২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১০:০৬:১৬ অপরাহ্ন


সরিষা চাষের ভরা মৌসুমে সারের সংকটে গাইবান্ধার চাষিরা
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-১২-২০২২
সরিষা চাষের ভরা মৌসুমে সারের সংকটে গাইবান্ধার চাষিরা ফাইল ফটো


সরিষা চাষের ভরা মৌসুমে ইউরিয়া সারের সংকটে বিপাকে পড়েছেন গাইবান্ধার বিভিন্ন এলাকার চাষিরা। ডিলারদের কাছে পাওয়া যাচ্ছে না ইউরিয়া সার। এমনকি কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে অনেক ডিলার সাধারণ কৃষকদের কাছে বেশি দামে সার বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে কৃষি বিভাগের দাবি পর্যাপ্ত সার মজুত রয়েছে।

জানা যায়, প্রতি বছর জেলা জুড়ে নিম্মঅঞ্চলের অনেক এলাকায় ব্যাপক ভাবে সরিষার চাষ হয়। কিন্তু সরিষা চাষের ভরা মৌসুমে ইউরিয়া না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন সরিষা চাষিরা। জমিতে সার দিতে না পারায় অনেকের সরিষা গাছ হলুদ বর্ণ ধারণ করছে। এতে কাঙ্ক্ষিত ফলন নিয়ে শঙ্কায় সরিষা চাষিরা।

জেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর ১২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও পরে তা বাড়িয়ে ১৫ হাজার করা হয়। এরমধ্যে ১১ হাজার ৭৮৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের রথের বাজার এলাকার কৃষক সাইদুর রহমান বলেন, দেড় বিঘা জমিতে ২০ কেজি ইউরিয়া সারের প্রয়োজন। কিন্তু বারবার ডিলারের কাছে গিয়েও সার পাইনি। বাধ্য হয়ে ২২ টাকা কেজির সার ৩০ টাকা কেজি দরে কিনেছি। পরে ২০ কেজির স্থলে ১০ কেজি প্রয়োগ করছেন নির্ধারিত সময়ের পর। তাই ফলন নিয়ে শঙ্কায় আছি।

সাইদুর রহমানের মতো একই অভিযোগ ওই এলাকার সরিষা চাষি রুপম মিয়া, আনছার আলী, সুধিরাম চন্দ্র, আমিনুল হকসহ অন্যান্য কৃষকদের।

ওই এলাকার কৃষক রুপম মিয়া বলেন, সাত বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। এই সাত বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করতে খরচ হয়েছে ত্রিশ হাজার টাকার মতো। কিন্তু জমিতে ইউরিয়া সার দিতে পারছি না। কয়েকটা ডিলারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু ডিলাররা বলেন সার নাই, কয়েকদিন পরে পাবেন। তবে স্থানীয় এক ডিলার আছেন সে বিক্রি করছে ত্রিশ টাকা কেজি দরে।

তিনি জানান, আমি বারি-৯ সরিষার আবাদ করেছি। যদি সঠিক সময়ে সার পেতাম বিঘা প্রতি কমপক্ষে ছয় মন সরিষা হতো। এখন সরিষা ফলন পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি।

একই এলাকার কৃষক সুধিরাম চন্দ্র (৪৬) বলেন, ৪০ শতক জমিতে সরিষা আবাদ করেছি। কিন্তু সার পাইনি। সার না পেয়ে পাঁচ কেজি সার ধার করেছি। যেখানে সার দেওয়া লাগতো ২০ কেজি সেখানে ৫ কেজি দিলে কি আর আবাদ আসবে? ডিলারদের ঘরে ঘরে গিয়ে খুঁজে আসছি। গেলেই বলে সার নাই।

খুচরা সার বিক্রেতা মেসার্স হামিদা ট্রেডার্স গেলে দোকান বন্ধ পাওয়া যায়। দোকানের মালিক নাজমুল হুদা টিটুলের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এব্যাপারে সদর উপজেলার ডিলার মেসার্স লতিফ হক্কানীর ম্যানেজার মিলন মিয়া বলেন, ইউরিয়া সার বরাদ্দ না দিলে আমরা কি করবো। গতমাসে ২২ টন সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেগুলো আমরা কৃষকের মধ্যে বিতরণ করেছি। তা দিয়ে কৃষকরা সরিষা আবাদ করেছে। এখন সরিষার গাছ গজিয়েছে এসময় তো সারের দরকার। কিন্তু আমাদের এখনো পর্যন্ত বরাদ্দ দেননি অফিস। এখানে আমাদের কি করার আছে?

এদিকে কৃষকদের অভিযোগ অস্বীকার করে, জেলায় পর্যাপ্ত ইউরিয়া সারের মজুত রয়েছে বলে জানান গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বেলাল উদ্দিন জানান, কেউ অতিরিক্ত দাম ও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

খোলাহাটি ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মোস্তফা জামান মিন্টু জানান, সারের ব্যাপারে অভিযোগ নিয়ে আমাদের কাছে কেউ আসেনি। আমরা তো জানি সারের কোনো সংকট নেই। তারপরও আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো। যদি এমন হয় তবে সরাসরি ইউএনও ও ডিসিকে জানিয়ে কৃষকদের সার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।