২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০৮:৫০:৩১ পূর্বাহ্ন


অনির্বাচিত সরকারের সময় ক্ষতি হয় দেশের মানুষের
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০২-২০২৩
অনির্বাচিত সরকারের সময় ক্ষতি হয় দেশের মানুষের ফাইল ফটো


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য যাঁরা একটি অনির্বাচিত সরকারের পক্ষে কথা বলছেন, তাঁদের নিন্দা জানিয়ে ২০০৭-২০০৮ সময়কালে এমন সরকারের কাছ থেকে কারা লাভবান হয়েছিলেন, তা ভাবতে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘২০০৭-২০০৮ সালে একটি অনির্বাচিত সরকার (বাংলাদেশে) ছিল এবং এতে কার কী লাভ হয়েছিল? বরং অশুদ্ধ হয়েছিল দেশের সংবিধান। ক্ষতি হয়েছিল দেশের মানুষের জীবনমানের।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বুধবার বিকেলে রাজধানীর বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী ‘অমর একুশে বইমেলা-২০২৩’ উদ্বোধনকালে দেওয়া প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে (তথাকথিত) খুব জ্ঞানী বিজ্ঞানী আছেন। তাঁদের কাছে আবার এটাও শুনলাম দুই-চার বছরের জন্য যদি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসে তাহলেও তো আর মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘কাজেই আপনারা বুঝতে পারেন কারা বলতে পারে? ২০০৭-২০০৮ সালে তো অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় ছিল, কার কী লাভ হয়েছিল? কারণ কিছু এগাছের ছাল ওগাছের বাকল নিয়ে একটা দল করার চেষ্টা, এ দল সে দল থেকে ভিড়িয়ে দল করার চেষ্টা, আমরা রাজনীতিবিদরা সব খারাপ, আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে জেলে ভরা হলো এবং কিছু সুযোগসন্ধানী তখন মাথা তুলে দাঁড়াল এবং কিংস পার্টি গঠনসহ বিভিন্ন রকম প্রচেষ্টা চালাল।’ প্রধানমন্ত্রী এর উত্তরে বলেন, ‘মহাভারত অশুদ্ধ হবে না এটা ঠিক। কিন্তু অশুদ্ধ হবে আমাদের সংবিধান। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীনতা এবং এর আট মাসের মাথায় জাতির পিতা আমাদের দিয়েছিলেন এই সংবিধান। আর অশুদ্ধ হবে বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান। কারণ ওই দুই বছরের অভিজ্ঞতা যদি একটু স্মরণ করেন, তখন ব্যবসা-বাণিজ্য, সহিত্যচর্চা, অর্থনৈতিক অবস্থা সবই বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। একটা বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয় যখন, তখন সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই নির্বাচনে বিএনপি ৩০টি আসনে এবং বাকি আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট বিজয়ী হয়। এরপর থেকে জনগণের জন্য কাজ করে জনগণের সমর্থন নিয়েই আওয়ামী লীগ এ পর্যন্ত ক্ষমতায় রয়েছে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে এবং প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুরও বক্তব্য দেন।

বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মহাপরিচালক মোহাম্মদ নুরুল হুদা। আরো বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন।

অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত সাতটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। যার মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পাদিত শেখ মুজিবুর রহমান রচনাবলি-১, কারাগারের রোজনামচা পাঠ বিশ্লেষণ, অসমাপ্ত আত্মজীবনী পাঠ বিশ্লেষণ ও আমার দেখা নয়াচীন পাঠ বিশ্লেষণ; রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ রচিত ‘আমার জীবন নীতি, আমার রাজনীতি’ এবং জেলা সাহিত্য মেলা ২০২২ (১ম খণ্ড)।

এ ছাড়া বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২২ প্রাপ্ত ১৫ জন কবি, লেখক ও গবেষকের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন ফারুক মাহমুদ ও তারিক সুজাত (যৌথভাবে কবিতায়), তাপস মজুমদার ও পারভেজ হোসেন (যৌথভাবে কথাসাহিত্যে), মাসুদুজ্জামান (প্রবন্ধ/গবেষণায়), আলম খোরশেদ (অনুবাদ), মিলন কান্তি দে এবং ফরিদ আহমদ দুলাল (যৌথভাবে নাটকে), ধ্রুব এষ (কিশোর সাহিত্য), মুহাম্মদ শামসুল হক (মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা), সুভাষ সিংহ রায় (বঙ্গবন্ধুর ওপর গবেষণা), মোকারম হোসেন (বিজ্ঞান/বিজ্ঞান কথাসাহিত্য/পরিবেশ বিজ্ঞান), ইকতিয়ার চৌধুরী (জীবনী/স্মৃতিকার/ভ্রমণকাহিনি) এবং আব্দুল খালেক ও মুহাম্মদ আব্দুল জলিল (যৌথভাবে লোককাহিনিতে)।

এর আগে জাতীয়সংগীত এবং অমর একুশের সংগীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ সমবেত কণ্ঠে পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এর পরই সবাই অমর একুশের শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করেন।

উদ্বোধনী স্মারকে স্বাক্ষর করে বইমেলা উদ্বোধনের পর বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা।