শুরুর দ্বিতীয় দিন গতকাল বুধবারও বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার ভেলকি জারি ছিল। রাজধানীতে সূচি রক্ষায় বিতরণ কোম্পানিগুলোর কর্তাদের রীতিমতো ঘাম ছুটেছে। কোথাও কোথাও লোডশেডিং করতে হয়েছে একাধিকবার। ঢাকার বাইরে এলাকাভেদে কোথাও কোথাও লোডশেডিং হয়েছে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য বলছে, গতকাল দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৩ হাজার ৬৭৪ মেগাওয়াট। সর্বোচ্চ উৎপাদন ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৮৯৯ মেগাওয়াট। অর্থাৎ বিদ্যুতের ঘাটতি পিডিবি দেখিয়েছে ৭৮৫ মেগাওয়াট। বাস্তব ছবি কিন্তু ভিন্ন। গতকাল শুধু পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ঘাটতিই ছিল ৮০০ মেগাওয়াটের ওপরে।

লোডশেডিং বাড়তে পারে উত্তরে :সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগে বিদ্যুতের চাহিদা ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। এই অঞ্চলে ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ার কয়লাভিত্তিক ৫২৪ মেগাওয়াট কেন্দ্র। কয়লা সংকটে এই কেন্দ্র থেকে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। রংপুরে ১১৩ মেগাওয়াট ও ঠাকুরগাঁওয়ে ১১৫ মেগাওয়াট বেসরকারি কেন্দ্র থেকে মিলছে ২০০ মেগাওয়াটের মতো। এখন দেশের অন্য অঞ্চল থেকে বিদ্যুৎ এনে চাহিদা মেটানোর চেষ্টা চলছে। তবু ঘাটতি থাকে ৬০০ থেকে ৭০০ মেগাওয়াট।

বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র চলে স্থানীয় খনির কয়লা দিয়ে। গত ৩০ এপ্রিল থেকে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির উৎপাদন বন্ধ। নতুন স্তর থেকে কয়লা তোলার প্রস্তুতি চলছে, যা সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। তিন মাস ধরে মজুত কয়লা দিয়ে চলছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। মজুত কম থাকায় চালানো হচ্ছে মাত্র একটি ইউনিট। এখন রয়েছে ৩০ হাজার টনের মতো কয়লা, যা দিয়ে চলতি মাসের বাকি ক'দিন বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে বলে সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ফলে আগামী আগস্টজুড়ে বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ থাকতে পারে। এতে রংপুরের আট জেলায় আরও খারাপ হতে পারে সরবরাহ পরিস্থিতি। জানতে চাইলে বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী ওয়াজেদ আলী বলেন, তাঁরা মজুত কয়লা দিয়ে সূচি করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছেন। মজুত কমে আসছে। তাই খনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বারবার বৈঠক করছেন, যাতে আগস্টের প্রথম সপ্তাহেই কয়লা পাওয়া যায়। খনি কর্তৃপক্ষ দ্রুত উৎপাদনে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বলে ওয়াজেদ আলী জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, কয়লা খনির ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা রয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে খনিটি থেকে কয়লা তুলতে সময় লাগছে। তারা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোনো বিকল্প প্রস্তুতি রাখেনি। তাই কয়লা সংকটে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হতে পারে।

রামপাল কেন্দ্রের সুবিধা মিলবে না অন্য অঞ্চলে :আগামী সেপ্টেম্বরের পর দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে। এর পেছনে বড় ভরসা হলো ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটের রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সেপ্টেম্বরে উৎপাদনে আসার খবর। তবে খাত-সংশ্নিষ্টরা বলছেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এলেও গ্রিড লাইন প্রস্তুত না হওয়ায় এই বিদ্যুৎ ঢাকাসহ দেশের অন্য অঞ্চলে নেওয়া সম্ভব হবে না। এই সঞ্চালন লাইনের নির্মাণ আগামী বছরের জানুয়ারি কিংবা ফেব্রুয়ারিতে শেষ হবে। ফলে সেপ্টেম্বরে উৎপাদনে এলেও এর সুফল আপাতত শুধু দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ পাবে।

তেলের মজুত নিয়ে শঙ্কা :দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের দ্বিতীয় বড় উৎস জ্বালানি তেল। সরকারের সিদ্ধান্তে ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন আপাতত বন্ধ আছে, যা মোট উৎপাদন ক্ষমতার ৬ শতাংশ। ফার্নেস অয়েল থেকে পাওয়া যায় ২৭ শতাংশ বিদ্যুৎ। তবে ডলার সংকট ও বিল দিতে দেরি হওয়ায় ফার্নেস অয়েল আমদানি ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকরা। তাঁরা এ বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

দেশের বিদ্যুৎ খাতের বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইপিপিএ) প্রেসিডেন্ট ইমরান করিম জানান, কয়েক মাস থেকে তাঁরা বিল পাচ্ছেন না। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ডলার সংকট। ফলে যেসব মালিক নিজেরা তেল আমদানি করেন, তাঁরা সংকটে পড়েছেন। সময়মতো তেল আনতে না পারলে উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া মেলেনি।

সিলেট ব্যুরো জানিয়েছে, সিলেটে কোনো কোনো এলাকায় ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে। দু'দিন ধরে লোডশেডিং আরও বেড়েছে। সিলেটের পিডিবির প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আব্দুল কাদির জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাতে চাহিদা ছিল ৮৮ মেগাওয়াট। সরবরাহ পাওয়া গেছে মাত্র ৩০ মেগাওয়াট। বুধবার সকালে চাহিদা ছিল ২৫; পেয়েছেন ১৫-১৬ মেগাওয়াট। তিনি বলেন, 'এলাকাভেদে তিন থেকে চার ঘণ্টা লোডশেডিং রেখে শিডিউল করেছিলাম। এখন অর্ধেক সরবরাহই পাচ্ছি না। ফলে লোডশেডিং আরও বেশি করতে হচ্ছে।'

পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, পঞ্চগড়ে গতকাল দফায় দফায় দিনে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং চলেছে। বিতরণ কোম্পানি নেসকো ও আরইবি জানিয়েছে, ৬০ মেগাওয়াট চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ দেওয়া যাচ্ছে। তাই ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে। সূত্র: সমকাল

রাজশাহীর সময়/এম


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]