স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সরকার নতুন আইন করছে। কারণ ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই এটি বিক্রি ও সেবন করছে সবাই। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অ্যান্টিবায়োটিকের যত্রতত্র ব্যবহার রোধে করণীয় বিষয়ে ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের প্যাকেটে লাল রং দিয়ে শতর্ক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিশ্বে নীরব মহামারি হয়ে দেখা দিয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক।
ব্রিফিংয়ে সফলভাবে মহামারি করোনা মোকাবিলার পর সরকার দেশের স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে মনোযোগী হয়েছে এমন দাবি করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য সরকার সচেষ্ট। আমরা দেশের ৯৮ শতাংশ মানুষকে করোনার টিকা দিতে সক্ষম হয়েছি। কাজেই কোভিড-১৯ থেকে দেশ এখন অনেক সুরক্ষিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও পৃথিবীর বিভিন্ন সংস্থা আমাদের প্রশংসা করছে। এখন স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়াতে হবে।
এ সময় তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়াতে ভালো হাসপাতাল প্রয়োজন। ভালো ওষুধ প্রয়োজন। উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি খাদ্য ব্যবস্থাও হতে হবে স্বাস্থ্যসম্মত।
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার নিয়ে তিনি বলেন, রোগীদের নিয়মমাফিক চিকিৎসা দিতে হবে, যত্রতত্র অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণে পৃথিবীতে বছরে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশেও বিপুল সংখ্যক মানুষ জটিল জটিল রোগে তার কর্মক্ষমতা হারাচ্ছেন। তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে সুস্থ করে তুলতে কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। যেখানে মানুষ অল্প চিকিৎসায় ভালো হয়ে যেতেন, এখন সেখানে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমেও তাদের রোগ ভালো করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে অনেক রোগী মৃত্যুর মুখে পড়ছেন। এখন এর কারণ বের করতে হবে।
জাহিদ মালেক আরও বলেন, আমরা দেখেছি যে, চিকিৎসকের কোনো ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই আমরা অ্যান্টিবায়োটিক খাচ্ছি। আবার অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার সময় তার কোর্স শেষ করি না। অর্থাৎ কোর্স শেষ না করেই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া বাদ দিয়ে দিচ্ছি। রোগ থেকে একটু সেরে উঠলেই ওষুধ আর খাই না। ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার নিয়ম পৃথিবীর কোথাও নেই।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া দুনিয়ার কোথাও ফার্মেসি থেকে কাউকে ওষুধ দেয় না। কিন্তু বাংলাদেশে এমন নিয়ম মানা হচ্ছে না। প্রেসক্রিপশন ছাড়াই লোকজন অ্যান্টিবায়োটিক কিনতে পারছেন। এতে দীর্ঘমেয়াদে জনস্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়ছে।
যে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন নেই তাও ব্যবহার করা হচ্ছে জানিয়ে জাহিদ মালেক জানান, অল্প ক্ষমতাসম্পন্ন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে যেখানে সেরে ওঠা সম্ভব হয়, যেখানে উচ্চমাত্রারটা ব্যবহার করা হচ্ছে। জনস্বাস্থ্যের জন্য এটি একটি বড় সমস্যা।
যত্রতত্র অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার প্রতিরোধে মানুষের মধ্যে সচেতনা বাড়াতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণকে জানাতে হবে যে যত্রতত্র অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যাবে না। খাওয়ার আগে চিকিৎসকের কাছ থেকে ব্যবস্থাপত্র নিতে হবে। যে কোনো একজন লোক বলল, আর আমরা অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে ফেললাম, তা করা যাবে না। এখন তদারকি বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, যেসব ফার্মেসির লাইসেন্স থাকবে না, তারা ওষুধ বিক্রি করতে পারবে না। লাইসেন্স পাওয়ার পর যেসব বিধিবিধান রয়েছে, সেগুলো না মানলে ফার্মেসি বন্ধ করে দেয়া হবে। আর বিনা ব্যবস্থাপত্রে কোনো ফার্মেসি যাতে ওষুধ বিক্রি করতে না পারে, তা নিশ্চিত করা হবে। অ্যান্টিবায়োটিক চেনার জন্য, সতর্ক করার জন্য মোড়কে লাল রঙ দিয়ে দেয়া হবে।
সবাই মিলে কাজ করলে অ্যান্টিবায়োটিকের নীরব যে মহামারি হচ্ছে তা বন্ধ করা যাবে--এ মন্তব্য করে জাহিদ মালেক বলেন, পাশাপাশি যদি আমরা সংক্রমণ কমিয়ে আনতে পারি, খাবার যদি স্বাস্থ্যসম্মত হয়, বসতবাড়ি পরিচ্ছন্ন রাখি, হাসপাতাল-অফিস যদি পরিষ্কার রাখি, তাহলে সংক্রমণ কম হবে। অসুস্থ কম হব। আর এটা না হলে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হবে না। আমরা চাই, অ্যান্টিবায়োটিকের যাচ্ছেতাই ব্যবহার বন্ধ হোক।