রাজশাহীতে থানায় অভিযোগ করার জেরে সেলিনা পারভিন ও উম্মে হানুসহ এক যুবককে কুপিয়ে যখম করে সন্ত্রাসীরা।
সোমবার (১৪ নভেম্বর) জমি বিরোধের জেরে রাজপাড়া থানাধীন চন্ডিপুরে শরিফুজ্জামানের বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেলিনা পারভীন রাজপাড়া থানায় একটি অভিযোগ করেন।
মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) সেলিনা পারভীনকে আনুমানিক বেলা সাড়ে ১২টার সময় সন্ত্রাসীরা ও পুলিশ কর্মকমর্তা অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। এ সময় তিনি অভিযোগ তুলে নিতে রাজি না হওয়ায় আনুমানিক আড়াইটার সময় সন্ত্রাসী শামীম, টনি, সানি, মনি, সজীবসহ আরো ১০ জন মিলে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এলাকায় শোডাউন করতে থাকে। এ সময় সেলিনা পারভিন তার ভাইয়ের বাড়ি বাবর আলীর বাসার সামনে অবস্থান করছিল। সন্ত্রাসীরা জানতে পেরে সেলিনা পারভিনকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করে, তিনি যখন তাদের দেখতে পারে তখন তার ভাইয়ের বাড়িতে ভয়ে ঢুকে পড়ে ও মেইন দরজা লাগিয়ে দেয়। তখন সন্ত্রাসীরা বাড়ির দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে পাসলি দিয়ে সেলিনা পারভীনকে (৪০) এলোপাথারিভাবে কোপাতে থাকে, তার আরেক বড় বোন উম্মে হানুকে পাসলি দিয়ে মাথায় যখম করে ও বাবার আলীসহ পরিবারে বাকি সদস্যদের রড ও লাঠিসোটা দিয়ে পিটিয়ে পালিয়ে যায়।
এ সময় বাবর আলী ৯৯৯ সাহায্যের জন্য কল দিলে ৯৯৯ থেকে তাকে থানায় যেয়ে অভিযোগ দিতে বলে।
বাবার আলী বলেন, আমরা ইতিমধ্যে সোমবারেও (১৪ নভেম্বর) থানায় অভিযোগ করেছি, এরই জের ধরে আজকে (১৫ নভেম্বর) আবার আমাদের ওপর আক্রমন করেছে। আমাদের দয়া করে সাহায্যে করুন।
বাবার আলী অরো বলেন, ৯৯৯ এ কল দেওয়ার আধাঘন্টা পর পুলিশ আসে, যেখানে থানার ও বাড়ির দূরত্ব মাত্র ৫ মিনিটের।
বাবার আলী তার ভাগনে শেখ সনিকে কল দিয়ে বাড়িতে দ্রুত আসতে বললে তাকেও পথে পথরোধ করে সন্ত্রাসী টনি, সানি, মনি এলোপাথারিভাবে রড দিয়ে মাথায় ও পিঠে মারতে থাকে। এসময় এলাকাবাসিরা শেখ সানি, সেলিনা পারভিন ও বড় বোনকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সেলিনা পারভিন গুরুতর আহত অবস্থায় নিউরোসার্জারী বিভাগে, শেখ সানি ও বড় বোন উম্মে হানু ৮ নম্বার ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন।
শেখ সানির মাথায় ৭টা সেলাই, উম্মে হানুর মাথায় ৫টা সেলাই ও সেলিনা পারভীনের পিঠে প্রায় ১১ ইঞ্চির মতো যখম হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।
সেলিনা পারভিনের আহত অবস্থায় সাংবিকদের জানান, সোমবারের ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হলেও থানা থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বরং আমাদের মীমাংসার জন্য চাপ দেওয়া হয়। এবং এক এসআই বলেন আপনারা মীমাংসা করে নিবেন নাকি আমরা থানায় মীমাংসা করে দেব। তিনি আরো জানান, আজকে আমি মেডিকেলে ভর্তি এর একমাত্র কারণ পুলিশ। তারা যথাসময়ে ব্যবস্থা নিলে হয়তো আমাদের এমন করুণ অবস্থা হতো না।
এ সময় রাজপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সিদ্দিকুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি ইতোমধ্যে ঘটনাটি জানতে পেরেছেন, মামলার প্রস্তুতি চলছে। অতিদ্রুতই আসামিদের গ্রেফতার করা হবে।
তবে ওসি সিদ্দিকুর রহমানকে সোমবারে (১৪ নভেম্বর) জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেছেন, ঘটনাটির খবর পাওয়া মাত্র পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িতদের শনাক্ত করেছে। তাদের অচিরেই আইনের আওতায় আনা হবে।
উল্লেখ্য সন্ত্রাসীরা সেলিনা পারভিন ও তার পরিবারকে চাপ দেওয়ার প্রায় ১ ঘন্টা পরই এমন নৃশংস ঘটনা ঘটেছে।