রাজশাহী মহানগরীতে পুকুরের পানিতে গোবর ও মুরগীর বস্তাভর্তি বিষ্ঠা, দূর্গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী


রাতুল সরকার : , আপডেট করা হয়েছে : 27-08-2022

রাজশাহী মহানগরীতে পুকুরের পানিতে গোবর ও মুরগীর বস্তাভর্তি বিষ্ঠা, দূর্গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

রাজশাহী মহানগরীর জনবসতির মধ্যে অবস্থিত একটি পুকুরে মাছের খাবার হিসেবে গরুর গবর ও মুরগির বিষ্ঠা ফেলেছে মাছ চাষি সেন্টু ও আজু নামের দুইজন ব্যক্তি। ফলে পুকুরের পানি নোংড়া ও ব্যবহারে জন্য অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। সেই সাথে নোংড়া পানি থেকে পঁচা দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে চারদিকে।

শনিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুকুরের পানিতে ভাসছে মরগীর বিষ্টা ভর্তি একাধিক বস্তা। পানি নোংড়া হয়ে পঁচে সবুজ রং ধারন করেছে। সামান্য বাতাসেই পানির পচাঁ দূগন্ধ ছড়াচ্ছে চারিদিকে। ফলে সবচাইতে বেশি বিপদে পড়েছেন পুকুরপাড়ের বাসিন্দারা ও পুকুর সংলগ্ন গোরহাঙ্গা জামে মসজিদের মুসল্লিরা।

মসজিদে যোহরের সলাত আদায় করতে আসা এক মুসল্লি বলেন, যে কাজ করলে পরিবেশ দূর্ষণ হবে। মানুষ অস্বস্তি বোধ করবে। মানুষেরা মনে কষ্ট পাবে। প্রত্যেক মানুষের উচিৎ এই ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকা। শুধু নিজের স্বার্থ্যকে বড় করে দেখা যাবেনা। প্রতিবেশীদের অসুবিধার কথাও ভাবতে হবে। তবেই হবে মানুষের মতো কাজ। তাছাড়া অন্যের ক্ষতি করে নিজের উন্নতির কথা ভাবাটা ঠিক নয় বলে জানান ওই মুসল্লি।
গোরহাঙ্গা এলাকার একাধিক বাসিন্দারা জানায়, গোরহাঙ্গা জামে মসজিদ সংলগ্ন পুকুরটির আয়তন আনুমানিক ৫ বিঘা। বহু বছর ধরে এই পুকুরটির পানির উপর নির্ভর করে এলাকার প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ। পুকুরে গোসল করা, থালা বাসন মাজা, কাপড় ধোয়া ইত্যাদি এলাকাবাসীর নিত্যদিনের কাজ। কিন্তু দিনের পর দির কুট কৌশলে পুকুরের পানি নোংড়া করে পঁচিয়ে দিচ্ছে অসাধু মাছচাষিরা। তবে তারা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রকাশ্যে তাদের কেউ কিছু বলতে পারেনা। পুকুরটির ব্যপারে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পায়নি তারা।

গোরহাঙ্গা এলাকার একাধিক বাসিন্দারে উপস্থিতিতে যুবক কমরেড শাহীন শেখ জানায়, পুকুরে মাছের খাবার হিসেবে সে সকল বস্তা ফেলে পানি পঁচানো হচ্ছে এটি একটি কৌশল। তিনি পরিস্কার করে বলেন, ইতি পূর্বে বিশেষ কুট কৌশলের মাধ্যমে পুরো রাজশাহী মহানগরী থেকে প্রায় অর্ধশত পুকুর বিলিন হয়ে গেছে। প্রথমে পুকুর খাদকরা নোংড়া অর্বজনা ফেলে পানি পঁচিয়ে দূর্গন্ধ সৃষ্টি করেন। ফলে পানি ব্যবহারের জন্য অনুপোযোগী হয়ে যায়। মানুষ পুকুরে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। এরপর পুরো শহর জুড়ে পুরোনো ভাঙ্গা বিল্ডিং-এর রাবিস পুকুরের চারিপাশে ফেলেন তারা। এতে ধিরে ধিরে ভরাট হয়ে পুকুরের গভীরতা ও আয়তন কমে যায়। পরে রাতারাতি ডামট্রাক দিয়ে ভরাট ফেলা হয়। পুকুর হয় সমতল ভূমি। এরপর প্লট আকারে বিক্রি। আয় হয় কোটি কোটি টাকা।

তিনি আরও বলেন, এই পুকুটিতে একই কৌশল ব্যবহার করছে পুকুরের মালিক। ধিরে ধিরে চলছে ভরাট কার্যক্রম। ইতিমধ্যে পানি পঁচানোর কাজটি তারা সম্পন্ন করেছেন। এরপরের কার্যক্রম ধিরে ধিরে শেষ হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক একাধিক বাসিন্দারা বলেন, পুকুরটি বিলিনের বিপক্ষে আমরা পুরো এলাকাবাসি। ঐতিহ্যবাহী গোরহাঙ্গার এই পুকুরটি রক্ষায় প্রয়োজনে মানববন্ধন সহ সকল প্রকার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে রাস্তায় দাঁড়াবেন বলে জানান তারা।

এ ব্যপারে মাছ চাষি আজু বলেন, পুকুর সংস্কার আমিও চাই। পরিষ্কার পুকুরেই মাছ চাষ করতে হয়। কিন্তু এলাকাবাসী পুকুর নোংরা করছে। তাই ক্ষিপ্ত হয়ে আমি গোবর আর মুগীর বিষ্ঠা পানিতে ফেলেছি। পানি থেকে গন্ধ ছড়াচ্ছে তাই এলাকাবাসী একত্রিত হয়েছে। মসজিদ কমিটি আমাকে অভিযোগ দিয়েছে। এখন আমি পুকুরটি পরিষ্কারের কাজ শুরু করবো।

এ ব্যপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (এডি) মোঃ কবির হোসেন বলেন, গোরহাঙ্গা পুকুরের বিষয়টি আমার জানা নেই। কোন অভিযোগও পাইনি। তবে আপনার (প্রতিবেদক) মাধ্যমে বিষয়টি জানলাম। সরেজমিনে গিয়ে পুকুরটি দেখবো। মাছ চাষের অজুহাতে কেউ পরিবেশ দূষণ করলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান এডি। 


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]