২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ০৭:০৫:১১ অপরাহ্ন


মৃত্যুর আগে কোন সময় পর্যন্ত তওবা করা যাবে?
ধর্ম ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-১১-২০২২
মৃত্যুর আগে কোন সময় পর্যন্ত তওবা করা যাবে? ফাইল ফটো


আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল তওবা। আল্লাহ ক্ষমাশীল। তিনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। আর ক্ষমা পাওয়ার মাধ্যম হচ্ছে তওবা। মানুষ তওবা করলে মহান আল্লাহ খুব খুশি হন। এমনটি ভাবার অবকাশ নেই যে, জীবনভর গুনাহ করেছি, এখন তওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করবেন কিনা? এমনটি না ভেবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তিনি বান্দাকে ক্ষমা করবেন। কিন্তু মৃত্যুর আগে কোন সময় পর্যন্ত তওবা করা যাবে? এ সম্পর্কে ইসলামের দিকনির্দেশনা কী?

আল্লাহ তাআলা মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বান্দার সমস্ত তওবাই গ্রহণ করবেন। নবীজি (সা.) এরশাদ করেন, 'মৃত্যুর যন্ত্রণা শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা বান্দার তওবা কবুল করেন। হাদিসে পাক এসেছে-

হজরত আবু আবদুর রহমান আবদুল্লাহ ইবনে ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা মৃত্যুর নির্দশন প্রকাশের আগ পর্যন্ত বান্দার তাওবা কবুল করে থাকেন। (তিরমিজি)

তবে মানুষের যখন মৃত্যুর গড়গড়া শুরু হয়ে যায় অর্থাৎ বনি আদমের যখন মওতের টান এসে যায় এবং মালাকুল মাওতকে চোখের সামনে উপস্থিত দেখতে পায় তখন তার জন্য তওবার সুযোগ শেষ হয়ে যায়। এ সময় তাওবা করলেও কোন কাজ হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন-

إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِنْ قَرِيبٍ فَأُوْلَئِكَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ

‘অবশ্যই আল্লাহ তাদের তাওবা কবুল করবেন যারা ভুল বশতঃ মন্দকাজ করে, এরপর অনতিবিলম্বে তওবা করে, এরাই হলো সে সব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১৭)

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন-

إِنَّ اللَّهَ يَقْبَلُ تَوْبَةَ الْعَبْدِ مَا لَمْ يُغَرْغِرْ

‘আল্লাহ তাআলা বান্দার তাওবা ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করেন, যতক্ষণ না তার মৃত্যুর গড়গড়ানী শুরু হয়।’ (তিরমিজি)

আর বান্দা যখন মালাকুল মাওতের ভয়াবহ চেহারা দেখবে, তার রূহ বক্ষদেশ থেকে বের হয়ে কন্ঠণালীতে পৌঁছে যাবে এবং মরণের গড়গড়ানী শুরু হবে ও প্রাণ বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে, তখন কোনো প্রকার তওবা কবুল হবে না এবং মৃত্যু হতে পলায়নের কোনো সুযোগও থাকবে না। আল্লাহ্ তাআলা বলেন-

وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّى إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الآنَ

‘আর তাদের জন্য ক্ষমা নেই, যারা ঐ পর্যন্ত পাপ করতে থাকে যখন তাদের কারো কাছে মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয়ই আমি এখন তাওবা করছি।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১৮)

সাহাবিগণ এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে-

পাপ কাজে লিপ্ত প্রত্যেক ব্যক্তিই জাহেল তথা অজ্ঞ। চাই সে পাপ কাজ করার সময় হারাম জেনে ইচ্ছাকৃতভাবে পাপ কাজে লিপ্ত হোক বা না জেনে এবং অনিচ্ছাকৃতভাবে লিপ্ত হোক। যেহেতু মূর্খতা বশতঃ মানুষ পাপ কাজে লিপ্ত হয়ে থাকে, তাই মৃত্যুর অল্প সময় পূর্বে এবং মওতের আলামত প্রকাশিত হওয়ার আগে যদি তওবা করে তখন তার তাওবা কবুল হবে। এ ক্ষেত্রে মৃত্যুর কয়েক বছর আগে তওবা করা আর কয়েক মিনিট আগে তওবা করা একই কথা। কারণ মৃত্যুর আগে যা কিছু হবে, তা মৃত্যুর অতি কাছাকাছি সময়েই হয়েছে বলে ধরতে হবে। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন-

إِنَّ اللَّهَ يَقْبَلُ تَوْبَةَ الْعَبْدِ مَا لَمْ يُغَرْغِرْ

‘আল্লাহ্ তাআলা বান্দার তাওবা ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করেন, যতক্ষণ না তার মৃত্যুর গড়গড়ানী শুরু হয়।’ (তিরমিজি)

তওবা মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক মহা নিয়ামাত। এ নিয়ামাতকে কাজে লাগানো প্রত্যেক বুদ্ধিমান ঈমানদারের কাজ।

আল্লাহ তাআলা উম্মাতে মুসলিমাকে কোরআন-সুন্নাহর উপদেশ অনুযায়ী বাস্তব জীবনে তওবার আমল করে পরিশুদ্ধ হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।