২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ০৩:১৪:৫১ পূর্বাহ্ন


ফুটবলের প্রেমে এক হাজার রূপ কাতার শহরের
সুমাইয়া তাবাসুম:
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-১১-২০২২
ফুটবলের প্রেমে এক হাজার রূপ কাতার শহরের ফুটবলের প্রেমে এক হাজার রূপ কাতার শহরের


কাতার শহর কি প্রাণহীন! মধ্যপ্রাচ্যের এই শহরে দু’সপ্তাহ থেকে বারবার মনে হয়েছে কংক্রিটের জঙ্গলে হারিয়ে যাচ্ছি। শুধু আকাশছোঁয়া বাড়ি। এখানে বাড়িগুলিতে কোনও ব্যালকনি নেই। সাদা, ফ্যাকাসে খয়েরি রঙের বাড়িগুলির ডিজাইন একইরকম। এখানে যে সিমেন্ট ও ইট দিয়ে বাড়িগুলি তৈরি করা হয়, সেগুলি তাপ নিরোধক।

কাতার শহরের মূল আকর্ষণ মেট্রো রেল। এখানে মেট্রো যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্যের কথা ভেবে তৈরি করা হয়েছে। এখানে উন্নত পরিষেবা আগে, তারপর সবকিছু। স্টেশন ও রাস্তাঘাট এতটাই পরিষ্কার যে লজেন্সের প্যাকেট পড়ে থাকলেও দূর থেকে দেখা যায়।

ট্যাক্সি রয়েছে, কিন্তু কাতারে উবার চালকদের রমরমা। চালকদের অধিকাংশই প্রায় বাংলাদেশী বা কেরলের। কেউ আবার পাকিস্তানেরও বাসিন্দা। কেউ ১০ বছর আগে, কেউ বা তারও বেশি সময় ধরে কাতারে রয়েছেন। পরিবার থাকে দেশে, উবার চালক ঘর ভাড়া নিয়ে দোহায় থাকেন। ঘর ভাড়া প্রতি জনে মাসে ১২০০ থেকে ২৫০০ কাতারি রিয়াল পর্যন্ত রয়েছে। প্রতি রিয়াল ভারতীয় মূল্যে ২৩টাকা।

কাতারে থেকে কখনও কখনও মনে হচ্ছে যেন বাংলাদেশের ঢাকায় রয়েছি। উবারে উঠে বসতে গেলেই চালক বলে উঠছেন, কি মশাই, কোথায় যাবেন? সেইসময় চমকে উঠতে হয়। পালটা প্রশ্ন করলে বলে বসছেন, ‘‘দাদা, আমার তো নিবাস ঢাকার রাজশাহী এলাকায়।’’ বেশিরভাগ চালকই কেরলের। সেদিন রিমেশ নামে এক কেরালিয়ান চালক বলছিলেন, কাতারে কোনও জীবন নেই। সারাদিন গাড়ি চালিয়ে রাতে বাড়ি ফিরি। রাতে শুয়ে সকাল হলে ব্রেকফাস্ট সেরে ফের বেরিয়ে পড়ি। রাতে ফিরে ভিডিও কলে কথা বলি দেশের লোকদের সঙ্গে। এখানে এসেছি পয়সা রোজগারের জন্য।’’

রিমেশের মতো সেদিন আদনান নামে এক চালকও জানালেন, গাড়ি চালিয়ে দিনে ৫০০-৮০০ কাতারি রিয়াল আয় হয়। তার মানে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১১ হাজার টাকার মতো। কাতারে দীর্ঘদিন বাস করা সংবাদমাধ্যমের আধিকারিক আমিনুল ইসলাম বলছিলেন, কাতারে কেরলের বাসিন্দারা অনেক ধনী। তাঁরা ব্যবসা করেন এই দেশে এসে। অনেক মলেরও মালিক তাঁরা। বাংলাদেশীরা আসেন গাড়ি চালকের ভূমিকায় কাজ করবেন বলে। পাশাপাশি ফ্রিজ, রেফ্রিজারেটারের মেকানিকও হন তাঁরা।

আমিনুল বলছিলেন, ‘‘আফ্রিকা মহাদেশের কেনিয়া, নাইজেরিয়া, ক্যামেরুনের বাসিন্দারা বেশি মেট্রো রেলের কর্মী। কিংবা কাতারের রাস্তায় ট্র্যাফিক পুলিশের কাজ করে থাকে। কারণ আফ্রিকা মহাদেশের মানুষরা খুব কষ্টসহিষ্ণু, তাঁরা অনেকবেশি কর্মঠ, তাই প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা ডিউটি করতে পারেন।

আমাদের এখানে মিডিয়া সেন্টারগুলিতেও সাফাই কর্মী সব আফ্রিকার মেয়েরা। তাঁরা নিজেদের কাজের বিষয়ে সদা সতর্ক, ব্যবহারও খুব আন্তরিক। তাই বিদেশে এসেও মানুষদের ভালবাসা আদায় করে নিয়েছেন।