রাজশাহীতে মোবাইল টাওয়ার অপসারণে এলাকাবাসীর মামলা


ইব্রাহীম হোসেন সম্রাট: , আপডেট করা হয়েছে : 24-09-2022

রাজশাহীতে মোবাইল টাওয়ার অপসারণে এলাকাবাসীর মামলা

হাইকোর্টের রায় অমান্য করে রাজশাহীতে আবাসিক এলাকায় মোবাইল ফোনের টাওয়ার নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। মহানগরীর বিজিবি ক্যান্টনমেন্ট সংলগ্ন শালবাগান প্রফেসর পাড়ায় এ টাওয়ার নির্মাণ করা হচ্ছে। এ টাওয়ার অপসারণ করতে স্থানীয় বাসিন্দারা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।

২০১৯ সালে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে মোবাইল ফোনের টাওয়ার অপসারণে ১১ দফা নির্দেশনা সম্বলিত হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। আদালতের ওই রাযের তোয়াক্কা না করেই এ মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইডটকো নামের একটি কোম্পানি ওই এলাকার বাসিন্দা প্রফেসর ওবাইদুল হকের চারতলা বাসার ছাদে মোবাইল টাওয়ার স্থাপনের কাজ শুরু করে। এরই মধ্যে টাওয়ারের ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ঘনবসতিপূর্ণ স্পর্শকাতর ওই এলাকায় মোবাইল কোম্পানির টাওয়ার স্থাপন যেন না করা হয় সেজন্য স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ওই কোম্পানির পরিচালক ও প্রফেসর ওবাইদুল হকের বিরুদ্ধে রাজশাহী সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে স্থানীয় বাসিন্দাদের পক্ষে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন ইসমত আরা। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর আদালত শুনানির তারিখ ধার্য করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদী পক্ষের আইনজীবী কামারুজ্জামান ইরান।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিজিবি ক্যাম্প, একটি স্কুল, একটি মসজিদসহ ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকায় কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই মোটা অঙ্কের অর্থনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে নিজ বাড়িতে ক্ষতিকর মোবাইল ফোনের টাওয়ার স্থাপনে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন প্রফেসর ওবাইদুল হক।

গত দুই বছর ধরে স্থানীয়দের বাধার মুখে বারবার কাজ স্থগিত করেছেন। এমনকি টাওয়ার স্থাপন করা হবে না বলেও স্থানীয়দের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু আবারও কাজ শুরু করেছেন। ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।

এলাকাবাসির দাবি, স্পর্শকাতর এলাকায় টাওয়ার স্থাপন করা হচ্ছে- অথচ পরিবেশ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট কোনো দফরতই এবিষয়ে অবগত নয়। এই টাওয়ার স্থাপন হলে রেডিয়েশনের ক্ষতিকর প্রভাবে এলাকার মানুষের হৃদরোগ, ক্যান্সারসহ শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন ঝুঁকি তৈরি হবে যা বিশেষজ্ঞদের একাধিক গবেষণায়ও উঠে এসেছে। নিজ এলাকায় এমন আত্মঘাতি টাওয়ার মেনে নেবেন না বলেও জানান স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে ওই বাড়ির মালিক প্রফেসর ওবাইদুল হক বলেন, ওই কোম্পানি প্রশাসনিকসহ অন্য দিক ম্যানেজ করে নিয়ম-নীতি মেনেই তার বাড়ি পছন্দ করেছেন বলে তার সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন। তিনি শুধু বার্ষিক ১ লাখ ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে টাওয়ার স্থাপনের জন্য জায়গা দিয়েছেন। এখন স্থানীয়রা ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে মামলা করেছেন। আবার টাওয়ার করতে না দিলে কোম্পানিও মামলার হুমকি দিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমি সমস্যার মধ্যে আছি।

এ বিষয়ে ইডটকোর সাব-কন্ট্রাক্টর ইঞ্জিনিয়ার সোহেল মুরাদ বলেন, সারাদেশে ইডটকোর টাওয়ার নির্মাণের ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি রয়েছে। রাজশাহী সিটি করপোরেশন ও পরিবেশ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্টরা এ টাওয়ার স্থাপন সম্পর্কে জানে। এই মামলা প্রতিহিংসামূলক। তিনি বলেন, কেউ মামলা করলে কোম্পানিও তার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। এতে ওই ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।

টাওয়ার স্থাপন সম্পর্কে রাজশাহী পরিবেশ অধিদফতরের উপপরিচালক মাহমুদা পারভীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি কোনো কিছুই জানি না। এ সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখব। যথাযথ প্রক্রিয়া না মেনে মোবাইল ফোন টাওয়ার নির্মাণ করা হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ১৭ অক্টোবর হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে মোবাইল টাওয়ার অপসারণে ১১ দফা নির্দেশনা সম্বলিত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন। যেখানে মোবাইল টাওয়ার বাসার ছাদ, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, ক্লিনিক, কারাগার, খেলার মাঠ, জনবসতি এলাকা, হেরিটেজ ও প্রত্মতাত্ত্বিক এলাকায় না বসানো এবং যেগুলো বসানো হয়েছে তা অপসারণের জন্য বলা হয়। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট অথরিটিকে আদালতের আদেশ এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে আরও গবেষণা করে রিপোর্ট দিতেও বলা হয়েছিল।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]