২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৭:৫৭:৫০ পূর্বাহ্ন


ঐতিহাসিক ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ এর পিছনের কিছু দ্বন্দ্ব!
বিনোদন ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-১০-২০২২
ঐতিহাসিক ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ এর পিছনের কিছু দ্বন্দ্ব! ফাইল ফটো


বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তহবিল গঠন করার প্রয়াসে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ নামে কনসার্টের আয়োজন করেন জর্জ হ্যারিসন। সাবেক ব্যান্ডমেট রিঙ্গোস্টার, জন লেনন আর পল ম্যাকার্টনিকেও গান গাওয়ার নিমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তিনি। এর মাত্র এক বছর আগেই বিটলস ভেঙে যায়, ব্যান্ড ভাঙনের রেশ কাটেনি তখনো, চলছিল আইনি লড়াইও।

ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বকে দূরে ঠেলে কনসার্টে অংশ নিতে রাজি হন রিঙ্গোস্টার, তবে না করে দিয়েছিলেন জন আর ম্যাকার্টনি।ওটা হতে পারতো বিটলস পুনর্মিলনী।

বাংলাদেশে জন্য তহবিল সংগ্রহে বিখ্যাত তারকাদের মঞ্চে আনার চেষ্টা করেছিলেন হ্যারিসন। তিনি জানতেন, ওই কনসার্টের মঞ্চে বিটলসের পুনর্মিলনী হলে বাধভাঙ্গা সাড়া পাওয়া যেত। 


হিয়ার কাম দ্য সান: জর্জ হ্যারিসনের আধ্যাত্মিক ও সঙ্গীত যাত্রায় জোশুয়া এম গ্রিন লিখেছেন, "জর্জ লস অ্যাঞ্জেলেসে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে সঙ্গীত অঙ্গনের প্রথম চ্যারিটি রক কনসার্টের যোগাড়-যন্ত্র শুরু করেন৷ তিনি জুনের শেষ দিকটা আর জুলাইয়ের প্রথম দিকে ফোন কল করেই কাটিয়েছেন, সংকটকালীন সময়ে বিশ্বের সেরা রক শিল্পীদের একত্র করতে রাজি করান"।

এরিক ক্ল্যাপটন, বিলি প্রেসটোন, লিওন রাসেল ও বব ডিলান ছাড়াও, জর্জ চেয়েছিলেন যাতে বিটলস পারফর্ম করে। সেই সময়টাতেই প্রিয় ব্যান্ডের সব সদস্যদের একসাথে দেখতে মুখিয়ে ছিলেন ভক্তরাও। তবে রাজি হননি বাকিরা। রিঙ্গোস্টার প্রস্তাব শুনেই রাজি হয়ে যান, ব্লাইন্ডম্যানের ফিল্মিংও পিছিয়েছিলেন একারণে। তখন নিউইয়র্কে থাকতেন জন লেনন, তিনি তার স্ত্রী ইয়োকো ওনোকে কনসার্টে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। তবে এতেই রাজি হননি জর্জ হ্যারিসন। 

গ্রিন লিখেছিলেন, "জর্জ এতে রাজি হননি। তাদের মধ্যে কিছু উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ও হয়"। যদিও তারপরও স্ত্রীকে ছাড়াই কনসার্টে অংশ নিতে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন জন। ইয়োকো ওনো তা জানার পরেই তার সাথে জনের বিরাট ঝগড়া ও মনোমালিন্যের গুঞ্জনও শোণা গিয়েছিল। 

পরে অবশ্য জন বলেছিলেন, বিটলসের বিজনেস ম্যানেজার অ্যালেন ক্লেইন এ গুজব ছড়ান, আর ক্লেইনের জন্যই কনসার্টে অংশ নেননি তিনি।


পল ম্যাকার্টনি কেন অংশ নেননি

পল ম্যাকার্টনি ও জর্জ হ্যারিসনের মধ্যে সে সময় চলমান আইনি লড়াইয়ের কথা চিন্তা করে কনসার্টে অংশ নেওয়া উচিৎ হবে মনে করেননি পল। 

এ নিয়ে গ্রিন লিখেছিলেন, "পলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল জর্জ। তবে বিটলস ব্যান্ড ভাঙ্গার জন্য পলের বিরুদ্ধে করা পাল্টা মামলা উঠিয়ে নিলেই তিনি যাবেন বলে জানিয়েছিলেন। জর্জ তা মেনে নেননি, পলও আসেননি।" তবে পারফর্ম না করার আরেকটি কারণও ছিল পলের। অ্যালান ক্লেইনও পলের না যাওয়ার কারণ


কনসার্টের বছর পল মেলোডি মেকারস ক্রিস চার্লসওর্থকে  বলেন,  "আমাকে নিউইয়র্কের কনসার্ট ফর বাংলাদেশে নিমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তবে আমি যাইনি। ক্লেইন তখন সংবাদ সম্মেলন ডেকে বলেছিলেন, আমি পাকিস্তানি শরণার্থীদের জন্য আমি যাইনি।" এভাবেই সম্বোধন করেছিলেন তিনি।

"বিষয়টা এমন ছিল না। আমি যাইনি কারণ পুরো বিশ্ব মিডিয়ায় আলোড়ন শুরু হবে বিটলস এক হয়ে গিয়েছে বলে। আমি জানি ক্লেইন এতে অনেক খুশি হতেন। এটা ঐতিহাসিক ঘটনা হতো, এর কৃতিত্ব নিতেন ক্লেইন। হয়তো ক্লেইন না থাকলে আমি আরেকবার চিন্তা করে দেখতাম, যদিও বলা যায় না কী হতো।" 


১৯৭০ সালে ক্লেইনকে বিটলসের বিজনেস ম্যানেজার বানানোর পর ব্যান্ডের চুক্তি বাতিল করতে চেয়ে মামলা করেন পল। নিজের শশুর ও শ্যালক ম্যানেজার হোক তা চেয়েছিলেন পল। তবে এতে রাজি হননি বাকিরা। 

যদিও পরবর্তীতে ব্যান্ডের অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বিটলসের জন্য দুর্দশার নাম হয়েই থাকে ক্লেইন। তবে, ততোদিনে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। আর কখনো পুনর্মিলনের সুযোগ পায়নি বিটলস। তবে, ক্লেপটন আর পেটি বয়েডের বিয়েতে কাছাকাছি এসেছিলেন তারা।

পল মনে করেছিলেন কনসার্ট ফর বাংলাদেশে না গাইবার উপযুক্ত কারণ ছিল তার, হয়তো ছিলোও। তবে, আবার অন্যান্য সমস্যা দূরে রেখে সমর্থন না দেওয়ার হতাশ হয়েছিলেন জর্জ। আর কখনোই সম্পর্ক জোড়া লাগেনি তাদের।