২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১২:৪০:৪৯ অপরাহ্ন


চিনে ছাত্রদের শুক্রাণু দানের আর্জি, হাজার হাজার টাকা দিচ্ছে সরকার
রিয়াজ উদ্দিন:
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০২-২০২৩
চিনে ছাত্রদের শুক্রাণু দানের আর্জি, হাজার হাজার টাকা দিচ্ছে সরকার চিনে ছাত্রদের শুক্রাণু দানের আর্জি, হাজার হাজার টাকা দিচ্ছে সরকার


শুক্রাণু দান করলেই বিশাল অঙ্কের টাকা পুরস্কার পাওয়া যাবে। চিনে কলেজ ছাত্রদের শুক্রাণু দান করার আর্জি জানিয়েছে সে দেশের সরকার। উচ্চতা কেমন, কতবার শুক্রাণু দান করা হচ্ছে, সেই অনুযায়ী বাড়বে পুরস্কারের টাকার অঙ্গ। কিন্তু হঠাৎ করে শুক্রাণু দানের আর্জি কেন?

দক্ষিণ-পশ্চিম চিনের ইউনান প্রদেশের স্পার্ম ব্যাঙ্কগুলো সরকারি নির্দেশে কলেজ ছাত্রদের শুক্রাণু দান করার অনুরোধ জানিয়েছে। স্পার্ম ব্যাঙ্কগুলো বিজ্ঞাপন দিয়ে বলেছে, শুক্রাণু দান করলে ছাত্রদের বিশাল অঙ্কের টাকা হাতখরচ দেওয়া হবে। ইউনানের একটি ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, লম্বায় ১৬৫ সেণ্টিমিটারের বেশি (৫ ফুট ৪ ইঞ্চি), ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সি পুরুষদের যদি কোনও রকম সংক্রামক, জিনগত রোগের ইতিহাস না থাকে, তবে তাঁরা শুক্রাণু দেওয়ার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। বিনিময়ে প্রত্যেককে ৪,৫০০ উয়ান অর্থাৎ, ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৫৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে। আর উচ্চতা যদি ১৬৮ সেন্টিমিটারের (৫ ফুট ৫ ইঞ্চি) বেশি হয় তাহলে ৫,০০০ উয়ান বা ৬১ হাজার টাকা দেওয়া হবে।

বেজিং, সাংহাই-এর বেশ কিছু স্পার্ম ব্যাঙ্ক এই বিজ্ঞাপন দিয়েছে। তাদের বক্তব্য, কোভিড পর্ব থেকেই জনসংখ্যা অস্বাভাবিক হারে কমছে দেশে। স্পার্ম ব্যাঙ্কগুলোর ভাঁড়ারও শূন্য। তাই শুক্রাণু দানের আর্জি জানিয়েছে সরকার।

কেন এই শুক্রাণু দানের আর্জি? এত তোড়জোড় চলছেই বা কেন?

 সরকারি পরিসংখ্যান সংস্থা ‘ন্যাশনাল ব্যুরো স্ট্যাটিস্টিকস’ একটি রিপোর্ট সামনে এসেছিল দিনকয়েক আগে। তাতে দেখা গেছে, ২০২২ সালে চিনের জনসংখ্যা গত ৬০ বছরের তুলনায় অনেক কম। এমনকি জন্মহারেও কমতি দেখা গেছে। এর প্রভাব সরাসরি চিনের অর্থনীতির ওপর পড়তে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০২২ সালে চিনের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ৩ শতাংশ। গত চার দশকে যা সবচেয়ে খারাপ। অবশ্য এই পরিসংখ্যানের নেপথ্যে জনসংখ্যার চেয়ে কোভিডের ভূমিকা বেশি। তবে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই হারে চিনের জনসংখ্যা কমতে শুরু করলে অদূর ভবিষ্যতে এটাই হয়ে উঠবে অর্থনৈতিক সংকটের মূল কারণ।

রিপোর্ট বলছে, ১৯৪৯ সালে চিনে যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল, ২০১৯ সালের হিসেবে সেটা অনেকটাই কম। শুধু কম নয়, রীতিমতো উদ্বেগজনক। পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৪৯ সালের পর থেকে চিনে প্রতি হাজার জনে জন্মহার ছিল ১০.৯৪। আর এ বছর প্রতি হাজার জনে জন্মহার ৬.৭৭। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জন্মহারের এই পতন শুরু হয়েছে ১৯৮০ সালের পর থেকে। ১৯৭৯-তে চিনে ‘এক সন্তান নীতি’ চালু হওয়ার পর থেকেই হুড়মুড়িয়ে কমেছে শিশু জন্মের হার।  রিপোর্ট বলছে, এই নিয়ম চালু হওয়ার পর থেকে দেশ জুড়ে দশ লক্ষ পরিবার তাদের একমাত্র উত্তরাধিকারীকে হারিয়েছেন। আগামী ২০-৩০ বছরে আরও ৪০ থেকে ৭০ লক্ষ পরিবারকে এই অবস্থার শিকার হতে হবে। ২০১৬ সালেই ‘এক সন্তান নীতি’ প্রত্যাহার করে দুই সন্তানের অনুমোদন দিয়েছিল চিন। কিন্তু তার পরেও জন্মহারের পতন অব্যাহত। এখন চিনের পার্লামেন্টের সদস্যেরা দাবি করছেন, প্রজননের উপর নিয়ন্ত্রণমুক্তি, অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের জন্য বিশেষ কর-ছাড়, বিনামূল্যে শিক্ষা-স্বাস্থ্যের সুবিধা না বাড়ালে এই অন্ধকার পথের শেষ হবে না।