২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ০২:১৯:০৯ পূর্বাহ্ন


ভারতে শিক্ষকের মানসিক নির্যাতনে রুয়েট শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার অভিযোগ
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০২-২০২২
ভারতে শিক্ষকের মানসিক নির্যাতনে রুয়েট শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার অভিযোগ ফাইল ফটো


বৃত্তি নিয়ে ভারতে পড়তে গিয়ে মারা গেছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) এক শিক্ষার্থী। সহপাঠীদের অভিযোগ,  শিক্ষকের মানসিক নিপীড়নের কারণে আত্মহত্যা করেছেন তিনি। সৌরভ সেন (২০) নামে ওই শিক্ষার্থী রুয়েটের স্থাপত্যবিদ্যার দ্বিতীয় বর্ষে থাকা অবস্থায় ভারতে যান।

জানা গেছে, ভারত সরকারের স্কলারশিপ পেয়ে তামিলনাড়ু রাজ্যের তিরুচাপল্লির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এনআইটি) কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়তে যান সৌরভ। গত ৮ জানুয়ারি হোস্টেলে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। সৌরভের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার সাইনবোর্ড বাজারে। তাঁর বাবার নাম দিলীপ কুমার সেন। 

পরিবার এবং রুয়েটের সহপাঠীরা অভিযোগ করছেন, একজন জুনিয়র শিক্ষকের মানসিক নিপীড়নের শিকার হয়ে এই শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রুয়েটের সহপাঠীরা গতকাল বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার সঞ্জিব কুমার ভাটির কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

এতে বলা হয়েছে, সহকারী অধ্যাপক ড. আর বালাকৃষ্ণান একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৌরভ সেনকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিয়েছেন। সহকারী হাইকমিশনার সঞ্জিব কুমার ভাটি অভিযোগটি গ্রহণ করে যথাযথ মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দেবেন বলে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেছেন।

সৌরভের ছোট বোন প্রমা সেন বলেন, ‘ইংরেজিতে সৌরভের দক্ষতা ছিল ঈর্ষণীয়। এনআইটি-ট্রিচিতে বি. টেক প্রথম সেমিস্টারে সৌরভ ১০-এ ৮ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট পেয়ে বিভাগে দ্বিতীয় স্থান দখল করেন। গত ২৭ ডিসেম্বর থেকে দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষা শুরু হয়। ৮ জানুয়ারি দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ছিল শেষ পরীক্ষা।’ সৌরভ প্রমাকে জানিয়েছিলেন, পরীক্ষা খুব ভালো হয়েছে। আর সে জন্যই একটা সমস্যা হয়েছে। সৌরভ নির্ধারিত সময়ের কয়েক মিনিট আগে উত্তর লিখে শেষ করেন। এটা দেখে সহকারী অধ্যাপক আর বালাকৃষ্ণান সন্দেহ করেন, সৌরভ নকল করেছেন।

সৌরভ তাঁর শিক্ষককে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু বালাকৃষ্ণান তা মানতে চাননি। সৌরভ পরীক্ষা শেষে আবারও বালাকৃষ্ণানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বোঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। বালাকৃষ্ণান তাঁকে হুমকি দেন বৃত্তি বাতিলের। তাঁর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণেরও ভয় দেখানো হয়। চার বছরের মধ্যে তাঁকে কোনোভাবেই বি. টেক পাস করতে দেবেন না বলেও ওই শিক্ষক হুমকি দেন। এতে সৌরভ মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এর জেরেই পরে আত্মহত্যার করেন।

সহপাঠী ও পরিবারের সদস্যরা জানান, ৮ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে হতাশ হয়ে সৌরভ নিজ হোস্টেলে ফেরেন। তারপর আর রুম থেকে বের হননি। গভীর রাতে কক্ষের দরজা ভেঙে সৌরভের মরদেহ উদ্ধার করে থুভাকুড়ি জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরদিন সেখানেই মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়। এর পর দিন তামিলনাড়ুর থুভাকুড়ি থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এরপর ১২ জানুয়ারি একটি ফ্লাইটে সৌরভের মরদেহ বাংলাদেশে আসে। পারিবারিক শ্মশানেই তাঁর শেষকৃত্য হয়। ছেলেকে হারিয়ে মা বুলা রানী সেন শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। 

রুয়েটে সৌরভ সেনের সহপাঠী আদিব হোসেন ধ্রুব বলেন, ‘সৌরভ মেধাবী ও পরিশ্রমী ছেলে ছিল। শিক্ষক বালাকৃষ্ণানের কারণে একটি মেধাবী প্রাণ ঝরে গেল। এটা মেনে নেওয়া যায় না।’

রাজশাহীর সময় /এএইচ