২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৪:৫৩:০১ পূর্বাহ্ন


যাদের কেউ ডাকে না তারাই হন বাংলাদেশের কোচ!
ক্রীড়া ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০২-২০২৩
যাদের কেউ ডাকে না তারাই হন বাংলাদেশের কোচ! ফাইল ফটো


বাংলাদেশের ক্রিকেট যেন প্রাচীন ধ্যান-ধারণার কোচদের পুনর্বাসন কেন্দ্র। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যারা কোথাও জায়গা পান না, তাদের জায়গা হয় বাংলাদেশ ক্রিকেটে। জেমি সিডন্স থেকে হাথুরুসিংহে–বাংলাদেশের চাকরি ছাড়ার পর কোথাও কোনো সুবিধা করতে পারেননি তারা। না নিজ দেশ, না অন্য কোনো জায়গায়; আধুনিক ক্রিকেটের কোথাও ছিল না তাদের খবর।

আধুনিক ক্রিকেটে সবাই ঝুঁকছে নিজ দেশের সাবেক ক্রিকেটার কিংবা টেকনিক্যালি সাউন্ড কোচদের দিকে। আধুনিক ক্রিকেটের লড়াইয়ে টিকে থাকতে সবাই নিয়ে আসছেন নিজস্ব স্টাইল এবং সিগনেচার কিছু মুভ। নিউজিল্যান্ডের ব্রেন্ডন ম্যাককালামের কথাই ধরা যাক। ইংল্যান্ডের কোচ হয়ে টেস্ট ক্রিকেটের ধারণাই বদলে দিয়েছেন সাবেক এই বিস্ফোরক ব্যাটার। বাজবল নামের নিজস্ব দর্শনের ক্রিকেট দিয়ে আমূল বদলে দিয়েছেন ধুঁকতে থাকা ইংলিশদের। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেট যেন চিরদিনই পেছনের দিকে হাঁটাদের দলে। 

বৈশ্বিক ক্রিকেট এগিয়ে যাচ্ছে তরতর করে। নতুন ভাবধারার কোচিং স্টাফ থেকে অনুশীলনের ধরনেও যেখানে আসছে নানা পরিবর্তন, সেখানে বিসিবি পড়ে আছে মান্ধাতার আমলের চিন্তাচেতনা নিয়ে। এখনও বাংলাদেশের কর্তাদের কাছে ক্রিকেটার ফ্রেন্ডলি নয়; বরং হেডমাস্টার মানসিকতার মানুষগুলোই পছন্দের তালিকার শীর্ষে।

একটা সময় মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা বলেছিলেন, দেশের কোচিং স্টাফদের দিকে তাকালে মনে হয় এটা যেন দক্ষিণ আফ্রিকার নবিশ কোচদের মিলনমেলা। সে সময় হেড কোচ, বোলিং, ফিল্ডিং, ব্যাটিং সবখানেই যেন প্রোটিয়ারা। তবে সে ধারা থেকে বের হয়ে এলেও এখন অবস্থা আরও বেগতিক।

ব্যাটিং কোচ হিসেবে দুনিয়ার তাবৎ দেশের বাঘা বাঘা ক্রিকেটার থাকলেও, বিসিবির পছন্দের তালিকায় ছিলেন ১০ বছর ধরে আধুনিক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিকেট থেকে নির্বাসনে থাকা জেমি সিডন্স। তার যোগ্যতার মাপকাঠি ছিল ২০০৭ থেকে বাংলাদেশের হেড কোচ থাকাকালীন আজকের তামিম-সাকিবদের সঙ্গে ভালো কাজ করা। শেষ পর্যন্ত তাকেই নিয়ে আসা হয় টাইগারদের ব্যাটিং ঠিক করতে। তবে এতদিন ধরে থেকেও কোনো পরিবর্তনই করতে পারেননি এই অস্ট্রেলিয়ান।

বাংলাদেশের দায়িত্ব ছেড়ে নিউজিল্যান্ডের এক রাজ্য দলের দায়িত্বে ছিলেন সিডন্স। সেখানে তার মূল কাজ ছিল বয়সভিত্তিক ক্রিকেটারদের নিয়ে কৌশলগত পরিকল্পনা, নেতৃত্ব, ব্যাটিং এবং ফিল্ডিংয়ের টিউশন দেয়া। কচিকাঁচার আসর থেকে উঠিয়ে এনে বিসিবি তাকে দায়িত্ব দেয় বিশ্বকাপের। ফলাফল, এক শান্ত ছাড়া কারো ব্যাটই কথা বলেনি আশানুরূপভাবে।

আর প্রধান কোচ খুঁজতে গিয়ে তো বিসিবি রীতিমতো বিশাল এক নাটকই মঞ্চস্থ করে ফেলল। মুখে মুখে রাসেল ডমিঙ্গোকে নিয়ে প্রশংসার ফুলঝুরি ছোটালেও বিশ্বকাপ চলাকালীনই হাথুরুর সঙ্গে সবকিছু চূড়ান্ত করে ফেলে তারা। সেখানে দুই বছরের জন্য তিন ফরম্যাটের দায়িত্ব দেয়া হয় সাবেক এই কোচকে।

২০১৭-তে বিসিবিকে অপমান করে চাকরি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন এই লঙ্কান। তারপর নিজ দেশে কিছুদিন দায়িত্বে থাকলেও সেখান থেকে বিতাড়িত হন বাজে পারফরম্যান্স এবং একগুঁয়ে স্বভাবের জন্য। পরে অস্ট্রেলিয়ার রাজ্যদল নিউ সাউথ ওয়েলসের সহকারী কোচ হিসেবে ছিলেন এতদিন। কিন্তু সেখানেও তার পারফরম্যান্স গড়পড়তা। তার দায়িত্ব নেয়ার পর এই মৌসুমে শেফিল্ড শিল্ড এবং ওয়ানডে টুর্নামেন্টে টেবিলের সবার নিচে থেকে শেষ করেছে নিউ সাউথ ওয়েলস।

কিন্তু তারপরও কেন যেন অদ্ভূত কোনো কারণে এ সময়ের চেয়ে পিছিয়ে পড়া কোচরাই বিসিবির পছন্দের তালিকার শীর্ষে।