২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার, ০৭:২৮:৩২ অপরাহ্ন


শর্ত ভঙ্গ করে বিষ দিয়ে দিঘির মাছ নিধন- বইছে সমালোচনার ঝড়
স্টাফ রিপোর্টার, বাঘা:
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-১০-২০২২
শর্ত ভঙ্গ করে বিষ দিয়ে দিঘির মাছ নিধন- বইছে সমালোচনার ঝড় শর্ত ভঙ্গ করে বিষ দিয়ে দিঘির মাছ নিধন- বইছে সমালোচনার ঝড়


রাজশাহীর বাঘা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী  দিঘিতে ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে বিষ প্রয়োগের মাধ‍্যমে মাছ নিধনের অভিযোগ উঠেছে ইজারাদারের বিরুদ্ধে। শনিবার রাতের যে কোন সময়ে  এ বিষ প্রয়োগ করা হয় বলে জানিয়েছেন মাজার কর্তৃপক্ষ।

রোববার (৩০ অক্টোবর) সকালের আগেই  ভাসমান মাছ পানি থেকে উঠিয়ে নেয়। পরে স্থানীয়রা মাছ ধরতে দিঘীতে হুমড়ি খেয়ে পড়লে বিষয়টি ব‍্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় উপজেলাজুড়ে বইছে সমালোচনার ঝড় । 

জানা গেছে, বাঘা হযরত শাহ দৌলা (রঃ) মাজার ওয়াকফ এস্টেট বাঘা, রাজশাহীর অধিভূক্ত প্রায় ৫২বিঘা আয়তনের  দিঘির মাছ বিক্রির জন‍্য  বাঘা মাজার ওয়াকফ এস্টেটের কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক  উপজেলা নির্বাহী অফিসার, (ইউএনও) শারমিন আখতার গত ৩০/০৫/২০২ ‍তারিখে দিঘির মাছ বিক্রয়ের নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। উক্ত  বিজ্ঞপ্তিতে মাছের সর্বনিম্ন মূল‍্য নির্ধারণ করা হয় ৫৫ লাখ।  ডাকে অংশগ্রহন করে 

ওয়াহেদ সাদিক কবির  সর্বোচ্চ ডাককারি হিসেবে ৫৫,৫৬,০০০( পঞ্চান্ন লাখ ছাপান্নো  হাজার )টাকায় মাছ ক্রয় করেন।

০৩ (তিন) মাসের মধ‍্যে  শর্ত সাপেক্ষে

দিঘীর মাছ  ধরার লক্ষ্যে ইজারাদার কবির ও মুহাম্মদ শরিফুল হক, 

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)রাজশাহী'র সঙ্গে  তিনশত টাকার( নন জুডিশিয়াল )স্ট‍্যাম্পে চুক্তিনামা সম্পাদিত হয়। যার মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৩ নভেম্বর।

কিন্তু উক্ত চুক্তিনামার ২ নং শর্ত ভঙ্গ করে ইজারাদার  রাতের আঁধারে দিঘির পানিতে বিষ প্রয়োগ করেন। এতে দিঘির প্রায় সব মাছ মরে যায়। রুই, কাতলা, মৃগেল,চিতল,খলি,বাইম নাইলেটিকাসহ বিভন্ন প্রজাতির দেশি ও কার্প জাতীয় মাছ ছিল। এ নিয়ে এলাকায় ব‍্যাপক সমালোচনার ঝড় বইছে। ক্ষোভে ফুঁসছে উপজেলাবাসি। কিন্তু ভয়ে তারা মুখ খুলতে পারছেননা।


এ বিষয়ে বাঘা ওয়াকফ স্টেটের মোতওয়াল্লী( রইস) খন্দকার মুনসুরুরল ইসলাম বলেন, রাতে বিষ প্রয়োগের সংবাদ পেয়ে ইউএনও স‍্যারের নাম্বারে কল করি। সকালে  অফিসে গিয়ে বিষয়টি অবগত করেছি। 


এ বিষয়ে ইজারাদার কবিরের ব‍্যবহৃত মুঠোফোনে   একাধিকবার কল করলেও কলটি রিসিভ না করায় পরে তার কর্মস্থলে গিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ইজারা নিয়েছি মাত্র।  কিন্ত যা কিছু করার সব দায়িত্ব মামুন হোসেনের। তিনিই এ ব‍্যাপারে বলতে পারবেন। তবে, বিষ দেয়ার বিষয়টি পুরোপুরি সঠিক নয়। শুধুমাত্র পানিতে অক্সিজেনের প্রবাহ কমাতে কিছু মেডিসিন প্রয়োগ করা হতে পারে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয়রা পানিতে নেমে মরা মাছ শিকার করছেন। কেউ বাইম,কেউ রূই, কেউ মৃগেল মাছ পেয়ে আনন্দে ভাসছেন।

এদিকে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় নিধনকৃত মাছ খেলে মারাত্মক স্বাস্থ‍্যহানি ঘটতে পারে। এছাড়াও বিষ প্রয়োগকরা পানিতে গোসলের কারনে চর্মরোগেও আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ‍্য কর্মকর্তা ডা. আশাদুজ্জামান আসাদ।


বিষ প্রয়োগের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) শারমিন আখতারের মুঠোফোনে বারংবার  (বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর তিনটা)

কল করলেও কলটি রিসিভ না হওয়ায় তাঁর বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

তবে,মুঠোফোনে  অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)রাজশাহী শরিফুল হক এ বিষয়ে বলেন, বিষয়টি আপনার মাধ‍্যমে অবগত হলাম।  খোঁজ নিয়ে সত‍্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব‍্যবস্থা নেয়া হবে।

স্থানীয়রা জানান, এই দিঘি একটি ঐতিহাসিক দিঘি। এটি ৫০০ বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বহন করছে। এর প্রাকৃতিক সুন্দর্য উপভোগ করতে  প্রতিদিন  হাজারো দর্শনার্থীর ভিড়ে মুখরিত হয়।

প্রসঙ্গত, রাজশাহী মহানগরী থেকে ৫০কিলোমিটার পূর্বে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বাঘা উপজেলা সদরে অবস্থিত প্রাচীন এই দিঘি । বাংলার স্বাধীন সুলতান আলাউদ্দীন হুসাইন শাহের ছেলে নাসির উদ্দীন নসরত শাহ হিজরি ৯৩০ ও ১৫২৩-২৪ খ্রিষ্টাব্দ বাঘা শাহী মসজিদ নির্মাণের সময় জনকল্যাণার্থে দীঘিটি খনন করেন। ৫২ বিঘা জমি জুড়ে দর্শনীয় বিখ্যাত সুবিশাল দীঘির সঙ্গে  রয়েছে  ৫০০ বছরের ঐতিহাসিক বাঘা শাহী মসজিদ ও মাজার।

জনশ্রুতি আছে, কোনো এক সময়ে অতিথি আপ্যায়নের জন্য  এই জনপদের মানুষ দীঘির কিনারে গেলে ডেকসি, থালাবাসন প্রভৃতি পানির নিচ থেকে ভেসে উঠত। সেগুলো নিয়ে অতিথি আপ্যায়ন শেষে আবার দীঘিতে রেখে যেত। একদা কোনো এক ব্যক্তি ওই সব জিনিস ফেরত না দেয়ার ফলে ভেসে ওঠা বন্ধ হয়ে যায়। কথিত আছে, এই দিঘির পানির উছিলায় বিভিন্ন বালা মুছিবত দূর হয়। ফলে দুর দুরান্ত থেকে এসে  হাজার হাজার মানুষ দীঘি থেকে পানি নিয়ে যান।