২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৫:১৭:৫৩ অপরাহ্ন


জীবনরসিক হুমায়ূন আহমেদের আজকে জন্মদিন
তামান্না হাবিব নিশু:
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-১১-২০২২
জীবনরসিক হুমায়ূন আহমেদের আজকে জন্মদিন ফাইল ফটো


'দুনিয়াতে খুব অল্প কিছু মানুষ আছে, যারা আসলেই আলাদা। সারা জীবনেও তারা কারও আপন হতে পারে না; তাদের কেউই বুঝে না। তাদের সব থেকেও আসলে শূন্যতা ছাড়া তাদের কিছুই থাকে না। তারা একা আসে, একা ঘুরে, একাই থাকে, একাই চলে যায়!' সত্যিই কি তাই?

কঠিন জীবনবোধের নানা দিক সেই সাথে মানব মনের রসায়ন যখন দূরদৃষ্টিতে এক সত্যকে তুলে ধরে , তখন সেই সত্য হয়ে উঠে চিরন্তন এক আপ্তবাক্য। জীবনরসিক হুমায়ূন আহমেদের বলা কথাগুলো কি তবে আমাদের গভীর জীবনবোধের অঙ্গ হয়ে ওঠেছে?

গল্পের জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ…যিনি গল্পের জাদুতে আবিষ্ট করে রেখেছেন কয়েক প্রজন্মের পাঠকদের! পৃথিবীতে না থেকেও তার  উপস্থিতি জ্বলজ্বল করছে বাংলাদেশের সাহিত্যের আকাশে। বিংশ শতাব্দীর বাঙালি লেখকদের মধ্যে তিনি দখল করে আছেন অন্যতম স্থান। তিনি একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার ও নাট্যকার এ মানুষটিকে বলা হয় বাংলা সায়েন্স ফিকশনের পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেও তিনি বেশ সমাদৃত। বাদ যায়নি গীতিকার কিংবা চিত্রশিল্পীর পরিচয়ও। সৃজনশীলতার প্রতিটি শাখায় ছিল তার সমান বিচরণ। অর্জন করেছেন সর্বোচ্চ সফলতা এবং তুমুল জনপ্রিয়তা।

স্বাধীনতা পরবর্তী বাঙালি জাতিকে হুমায়ূন আহমেদ উপহার দিয়েছেন তার অসামান্য বই, নাটক ও চলচ্চিত্র। তার নির্মিত অসাধারণ চলচ্চিত্রের বদৌলতে সাধারণ দর্শক হয়েছেন হলমুখী, তৈরি করে গেছেন অগণিত পাঠকশ্রেণিও। তার নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র 'আগুনের পরশমণি' দেখতে দর্শকদের ঢল নামে। এছাড়া শ্যামল ছায়া, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, ঘেটুপুত্র কমলাসহ অসংখ্য সিনেমা চলচ্চিত্রবোদ্ধা ও দর্শকদের কাছ থেকেও পেয়েছে প্রশংসা ।

অনন্য কীর্তি হিসেবে আছে তার প্রায় সব নাটকই। এইসব দিনরাত্রি, বহুব্রীহি, আজ রবিবার, কোথাও কেউ নেই, অয়োময়ো আজও রয়েছে দর্শকমনে। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের জনক তিনি। রচনা করেছেন নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার, জোছনা ও জননীর গল্পের মতো সব মাস্টারপিস। শিশুতোষ গ্রন্থ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রচনা, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী মিলিয়ে হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের পাঠক বিশ্বে ছড়িয়ে আছে।

এছাড়া হুমায়ূন আহমেদের বই অনূদিত হয়েছে সমগ্র পৃথিবীর নানা ভাষায়। সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্জন করেছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), একুশে পদক (১৯৯৪), হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), মাইকেল মধুসূদন দত্ত পুরস্কার (১৯৮৭), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮), শিশু একাডেমী পুরস্কার, জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদকসহ নানা সম্মাননা।

১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে, নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলায় কুতুবপুরে পীরবংশে জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ূন আহমেদ। দীর্ঘদিন কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন থাকার পর নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের বেলভ্যু হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাকে সমাহিত করা হয়েছে গাজীপুরে তার প্রিয় নুহাশ পল্লীতে।

হুমায়ূন আহমেদ সমগ্র বাংলা সাহিত্যের পাশাপাশি মানবজীবনের অঙ্গনে তৈরি করে গেছেন জীবন রসগ্রাহী এক ভাবসত্যকে। তার উক্তিগুলো পাঠকসমাজের চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে একেবারে মণিমুক্তোর মতো । তিনি বেঁচে আছেন...বেঁচে থাকবেন আজীবন পাঠক ও দর্শক হৃদয়ে!