২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১০:১২:৪৩ অপরাহ্ন


ভুয়া অ্যাপয়েন্টমেন্টে কপাল পুড়ছে ভারতের মেডিকেল ভিসাপ্রত্যাশীদের
রাজশাহীর সময় ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০২-২০২৩
ভুয়া অ্যাপয়েন্টমেন্টে কপাল পুড়ছে ভারতের মেডিকেল ভিসাপ্রত্যাশীদের ফাইল ফটো


অমূল্য কুমার ভারতীয় চিকিৎসা ভিসার জন্য ভেলরের ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজের অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়ে আবেদন করেছেন। চিকিৎসকের সঙ্গে তার সাক্ষাতের তারিখ দেখানো হয়েছে ১৬ ফেব্রুয়ারি। ওই কাগজের কিউআর কোড স্ক্যান করলে নাম দেখায় মুনমুন আক্তার নামের এক নারীর। এটি তালিমনাড়ুর একটি ক্লিনিকের একজন সাধারণ চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট।

শুধুমাত্র অমূল্যই নয়, তাদের মতো আরও অনেকেই দিচ্ছেন ভুয়া অ্যাপয়েন্টমেন্টে। রাজশাহীর ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনারের কার্যালয় থেকে যাচাই করতে গিয়ে এ ধরনের ভুয়া মেডিকেল অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া গেছে।

সহকারী হাই কমিশনারের কার্যালয় সূত্র জানায়, দিন দিন মেডিকেল ভিসার আবেদন বাড়ছে। আগে মোট ভিসার এক তৃতীয়াংশ মেডিকেল ভিসা হলেও এখন সেটি কখনো কখনো প্রায় শতভাগই হচ্ছে। তাই দ্বৈবচয়ন পদ্ধতিতে নমুনা (র্যানডম স্যামপ্লিং) হিসেবে ১০০টি মেডিকেল ভিসার আবেদনকারী কাগজপত্র যাচাই করা হয়। এতে ৫০ জনই ভুয়া প্রমাণিত।

এমন অপকর্মের সঙ্গে দালালের পাশাপাশি ভারতীয় ভিসা অফিসের কর্মকর্তাদেরও জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে দুই দালালকে গ্রেফতার করেছে রাজশাহী মহানগর পুলিশ।

মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) কাগজ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে নাফিজ নামে এক কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে রাজশাহীর ভারতীয় সহকারী হাই কমিশন। একই সঙ্গে বগুড়া ভিসা অফিসের নির্বাহী কর্মকর্তা সবিতা আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কার্যালয়ে ডাকা হয়। একজন মক্কেলের সঙ্গে তার ফোনালাপের রেকর্ড তাকে শোনানো হয়। সেখানে তাকে ভিসার দরদাম করতে শোনা যায়। স্বীকার করেন, তিনি এই ফোনালাপ করেছেন। তার দাবি, ওই ব্যক্তির সঙ্গে একদিনই শুধু কথা বলেছেন।

সম্প্রতি ভুয়া কাগজে ভিসা পেয়ে ভারতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েন ফাতেমা বেগম নামের এক রোগী। ওই হাসপাতালের অ্যাপয়েন্টমেন্টে স্বাক্ষরকারী কর্মকর্তা এবং হাসপাতালের নামও বদল হয়েছে। কিন্তু পুরাতন স্বাক্ষরকারী ও পুরাতন হাসপাতালের নামেই অ্যাপয়েন্টমেন্টের ভিত্তিতে ভিসা ইস্যু করা হয়েছে। ফাতেমার স্বামী ফজলুর রহমান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানান, ঠাকুরগাঁও ভিসা অফিসের পাশে রায় নামের এক ব্যক্তি ১ হাজার টাকার বিনিময়ে এ ধরনের ভুয়া কাগজ বিক্রি করেছেন।

রাজশাহীর ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার মনোজ কুমার বলেন, আমরা ভারতীয় ভিসা সহজকরণ করেছি। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে রাজশাহীতে ট্যুরিস্ট ভিসার পরিবর্তে মেডিকেল ভিসা বেড়ে যাচ্ছিল। আমাদের সন্দেহ হলে সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা যায়, কিছু চক্র এগুলো নিয়ে ব্যবসা করছে। তারা ভুয়া অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার তৈরি করছে। আমরা এগুলো নিয়ে কাজ করছি। এরই মধ্যে জড়িত থাকার অভিযোগে আমার এক কর্মীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা বলতে চাই ভারতীয় ভিসা সহজ করা হয়েছে। এখানে সঠিক তথ্য দিয়ে ভিসা সংগ্রহ করুন। আপনারা কোনো ধরনের প্রতারকের আশ্রয় নেবেন না। সঠিক তথ্য দিয়ে সঠিক ভিসা নেবেন।

এদিকে সোমবার ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালের জাল অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার তৈরির প্রতারক চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় তাদের কাছ থেকে জাল অ্যাপয়েন্টমেন্ট তৈরির কাজে ব্যবহৃত একটি কম্পিউটার, কালার প্রিন্টার ও স্ক্যানার জব্দ করা হয়।

গ্রেফতাররা হলেন- রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার শিরোইল মাস্টারপাড়ার শেখ মো. আবু সাঈদের ছেলে শেখ এনামুল হাসান তাসিন (২০) ও কর্ণহার থানার শিশাপাড়ার ইসরাইলের ছেলে রায়হান কবির (২১)।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রফিকুল আলম বলেন, রাজশাহীতে ভারতীয় ভিসা অফিস সংলগ্ন রহমান লাইফ সলুসান নামক দোকানে অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় তাসিন ও রায়হানকে আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। তারা চার-পাঁচজনের সহায়তায় ভারতীয় ডাক্তারের জাল অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার তৈরি করে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেন। জড়িত বাকিদেরও গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।