২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ০৪:০২:৪০ অপরাহ্ন


ঘুস ছাড়া কাগজ দেন না ভূমি কর্মকর্তা
ইব্রাহিম হোসেন সম্রাট:
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০২-২০২৩
ঘুস ছাড়া কাগজ দেন না ভূমি কর্মকর্তা ঘুস ছাড়া কাগজ দেন না ভূমি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান


দর কষাকষি করে প্রকাশ্যেই ঘুস নেন রাজশাহীর বড়কুঠি মহানগর ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা। গত দুদিন তার দপ্তরে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালে গিয়ে তাকে প্রকাশ্যে ঘুস নিতে দেখা যায়। এই কর্মকর্তার নাম মিজানুর রহমান। মিজানুরের তোলা টাকার ভাগ পান দপ্তরের সবাই। সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে মিজানুরের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বৃহস্পতিবার সকালে মিজানুর রহমানকে দপ্তরে বসেই টাকা নিতে দেখা যায়। প্রথমে এক বৃদ্ধ সেবাগ্রহীতাকে মিজানুরকে ১০০ টাকার কয়েকটি নোট দিতে দেখা যায়।

আবদুল হাকিম নামের ওই ব্যক্তি জানালেন, তার বাড়ি নগরীর উপশহরে। ভূমি অফিসে একটা কাগজ তুলতে এসেছিলেন। অনেক কাগজের মধ্য থেকে তার কাগজ খুঁজে বের করতে সময় লাগলো। তাই পিয়নদের জন্য টাকা দিলেন।

আবদুল হাকিম বলেন, একটা পিয়নকে ১০টা টাকা না দিলে কাজটা করেও দেবে না। তাই দিলাম।

বৃহস্পতিবার সকালে এক তরুণের কাছ থেকে গুণে গুণে দুই হাজার ৫০০ টাকা নিতে দেখা গেল মিজানুর রহমানকে।

টাকা দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে ওই তরুণ বললেন, টাকা হচ্ছে এই কাগজের জন্য। এই কাগজ তুলতেই টাকা দিতে হচ্ছে। নির্ধারিত টাকা না দিলে তিনি কাগজ দেন না। তাই বাধ্য হয়েই টাকা দিতে হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টাকা ছাড়া কোনো কাজই করেন না মিজানুর রহমান। রাখঢাক ছাড়া অফিসে এভাবে প্রকাশ্যেই ঘুস নেন তিনি।

তার বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ তছরুপেরও অভিযোগ আছে। গত বছরের ২২ থেকে ৩১ মে মিজানুরের দপ্তরে হিসাব তত্ত্বাবধায়ক (রাজস্ব) মো. ইসরাইল হোসেন ২০২০-২০২১ অর্থবছরের অডিট করেন। এরপর ২৩ জুন নীরিক্ষা প্রতিবেদন দেন।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বড়কুঠি মহানগর ভূমি অফিসের রেজিস্ট্রার পরীক্ষায় দেখা গেছে প্রকৃত অপেক্ষা কম যোগফল দেখিয়ে সরকারের অর্থ তছরুপ করা হয়েছে। মিজানুর রহমান আত্মসাৎ করেছেন ৩ হাজার ৫০৮ টাকা। এই টাকা তিনি জমা দেননি বলে মন্তব্য করা হয়েছে।

তবে সরকারি অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ থাকলেও মিজানুরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, আমি কারো কাছ থেকে ঘুস নিইনি। খারিজের জন্য টাকা নিয়েছি। এর বেশি কিছু নিইনি।

সরকারি অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তার ডাটা এন্ট্রি অপারেটর শান্তর কাছে ফোন দিয়ে দেন।

তিনি বলেন, স্যার সেই বছর এখানে ছিলেনই না। সুরতাং সরকারি অর্থ আত্মসাতের কোনো কিছু নেই। এই বিষয়ে সামনা সমানি কথা বলেন। স্যার অপানাকে সামনা সামনি কথা বলার অনুরোধ করেছেন। আগামী রোববার আসেন কথা হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বোয়ালিয়া রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহীন মিয়া বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমাকে একজন জানিয়েছেন। আমি অফিসের বাইরে ছিলাম। আগামী রোববার অফিসে গিয়েই আমি অভিযোগগুলো যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।