২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১০:৪৪:৫২ অপরাহ্ন


২১ কোটি টাকা ব্যায়ে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছে আরডিএ ,প্রকল্পে নতুনত্ব নেই তথ্য গোপন ও টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০২-২০২৩
২১ কোটি টাকা ব্যায়ে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছে আরডিএ  ,প্রকল্পে নতুনত্ব নেই তথ্য গোপন ও টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ ২১ কোটি টাকা ব্যায়ে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছে আরডিএ ,প্রকল্পে নতুনত্ব নেই তথ্য গোপন ও টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ


রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) সাড়ে তিন বছর সময় নিয়ে তৈরি করেছে মাস্টার প্ল্যান। রাজশাহীকে এগিয়ে নিতে আগামী ২৪ বছরের জন্য এ মাস্টার প্ল্যান করা হয়েছে। এই মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছে মাস্টার প্ল্যান তৈরিতে কাজ করেছে এডিপিসি, ডেটেক্স, থ্র্যোই নামের দেশি-বিদেশী তিনটি ফার্ম। তবে আগামী ২৪ বছরের রাজশাহীর যে মাস্টার প্ল্যানে তৈরি হয়েছে তাতে বিশেষ কিছু নেই। ২৪ বছর আগে যে বিষয়গুলো ছিল সেটিই পুনরাবৃত্তি করে শুধু মাত্র দু’একটি বিষয় যোগ হয়েছে। বলা যায়, এবার বিশাল বাজেটের মাস্টার প্ল্যানে নেই নতুনত্ব। তারপরও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি আরডিএ’র নগর পরিকল্পনা শাখা।

এই মাস্টার প্ল্যান তৈরিতে যে বাজেট বরাদ্দ হয়েছে সেটি অতিরিক্ত বলে মনে করছে নগরবাসী। একই সাথে মাস্টার প্ল্যান তৈরিতে তথ্য গোপন ও সরকারী টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ রয়েছে। মাস্টার প্ল্যান তৈরিতে বরাদ্দ হয়েছে ২১ কোটি টাকা। আর রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) নগর পরিকল্পনা শাখার পরিকল্পক বলছেন, মাস্টার প্ল্যান তৈরিতে বরাদ্দ ১৮ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের তিন কোটি টাকা নয়ছয়ের পাঁয়তারা করছে আরডিএ-এর পরিকল্পনা শাখা, যে টাকা সরকার ফেতর পাওয়ার কথা।

জানা গেছে, আরডিএ’র ১৭টি জোন নিয়ে করা হয়েছে মাস্টার প্ল্যান। আগামীর রাজশাহী কেমন হবে তা নিয়ে আরডিএ’র নগর পরিকল্পনা শাখা এ মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছে। মাস্টার প্ল্যান তৈরিতে কাজ করেছে এডিপিসি, ডেটেক্স, থ্র্যোই নামে তিনটি ফার্ম। এর আগে গত ২০০৪ সালে ২৪ বছরের জন্য আরডিএ কর্তৃপক্ষ পুরো রাজশাহীর উপর প্ল্যান তৈরি করেছিল। এই প্ল্যানের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর নতুন মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে।

এবারের মাস্টার প্ল্যানে বিশেষত্ব বলতে তেমন কিছু নেই। পূর্বের প্ল্যানে যা ছিল তার সাথে সামান্য কিছু যোগ হয়েছে। এবার মাস্টার প্ল্যানে যোগ হয়েছে দূর্যোগ ব্যাবস্থাপনার বিষয়টি। এরমধ্যে রয়েছে চার ধরনের দূর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সংবেদনশীল, ভূমিকম্প, বন্যা, খরা, অগ্নিনির্বাপণ, ওয়াটার রিজাভ, বড় ভবন তৈরি ক্ষেত্রে অগ্নিনির্বাপণের জন্য রাস্তা। নতুন মাস্টার প্ল্যানে এ কয়টি বিষয় বিশেষত্ব বলা হলেও দেখা গেছে, অগ্নিনির্বাপনের জন্য ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে নিদের্শনা আগের প্ল্যানে ছিল, এবারো তাই রয়েছে। দূর্যোগ ব্যবস্থাপনার মধ্যে ভূমিকম্প এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণ করার ক্ষেত্রে আগে যে নির্দেশনা ছিল, সেখানে ভূমিকম্প প্রবণ এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে করণীয় বিষয় যোগ হয়েছে। অগ্নিকা-ের মত ঘটনায় ফায়ার সর্ভিসের গাড়ি অনায়াসে যেতে পারে সেই পরিমান রাস্তা রেখে ভবন নির্মাণ করতে হবে, যা মাস্টার প্ল্যানে সংযুক্ত হয়েছে। বন্যা বা খরার মত দূর্যোগে কি কি ব্যবস্থা নেয়া যায় সে বিষয়টি আগের প্ল্যানে ছিল, এবার যোগ হয়েছে। আগামী ২৪ বছরের যে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে সেখানে বড় বড় রাস্তা-ঘাট, আগামীর রাজশাহী কেমন হবে, কতটা নিরাপদ হবে, নগরায়ন কেমন হবে, আরডিএ’র পরিধির মধ্যে যে জায়গা আছে সেসব জায়গার রাস্তা-ঘাট, বসতি কেমন হবে তার কিছুই নেই।

জানা যায়, রাজশাহীর মাস্টার প্ল্যানের কাজ শেষ করার কথা ছিল গত ২০২২ সালের জুনে। কিন্তু আরডিএ’র প্ল্যানিং শাখা তা করতে পারেনি। যদিও গত ডিসেম্বরে এই মাস্টার প্ল্যানের কাজ শেষ হয়েছে বলেও জানানো হয়। আর জানুয়ারীর মধ্যে উম্মুক্ত করা হবে বলেও ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু এখনো মাস্টার প্ল্যান উম্মুক্ত হয়নি।

এদিকে, বিশাল অংকের টাকা ব্যয়ে রাজশাহীর মাস্টার প্ল্যান তৈরিতে তথ্য গোপন ও সরকারী টাকা নয়ছয় করার অভিযোগ উঠেছে। আরডিএ’র প্ল্যানিং শাখার মাস্টার প্ল্যান প্রকল্প পরিচালক এ প্রকল্পের মোটা অংকের সরকারী টাকা নয়ছয় করার চেষ্টা করছেন। এ প্রকল্পের বরাদ্দ ২১ কোটি হলেও তথ্য গোপন করে সেটি ১৮ কোটি টাকা প্রচারণা চালানো হয়। এছাড়াও সম্পূর্ন টাকা পরিশোধ করা হলেও এখনো ওই প্রকল্পের অধিনে ব্যাংকে প্রায় ৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা অবশিষ্ট্য পড়ে আছে। সেই টাকা সরকারের কাছে হস্তান্তর না করে নয়ছয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে এমন অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এই মাস্টার প্ল্যান তৈরিতে যে তিনটি প্রতিষ্ঠান কাজ করেছে তাদের বিল পরিশোধ করা হয়েছে। আরডিএ’র নগর পরিকল্পকের বলছেন, কাজের বিল ১৮ কোটি টাকা সম্পূর্ন পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু এই প্রকল্পের ব্যাংকের হিসাব বিবারণীতে (স্টেটমেন্ট) দেখা যায়, ১৮ কোটি টাকার পরও ওই হিসাব নম্বরে এখানো প্রায় ৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা অবশিষ্ট্য রয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো, ১৮ কোটি টাকার কাজ, তাহলে এই তিন কোটি ৫৫ লাখ টাকা কোথা থেকে আসলো ? এমন কি সম্প্রতি আরডিএ’তে তথ্য অডিট করা হয়। পূর্ত-অডিট অধিদপ্তর, সেগুন বাগিচা থেকে এ অডিট করা হয়েছে। সেই অডিট অফিসাররাও এ প্রকল্পের কাগজপত্রে ২১ কোটি টাকাই পেয়েছেন। একই সাথে এখানো ব্যাংকে যে ৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা রয়েছে তার কাগজপত্রও অডিট নিয়ে গেছে।

গূত্রে জানা গেছে, গত জানুয়ারী মাসের ২৯ তারিখ থেকে ৩ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে মাস্টার প্ল্যান প্রকল্পের যে অবশিষ্ট্য টাকা রয়েছে তার কিছু অংশ রেখে কিছু অংশ উত্তোলনের চেষ্টা করেন প্রকল্প পরিচালক আরডিএ’র নগর পরিকল্পক আজমেরি আফসারী। তিনি এই তিন কোটি টাকার মধ্যে ২ কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক করার চেষ্টা করছেন। সেই চেকও করা হয় গত ২০২২ সালের ৩০ জুনের তারিখ দিয়ে। ১৮ কোটি টাকা পরিশোধ করার পর মাস্টার প্ল্যান প্রকল্পের বর্তমান একাউন্টে যে টাকা রয়েছে তা পুরোটাই সরকারের কাছে হস্তান্তর হওয়ার কথা। কিন্তু সেটি না করে ব্যাকডেটে ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা উঠিয়ে বাকি টাকা সরকারের কাছে হস্তান্তর করার চেষ্টা করছেন প্রকল্প পরিচালক, এমন অভিযোগ রয়েছে। আর এই ব্যাকডেটের চেকে সাবেক চেয়ারম্যানকে দিয়ে সাক্ষর করিয়ে নেয়া হবে এমনটাও শোনা যায়।

বিষয়টি নিয়ে আরডিএ’র নগর পরিকল্পক আজমেরি আফসারী বলেন, নতুন মাস্টার প্ল্যান দ্রুত উম্মুক্ত করে দেয়া হবে। তিনি বলেন, রাজশাহীর জন্য যে মাস্টার প্ল্যান হয়েছে তাতে রাজশাহীর চিত্র বদলে যাবে। এ প্রকল্পের ২১ কোটি বরাদ্দের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেন নাই। ওই টাকা উত্তোলনের জন্য ব্যাকডেটের চেক করার ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি চেক লিখি না। আর আমি এ বিষয়ে জানিও না।