বোস্টনে প্রবাসীদের 'শোহাদা-ই-কারবালা’ মাহফিল


মিনারা হেলেন ইতি (নিউ ইয়র্ক): , আপডেট করা হয়েছে : 23-08-2022

বোস্টনে প্রবাসীদের 'শোহাদা-ই-কারবালা’ মাহফিল

যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টনে এই প্রথমবারের মতো ‘পবিত্র শোহাদা-ই-কারবালা’ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় সময় রোববার (২১ আগষ্ট) সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলে এ মাহফিল। এ খবর জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস।

বাংলাদেশ মাইজভান্ডারী গাওসিয়া হক কমিটি নিউ ইংল্যান্ড (বোস্টন) শাখার আয়োজনে ম্যাসাচুসেটসের ওয়াটার টাউনের হিবারনিয়ান হলে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত উক্ত  ‘পবিত্র শোহাদা-ই-কারবালা’ মাহফিলের আয়োজক পরিষদের আহবায়ক ও বেইনের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ নোমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং জোবাইর হোসাইন সিকদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হযরত শাহ সূফি সৈয়দ মুহাম্মদ হাসান মাইজভান্ডারী (মা.জি.আ.)। তিনি বাংলাদেশে প্রবর্তিত একমাত্র ত্বরিকা, বিশ্বসমাদৃত ‘ত্বরিকা-ই-মাইজভান্ডারী’র প্রতিষ্ঠাতা আওলাদে রাসূল গাউসুল আযম মাইজভান্ডারী খাতেমুল আউলিয়া হযরত মাওলানা শাহ সূফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (কঃ)’র প্র-প্রপৌত্র। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আল নূর ইসলামিক স্কুল নর্থহ্যাম্পটন ইউকে-এর পরিচালক ইসলামি চিন্তাবিদ ও গবেষক শাইখ সাইফুল আযম আজহারী। মাহফিলে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ক্যামব্রিজের ইসলামিক সেন্টার অব রিঞ্জ এভেনিউ-এর খতিব আল্লামা মুফতি সৈয়দ ইআওয়ার রাজভি এবং ইসলামিক সেন্টার অব মেড ফোর্ডের খতিব হাফেজ আল্লামা আহসান ওয়ারিস।

অনুষ্ঠানে হামদ ও নাত পরিবেশন করেন সিরাজুম মনির আমরিন সুলতানা জেনী, রেহনোমা আহমেদ আরশী। প্রধান অতিথিকে সাইটেশন প্রদান করেন প্রজেক্ট হোপ ফর সাউথইষ্ট এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ড. হাই ভ্যান হা। অতিথিবৃন্দের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন সংগঠনের সদস্যবৃন্দ যথাক্রমে-একেএম ওয়াহেদী, আহমেদ নবী, মিহিউদ্দিন চৌধুরী, ফরিদ খান ও কাজী আবসার উদ্দিন।

প্রধান অতিথি হযরত শাহ সূফি সৈয়দ মুহাম্মদ হাসান মাইজভান্ডারী (মা.জি.আ.) তার মূল্যবান বক্তব্যে বলেন, আল কোরআনে তরিকত চর্চার হাকীকতঃ রূহানী উৎকর্ষ সাধনের ভিন্ন ভিন্ন পথ ও পন্থার অস্তিত্বের ইঙ্গিত পবিত্র কোরআনেই রয়েছে। ‘তরিকত’ মানে আল্লাহর দিকে বান্দার প্রত্যাবর্তনের পথ। এই পথের দুটি দিক রয়েছে। জাহের ও বাতেন। বাহ্যিক শরীয়ত পালনের মাধ্যমে বান্দা তার জাহেরকে পবিত্র করে আর সাথে সাথে আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমে হাকীকতে শরীয়ত ও ধর্ম পালনের নিগুঢ়তম উদ্দেশ্য সাধনে ব্রতী হয়। এই চর্চাই সূফী তরিকার মৌলিক ভাব। ‘তরিকত’ ইসলাম ধর্মে কোন নব আবিষ্কার নয়। ইসলামের প্রথম যুগে আধ্যাত্মিক সাধনার ছায়ায় তরিকতের হাকিকত বর্তমান ছিল। হযরত রাসুল (সাঃ) সাহাবাদেরকে ধর্মীয় দিকনির্দেশনার অংশ হিসেবে আধ্যাত্মিক সাধনার তালীম ও তারবিয়ত দিয়েছেন। এমনকি ‘বাইয়াতে ইসলাম’ গ্রহণের পরও সাহাবাদের কাছ থেকে হযরত রাসুল (সাঃ) বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যাপারে পুনঃ বায়াত গ্রহণ করেছেন।

তিনি আল কোরআন ও হাদিসের আলোকে মাইজভান্ডারী তরিকতের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধর বলেন, ইসলাম ধর্মে আধ্যাত্মিক সাধনার সূদীর্ঘ পথ পরিক্রমায় কোরান ও হাদীসের মৌলিক শিক্ষাকে আশ্রয় ও আত্মস্থ করে অনেক তরিকার আত্মপ্রকাশ ঘটে। যেমন, কাদেরিয়া, মুজাদ্দেদীয়া, নকশবন্দীয়া, চিশতিয়া ইত্যাদি। এরই ধারাবাহিকতায় উনবিংশ শতাব্দির মধ্যভাগে কোরান ও হাদীসের শিক্ষাকে অনুসরন করে গাউছুল আজম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (কঃ) এর আধ্যাত্মিক শক্তি ও শিক্ষাকে ধারন করে একটি তরিকা প্রচারের সূচনা হয়।

হযরত সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভান্ডারী (রহঃ) বলেন, “এই ত্রিবিধ বেলায়তী ধারা, নবূয়তী ধারার সমন্বয়ে অর্থাৎ জাহের বাতেন তা’লীমে এরশাদী সহ শরীয়ত, তরীকত, হাকীকত ও মায়ারেফত প্রভাবে ও সংমিশ্রণে মাইজভান্ডারী তরীকারূপ মহা সাগরের উৎপত্তি।”

এই তরিকার প্রথম বুজুর্গ ও প্রচারক গাউছুল আজম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (কঃ) নিজগ্রাম ‘মাইজভান্ডার’ এর কারণে ‘মাইজভান্ডারী’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাই তার অনুসৃত ও প্রচারিত আধ্যাত্মিক সাধন পদ্ধতি বা তরিকা ‘মাইজভান্ডারী তরিকা’ হিসেবে জনসমাজে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে।

মাইজভান্ডারী তরিকার মানব কল্যাণকামী বৈশিষ্ট্যঃ এই ত্বরিকা ছিলাছিলার দৃষ্টিকোনে কাদেরিয়া ত্বরিকার সাথে সর্ম্পকিত। অন্যান্য ত্বরিকার আত্মিক ও আধ্যাত্মিক বৈশিষ্টগুলো মাইজভা-ারী ত্বরিকায় একত্রিত হয়েছে।

এই ত্বরিকার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, এ ত্বরিকা ইসলামী ভাবাদর্শকে পরিপূর্ণভাবে আত্বস্থ করার পাশাপাশি একই সাথে অসাম্প্রদায়ীক, উদার ও সংস্কারমুক্ত, নৈতিক ধর্ম-প্রাধান্যসম্পন্ন, শ্রেণী-বৈষম্যহীন ও মানবদরদী।  

অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক আল নূর ইসলামিক স্কুল নর্থহ্যাম্পটন ইউকে-এর পরিচালক ইসলামি চিন্তাবিদ ও গবেষক শাইখ সাইফুল আযম আজহারী পবিত্র শোহাদা-ই-কারবালার মর্মান্তিক ঘটনাবলী উল্লেখ করে বলেন, ইমাম হোসাইন (রা.) কারবালার ময়দানে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে ইসলামের বাগানকে উর্বর করে গেছেন। সেই কারবালার ময়দানকে কেন্দ্র করে মু’মিনদের উদ্দেশ্যে আল্লামা ইকবাল বলেছেন ‘নকশে ইল্লাল্লাহা বার সাহারা নবীস/সাত্রে উনুয়া সে নাজাতে মা নবীস’ ইমাম হোসাইন (রা.) ৬১ হিজরীর ১০ মহররম কারবালার ময়দানে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র তৌহিদী নকশা এঁকেছেন। সে নকশা আঁকার জন্য হোসাইনের কাছে কোনো কাগজ ছিল না, কারবালার জমিনকে তিনি কাগজ বানিয়েছেন। তাঁর হাতে সেদিন লেখার কোনো কলম ছিল না, নিজের কলবকে কলম বানিয়েছেন, তাঁর হাতে কালি ছিল না, নিজের বুকের তাজা রক্তকে কালি বানিয়ে এমন এক নকশা অঙ্কন করেছেন যা সত্য ও ন্যায়ের অনুসারীদের দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা, আর অনাগত মুসলমানদের মনজিলে মাকসুদে পৌঁছার আলোকবর্তিকা।

ইমাম হোসাইন (রা.)-এর অন্যায়ের বিরুদ্ধে দুর্বার সংগ্রাম ও প্রতিবাদ স্মরণ করিয়ে দেয় বদর, উহুদ ও খন্দকের ইতিহাস। যেমন সংগ্রামী ছিলেন সাহাবায়ে কেরাম। দ্বীনকে বিজয়ী করতে কেমন ইস্পাত কঠিন মনের অধিকারী ছিলেন তাঁরা। যাদের সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন- তাঁরা ফুরসানুন নাহার, রুহবানুল লাইল- দিনে সৈনিক, রাতে দরবেশ। সেই মহাবীর সাহাবায়ে কেরামের শ্রেষ্ঠ উত্তরসুরী, সত্যের কান্ডারী, দুর্বার সেনা নায়ক ছিলেন ইমাম হোসাইন (রা.)।

মাহফিলের আয়োজক পরিষদের আহবায়ক মোহাম্মদ নোমান চৌধুরী মুসলমানদের ধর্মীয় এ পবিত্র মাহফিলে আসার জন্য উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি আগামীতে এ ধরনের মহতি অনুষ্ঠানে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সহযোগিতাকারীদের নিশ্চয় আল্লাহতা'লা হেফাজতে রাখবেন। 


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]