২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৬:০২:৪০ অপরাহ্ন


চার আসমানি কিতাব যেসব ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছিল
ধর্ম ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০২-২০২৩
চার আসমানি কিতাব যেসব ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছিল ফাইল ফটো


মহান আল্লাহ যুগে যুগে নবী-রাসুলদের মাধ্যমে অনেক আসমানি কিতাব প্রেরণ করেছেন। সেগুলোর মধ্যে প্রসিদ্ধ কিতাব চারটি। তাওরাত, জাবুর, ইনজিল ও কোরআন। আর সব আসমানি কিতাবের ভাষা একই ছিল না। নিম্নে প্রসিদ্ধ চার আসমানি কিতাবের ভাষা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো—

তাওরাত : মহান আল্লাহ মুসা (আ.)-এর ওপর যে কিতাব নাজিল করেছিলেন তার নাম তাওরাত। ‘তাওরাত’ কিতাবের নাম পবিত্র কোরআনেও উল্লেখ রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তাওরাত অবতীর্ণ করেছি, যাতে আছে পথনির্দেশনা ও আলো। আল্লাহর অনুগত নবীরা তদনুসারে ইহুদিদের পরিচালনা করত এবং খোদাভীরু ও জ্ঞানীরাও। কারণ তাদের আল্লাহর কিতাব সংরক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এবং এ ব্যাপারে তারা সাক্ষী ছিল।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৪৪)

হিব্রু ভাষায় ‘তাওরাত’ শব্দটি শিক্ষা দেওয়া, দিকনির্দেশনা প্রদান বা নীতি প্রণয়ন করার অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেহেতু মুসা (আ.)-এর ভাষা হিব্রু ছিল, তাই তাঁর ওপর নাজিলকৃত কিতাব হিব্রু ভাষায় নাজিল করা হয় এবং তার নাম হিব্রু ভাষায় রাখা হয়। 

জাবুর : জাবুর অর্থ লিপিবদ্ধ। পবিত্র কোরআনের ভাষ্য অনুযায়ী, জাবুর আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে দাউদ (আ.)-এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে। বনি ইসরাঈলের জন্য অবতীর্ণ এই কিতাবে দাউদ (আ.)-এর বিভিন্ন তাসবিহাত বা আল্লাহর গুণাবলিমূলক কথার বর্ণনা এসেছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমার কাছে ওহি প্রেরণ করেছি, যেমন নুহ ও তাঁর পরবর্তী নবীদের কাছে প্রেরণ করেছিলাম; ইবরাহিম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তাঁর বংশধর; ঈসা, আইউব, ইউনুস, হারুন ও সোলায়মানের কাছে ওহি প্রেরণ করেছিলাম এবং দাউদকে জাবুর দিয়েছিলাম।’ (সুরা : আন-নিসা, আয়াত : ১৬৩)

জাবুর কিতাব কোন ভাষায় নাজিল হয়েছিল তা সুনির্দিষ্ট করে বলা যায় না। তবে ‘ইসলাম ওয়েবের’ তথ্যমতে, দাউদ (আ.) ছিলেন বনি ইসরাঈলের নবী। আর কোরআনের ভাষ্যমতে, মহান আল্লাহ কোনো রাসুলকে তার জাতির ভাষা ছাড়া পাঠাননি। (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ৪)

বনি ইসরাঈলের মাতৃভাষা যেহেতু হিব্রু ছিল, তাই ‘জাবুর’ হিব্রু ভাষায় অবতীর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

ইনজিল : পবিত্র কোরআন অনুযায়ী, আল্লাহ তাআলা বনি ইসরাঈলের হিদায়াতের জন্য ঈসা (আ.)-এর ওপর ইনজিল অবতীর্ণ করেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমি তাদের পর তাওরাতের সত্যায়নকারীরূপে ঈসা বিন মারিয়াম (আ.)-কে প্রেরণ করেছি। মুত্তাকিদের জন্য পথনির্দেশ ও উপদেশরূপে তাঁকে ইনজিল প্রদান করেছি তাঁর পূর্বে অবতীর্ণ তাওরাতের সত্যায়নকারীরূপে, যাতে ছিল উপদেশ ও আলো।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৪৬)

ইবনে কাসির (রহ.)-এর মতে, ঈসা (আ.)-এর ভাষা সুরিয়ানি ছিল। ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহ.) ও ইবনে কাইয়িম (রহ.)-এর মতে তাঁর ভাষা ছিল হিব্রু। সে হিসেবে ইনজিল সুরিয়ানি বা হিব্রু ভাষায় নাজিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। (মওদু ডটকম)

তবে ইনজিলের প্রাচীন যে কপি একসময় পাওয়া যেত, তা গ্রিক ভাষায় হওয়ায় অনেকের দাবি যে ইনজিল ইউনানি বা গ্রিক ভাষায় ছিল। ইউনানি বা গ্রিক ভাষায় ব্যবহৃত ইনজিল (মড়ংঢ়বষ) শব্দের অর্থ সুসংবাদ বা মুক্তির সুসংবাদ। খ্রিস্টানদের বিশ্বাস অনুযায়ী, ঈসা বা ইয়াসু (আ.)-এর আগমনের সুসংবাদ। 

কোরআন : মানুষ ও জিন জাতির হিদায়াতের জন্য সর্বশেষ নাজিলকৃত কিতাব আল-কোরআন। সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর আরবি ভাষায় তা অবতীর্ণ হয়েছে। নবীজি (সা.) ছিলেন আরবি ভাষী। তাই তাঁর ওপর নাজিলকৃত কোরআনও আরবি ভাষায় নাজিল করা হয়। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি একে আরবি কোরআনরূপে নাজিল করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পারো।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ২)