১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৬:৫৬:৫২ পূর্বাহ্ন


বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নির্মিত ভ্রাম্যমাণ রেল যাদুঘর এখন ফুলবাড়ী রেলস্টেশনে
কংকনা রায়, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০২-২০২৩
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নির্মিত ভ্রাম্যমাণ রেল যাদুঘর এখন ফুলবাড়ী রেলস্টেশনে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নির্মিত ভ্রাম্যমাণ রেল যাদুঘর এখন ফুলবাড়ী রেলস্টেশনে


ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বর্ণাঢ্য সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানাতে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী রেল স্টেশনে অবস্থান করছে ভ্রাম্যমাণ রেল যাদুঘর।

গত সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে ফুলবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনের ২নং প্লাটফর্মে অবস্থান নিয়েছে ভ্রাম্যমাণ রেল যাদুঘর। গতকাল মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে এটি নিয়ে তেমন প্রচার প্রচারণা না থাকলেও বিকেল থেকে ছড়িয়ে পড়ে রেলের ভ্রাম্যমাণ এই যাদুঘরের কথা। এরপর থেকে ভিড় জমে রেল স্টেশনের ২নং প্লাটফর্মে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। দর্শনার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণী। বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ফুলবাড়ী রেল স্টেশনের ২নং প্লাটফর্মে অবস্থান করে। গতকাল মঙ্গলবার ও বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুইদিন ব্যাপী  রেলের এই ভ্রাম্যমাণ যাদুঘরটি সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সব শ্রেণি ও পেশার দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। 

ফুলবাড়ী রেলস্টেশনের ২ নং প্লাটফর্মে দাঁড়ানো ভ্রাম্যমাণ রেল যাদুঘর নামের রেলের বগিটির বাহিরে বর্ণিল রঙে আঁকা ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর চিত্র দিয়ে। বগির ভিতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে থরে থরে সাজানো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত চশমা, আওয়ামীলীগের দলীয় প্রতীক নৌকা, মুজিব কোট, মুজিব শতবর্ষের লোগো এবং বঙ্গবন্ধুর লেখা বই, মুজিবনগর স্মৃতিস্তম্ভ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, পাকিস্তানীদের আত্মসমর্পণ, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধ প্রভৃতি। এসব সবই দেখা মিললো বঙ্গবন্ধুর জীবন কাহিনী নিয়ে ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরে। ইতিহাস জানুন, দেখুন বাংলাদেশের জন্ম-বৃত্তান্ত এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শৈশব-কৈশোর ও কর্মময় জীবনের ধারাবাহিক ১২টি পর্ব নিয়ে রেলওয়ের একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরায় সাজানো হয়েছে ভ্রাম্যমাণ এই রেল জাদুঘর। 

বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে ভ্রাম্যমাণ এই রেল জাদুঘরে গিয়ে দেখা যায়, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বগিটি বেশ সুন্দর পরিপাটি। বগিতে উঠতেই কানে আসে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। দরজার পাশে বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত মুজিব শতবর্ষের লোগো। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর জীবন-আন্দোলন সংগ্রামকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন ছবির মাধ্যমে। জাদুঘরে স্থান পেয়েছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর টুঙ্গিপাড়ার বাবার বাড়ী, জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ছবি। বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত চশমা, দলীয় প্রতীক নৌকা, মুজিব কোট, মুজিব শতবর্ষের লোগো এবং বঙ্গবন্ধুর লেখা বই, মুজিবনগর স্মৃতিস্তম্ভ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণ, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, বঙ্গবন্ধু সমাধি সৌধ প্রভৃতি বিষয় স্থান পেয়েছে। যাদুঘরের প্রতিটি কনটেন্ট নির্মাণ করা হয়েছে ভিডিও, স্থিরচিত্র এবং রেপ্লিকা ম্যুরালের মাধ্যমে সমন্বয়ে। জাদুঘরের বুক সেলফে শোভা পাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, আমার দেখা নয়াচীনসহ তার কর্মময় জীবনের ওপর রচিত অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বই। রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা বই ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’।

রেল যাদুঘর দেখতে আসা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আলংকার গুপ্তা ও কলেজ আমিনুল ইসলাম বলেন, রেল যাদুঘর এর বগিটি বাইরে যেমন দৃষ্টিনন্দন, ভেতরে তেমনি ইতিহাস ও ঐতিহ্যে ভরপুর। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতার সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে জানতে পারছেন। 

ফুলবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার খায়রুল ইসলাম বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতাকে জানতে রেলপথ মন্ত্রণালয় ভ্রাম্যমাণ এই রেল যাদুঘর নির্মাণ করেছে। দর্শনার্থী নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণীরা মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে জানতে পারছে। জাদুঘরটিতে ১৯২০ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ১২টি গ্যালারির মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরের যাত্রা ২০২২ সালের ১ আগস্ট থেকে গোপালগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন থেকে শুরু হয়। একটি মিটারগেজ ও একটি ব্রডগেজ বিশেষ কোচে নির্মিত অত্যাধুনিক এই জাদুঘর দেশের ৩৫টি রেলস্টেশনে প্রদর্শিত হবে।

চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপকের কার্যালয় থেকে এই রেল জাদুঘরের যাত্রা শুরু হয়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য প্রত্যেকটি স্টেশনে দাঁড়াচ্ছে। গতকাল বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাতে ফুলবাড়ী ত্যাগ করে বিরামপুর রেল স্টেশনের রওনা দেয়।