১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৭:৫৪:১৮ অপরাহ্ন


রাজনীতির পঞ্চাশ বছরে ফুলেল ভালোবাসায় সিক্ত হলেন বাদশা
স্টাফ রিপোর্টার :
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-১১-২০২২
রাজনীতির পঞ্চাশ বছরে ফুলেল ভালোবাসায় সিক্ত হলেন বাদশা রাজনীতির পঞ্চাশ বছরে ফুলেল ভালোবাসায় সিক্ত হলেন বাদশা


জীবনের সত্তর ও রাজনীতির পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে রাজশাহীতে হাজারো মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাকসুর সাবেক ভিপি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলে হোসেন বাদশা এমপি।

শনিবার বিকাল ৩টায় তাকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ফজলে হোসেন বাদশার বাল্যকাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত বিভিন্ন ছবি দিয়ে সাজানো হয় পুরো অনুষ্ঠানস্থল। বাদশা সেখানে উপস্থিত হলে আদিবাসী নারীরা তাকে সাংস্কৃতিক নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে স্বাগত জানান।

পরে রাজশাহীর শতাধিক স্কুল-কলেজ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ গণমাধ্যমকর্মীরা ফজলে হোসেন বাদশাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। আবেগ ও ভালোবাসায় সবার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বাদশা। এসময় রাজশাহীর বিশিষ্টজনরা বাদশার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতিচারণ করে মূল্যবান বক্তব্য রাখেন।

বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক সনৎ কুমার সাহা বলেন, ফজলে হোসেন বাদশা আমার ছাত্র ছিলেন। নিজের ছাত্র যখন ভবিষ্যতে গিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়, দেশের নাম উজ্জ্বল করে; তখন শিক্ষক হিসেবে তা অত্যন্ত গর্বের। আমি বাদশাকে নিয়ে গর্ব করি। একই ধারায় টানা পঞ্চাশ বছর রাজনীতিতে সক্রিয়তা শক্তিশালী চেতনা ও আদর্শের পরিচয় বহন করে। ফজলে হোসেন বাদশা কখনোই তাঁর আদর্শ থেকে তিল পরিমাণ বিচ্যুত হননি। তাঁর একনিষ্ঠ দেশপ্রেম ও সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন ভবিষ্যত তরুণ প্রজন্মের অনন্য অনুপ্রেরণা।

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আলম বলেন, রাজশাহীর প্রতিটি প্রগতিশীল আন্দোলন-সংগ্রামে ফজলে হোসেন বাদশা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। শুধু রাজনীতিই নয়, রাজশাহীকে শিক্ষা নগরীতে পরিণত করতেও তাঁর অবদান স্মরণীয়। শিক্ষাক্ষেত্রে তার পরামর্শ ও পরিশ্রমের কথা আমাদের কাছে অজানা নয়। যতদিন রাজশাহী থাকবে, ততদিন ফজলে হোসেন বাদশাকে সাধারণ মানুষ পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে।

ভাষাসৈনিক মোশাররফ হোসেন আকুঞ্জি বলেন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মূল আকাঙ্ক্ষা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। ফজলে হোসেন বাদশা এখন জাতীয় রাজনীতিক। রাজনীতিতে তাঁর পঞ্চাশ বছর; শুধুমাত্র কোন সংখ্যা নয়, একটি সুদীর্ঘ পরিক্রমা। তিনি নিজে যেমন লড়েছেন, লড়াই শিখিয়েওছেন। এদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের জন্য ফজলে হোসেন বাদশা পঞ্চাশ বছর

লড়েছেন। এটি চুড়ান্তভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনে তিনি আরও পঞ্চাশ বছর লড়বেন বলে প্রত্যাশা করি। 

বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আব্দুল হাদী বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই ফজলে হোসেন বাদশা গণমানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে রাজনীতি করেছেন। কখনো কৃষক শ্রমিক ও মেহনতি মানুষ, আবার কখনো আদিবাসী, পিছিয়ে পড়া ক্ষুদ্র নিগোষ্ঠীদের সাথে মিশে গেছেন অনায়াশে। রাজশাহীর মানুষ ও সাবেক জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাঁকে নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি।

অনুষ্ঠানের শেষ প্রান্তে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষাই সেদিন আমাকে মুক্তিযুদ্ধের যাওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিল। আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের বিনিময়ে কখনোই কিছু প্রত্যাশা করিনি। চেয়েছি শুধুমাত্র একটি সমতাভিত্তিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রতিষ্ঠিত সুখী সমৃদ্ধশালী দেশ। যা এখনো পুরোপুরি ভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। এটি বাস্তবায়নে এখনো আমাদের লড়াই চলমান। যতদিন বেঁচে থাকবো, এই লড়াইও চলমান থাকবে। আজকের দিনে রাজশাহীর মানুষ আমাকে যেভাবে স্মরণ করেছে, তা আমার আজীবনের জন্য একটি বড় প্রাপ্তি।

নিজের রাজনীতি নিয়ে বলতে গিয়ে দেশের অন্যতম বর্ষিয়ান এই রাজনীতিক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েই আমার রাজনীতি শুরু। আজকেও সেই চেতনার ওপরেই দাঁড়িয়ে আছি। এই চেতনা যদি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে এই সরকারের বিরুদ্ধে কখনোই কেউ উঠে দাঁড়াতে পারবে না। কিন্তু আমরা বাহাত্তরের সংবিধানসহ অনেক চেতনাবোধ থেকে সরে গেছি। যারা মুক্তিযুদ্ধকে বিশ্বাস করেন, জাতীয় সংগীত, জাতীয় পকাতাকে গ্রহণ করেন; তারা অবশ্যই বাহাত্তরের সংবিধান ও তা পাশ করার সময় সংসদে বঙ্গবন্ধুর সেদিনের ভাষণটি অধ্যায়ন করবেন। পড়ে দেখবেন, আমরা এখন যা করছি, আর বঙ্গবন্ধু যা বলে গেছেন; তা এক কী নয়। বাহাত্তরের সংবিধান যদি বাস্তবায়ন হতো, তাহলে বাংলাদেশ অবশ্যই নায্যতা-সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারতো। 

যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ ‘ছিনতাই’ হয়ে গেছে মন্তব্য করে রাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, রাষ্ট্রটি এক শ্রেণির লুটেরা গোষ্ঠীর কাছে ছিনতাই হয়ে গেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশকে এগিয়ে যখন অক্লান্ত শ্রম দিচ্ছেন, তখন লুটেরারা লুটপাট করতে ব্যস্ত। জাতির জনক প্রত্যাশা করেছিলেন, বাংলাদেশ একটি বৈষম্যহীন সমাজ হবে। সাধারণ মানুষের স্বার্থ সবার আগে রক্ষিত হবে। কিন্তু সেদিনের প্রত্যাশা আর আজকের বাস্তবতা পুরোপুরি ভিন্ন। যে আদর্শ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে গেছিলাম, সেই আদর্শ নিয়েই আছি। তার ভিত্তিতেই রাজনীতি করছি। ছাত্রজীবন থেকে মানুষের জন্য বলে গেছি, যতদিন বেঁচে থাকবো; মানুষের স্বার্থের জন্যই বলে যাবো। দীর্ঘ এই পথচলায় অনেক কিছু করার সুযোগ ছিল, কিন্তু করিনি। দেশকে ভালোবেসেছি। দেশকে ভালোবাসলে লুটেরা হওয়া সম্ভব নয়।  

সাবেক ছাত্রনেতা মনজুর মোরশেদ হাসান চুন্নার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিনিয়র সাংবাদিক মুস্তাফিজুর রহমান খান আলম। এসময় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-১ সরিফুল ইসলাম বাবু, নারীনেত্রী অধ্যাপিকা তসলিমা খাতুনসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের অধ্যক্ষ, ছাত্র-শিক্ষক, রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।