খাদ্য ও পানিতে মিশে যেভাবে সংক্রমণ ছড়ায় নোরোভাইরাস


ফারহানা জেরিন এলমা , আপডেট করা হয়েছে : 31-01-2022

খাদ্য ও পানিতে মিশে যেভাবে সংক্রমণ ছড়ায় নোরোভাইরাস

শীত এলেই নরোভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যায়। সারা বিশ্বে নোরোভাইরাসকে তীব্র গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিসের (ডায়রিয়া বা বমির অসুস্থতা) সবচেয়ে সাধারণ কারণ বলে মনে করা হয়। এটি খাদ্য ও পানীয়ের মাধ্যমে সহজেই ছড়িয়ে পড়ে শরীরে। এই ভাইরাস স্বাস্থ্যের উপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

নোরোভাইরাসকে মূলত নরওয়াক ভাইরাস বলা হয়। নরওয়াক শহরে ১৯৭২ সালে প্রথম প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল এই ভাইরাসের। প্রতি বছর ১৯-২১ মিলিয়ন মার্কিনরা তীব্র গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিসের সমস্যা অর্থাৎ নোরোভাইরাসে ভোগেন।

সিডিসি’র তথ্য অনুসারে, খাদ্যবাহিত বিভিন্ন রোগের মধ্যে অর্ধেকই আক্রান্ত হন নোরোভাইরাসে। প্রতিবছর এই ভাইরাস সংক্রমণের ফলে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ রোগী হাসপাতালে জরুরি সেবা নেন। যদিও নোরোভাইরাস বছরের বিভিন্ন সময় আক্রমণ করতে পারে, তবে শীতকালে এটি বেশি দেখা যায়।

নোরোভাইরাসকে ‘ফুড পয়জনিংও’ বলা হয়। কারণ খাবার ও পানিতে সহজেই মিশে যেতে পারে এই ভাইরাস। তারপর ওই খাবার গ্রহণের মাধ্যমে সংক্রমণ হতে পারে।

নোরোভাইরাস উপসর্গ কী কী?

নোরোভাইরাসের সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে- বমি বমি ভাব, বমি (শিশুদের মধ্যে প্রায়শই), পানিযুক্ত ডায়রিয়া (বয়স্কদের মধ্যে প্রায়শই) ও পেটে ব্যথা। এ ছাড়াও দেখা দিতে পারে-

>> জ্বর

>> ঠান্ডা

>> মাথাব্যথা

>> পেশী ব্যথা ও

>> ক্লান্তি।

এই লক্ষণগুলোর বেশিরভাগই গুরুতর নয়, তবে ডায়রিয়া ও বমির কারণে অনেকেই ডিহাইড্রেটেড পড়েন। শিশু ও বয়স্করা ডিহাইড্রেশনের জন্য সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল।

আপনার যদি নোরোভাইরাসের লক্ষণ থাকে, তাহলে অসুস্থতা নিশ্চিত করতে চিকিৎসক মল পরীক্ষা করাতে পারেন। তবে উপসর্গ দেখেই চিকিৎসকরা নোরোভাইরাস নির্ণয় করতে পারেন।

কতদিন নোরোভাইরাস সংক্রামক?

৮ সপ্তাহ পর্যন্ত ভাইরাসটি শরীরে থাকতে পারে। এ সময়ের মধ্যেও আপনার মাধ্যমে অন্যদের শরীরেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে নরোভাইরাস। এটি সাধারণত সময়ের সঙ্গে কম সংক্রামক হয়।

শরীরে প্রবেশ করার পরপরই এই ভাইরাসের উপসর্গ টের পাওয়া যায়। অনেকের ২-৩ দিন বা ৪৮-৭২ ঘণ্টার মধ্যেই বমি বা ডায়রিয়া সেরে যায় স্যালাইন গ্রহণের মাধৗমৈ।

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?

যদি ৩ দিন পরেও লক্ষণ থাকে তবে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এ ছাড়াও ডিহাইড্রেশন দেখা দিলে আর দেরি করবেন না।

নোরোভাইরাস সংক্রমণে অতিরিক্ত বমি হওয়া বিপজ্জনক। বিশেষ করে বমি সবুজ বা হলুদ হওয়ার মানে হলো তা অন্ত্রে বাসা বেঁধেছে।

নোরোভাইরাস কীভাবে শরীরে প্রবেশ করে?

দূষিত খাবার ও পানীয়ের মাধ্যমে নোরোভাইরাসে সংক্রামিত হয়তে পারে যে কেউ। এ ছাড়াও কাঁচা বা কম সেদ্ধ হওয়া মাংস, কাঁচা ফল ও সবজি খাওয়ার ফলে এটি শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

এমনকি এই ভাইরাস যদি কোনো বস্তুতে থাকে আর তা স্পর্শ করার পর নাক, মুখ বা চোখ স্পর্শ করেন তাহলেও আপনি সংক্রমিত হতে পারেন। বিভিন্ন রেস্তোরা, ডে-কেয়ার সেন্টার, হাসপাতাল ইত্যাদি স্থানে নোরোভাইরাস বেশি থাকে।

একবার কেউ দূষিত খাবার থেকে নরোভাইরাসে সংক্রমিত হলে ওই ব্যক্তির খাবার বা পাত্র, করমর্দনের মাধ্যমে বা অন্য ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের মাধ্যমে দ্রুত অন্যের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে ভাইরাসটি।

আবার আক্রান্ত ব্যক্তির বমি থেকেও পৃষ্ঠদেশে বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে এই ভাইরাস। এটি মলের মাধ্যমেও ছড়ায়। নোংরা ডায়াপারও নরোভাইরাসকে আশ্রয় দিতে পারে। অল্পবয়সী শিশু, বয়স্ক ও যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তাদের শরীরে সহজেই বাসা বাঁধে নরোভাইরাস।

নোরোভাইরাসের চিকিৎসা-

নোরোভাইরাস অন্যান্য ভাইরাসের মতো অ্যান্টিবায়োটিকে সাড়া দেয় না। কোনো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নোরোভাইরাসের চিকিৎসা করতে পারে না। তবে সুস্থ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অসুস্থতা ১-৩ দিনের মধ্যে নিজে থেকেই সেরে যায়।

নোরোভাইরাস থেকে দীর্ঘমেয়াদী কোনো সমস্যা হয় না। যদিও বা এই ভাইরাস সংক্রমণের কারণে ডিহাইড্রেশন হতে পারে, বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ব্যক্তিও যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল।

ডিহাইড্রেশনের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে-

>> দাঁড়ালে মাথা ঘোরা

>> শুষ্ক মুখ

>> প্রস্রাব কম হওয়া

>> অস্বাভাবিক ঘুম

>> অস্থিরতা ও

>> অলসতা।

ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে প্রচুর পরিমাণে তরল, বিশেষ করে পানি ও জুস পান করতে হবে। পানির ঘাটতি মেটাতে শিশুদেরকে ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন দিন।

চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন। এতে ডায়রিয়ার সমস্যা আরও খারাপ হতে পারে। একই সঙ্গে অ্যালকোহল ও ক্যাফিনযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন। এতে শরীর আরও ডিহাইড্রেট হতে পারে।

নোরোভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়

নোরোভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের চাবিকাঠি হলো স্বাস্থ্যবিধি মানা। অনেকেই হোস্টেল কিংবা মেসে একসঙ্গে অনেকজন থাকেন। এসব স্থানে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিও বেশি। এজন্য সতর্ক থাকতে হবে ও সবাইকে মানতে হবে কয়েকটি বিষয়। যেমন-

>> কিছুক্ষণ পরপরই হাত অন্তত ২০ সেকেন্ডের জন্য সাবান-পানি দিয়ে ধুতে হবে। বিশেষ করে বাথরুম থেকে বের হওয়ার সময়, শিশুর ডায়াপার পরিবর্তনের পরে ও খাবার তৈরি বা খাওয়ার আগে।

>> অ্যালকোহল-ভিত্তিক ক্লিনজারগুলো সাবান-পানির মতো কার্যকর নয়। তাই স্যানিটাইজারে বেশি ভরসা করবেন না।

>> কোনো দূষিত জিনিসপত্র (যেমন- নোংরা ডায়াপার) সাবধানে ফেলে দিন।

>> কাঁচা ফল ও সবজি ভালো করে ধুয়ে নিন। শেলফিশ খাওয়ার আগে ভালো করে রান্না করুন।

>> কেউ অসুস্থ হওয়ার পরে ডিটারজেন্ট ও ক্লোরিন ব্লিচের মিশ্রণ দিয়ে পৃষ্ঠগুলো পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করুন।

>> নোরোভাইরাসে সংক্রমিত হলে সুস্থ হওয়ার পরও রান্নাঘরে গিয়ে খাবার তৈরি করবেন না। কিংবা আপনার জিনিসপত্র ও খাবার কারও সঙ্গে ভাগাভাগিও করবেন না।

নোরোভাইরাস প্রতিরোধের সহজ উপায় হলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা ও খাবার-পানি খাওয়ার আগে তা যাচাই করা। সূত্র: ওয়েবএমডি

রাজশাহীর সময় / এফ কে


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]