১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০১:৫৫:৩০ পূর্বাহ্ন


ফুলবাড়ীতে জরিমানা করেও থামছে না বালু লুটেরাদের দৌরাত্ম্য!
কংকনা রায়, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি :
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০২-২০২৩
ফুলবাড়ীতে জরিমানা করেও থামছে না বালু লুটেরাদের দৌরাত্ম্য! ফুলবাড়ীতে জরিমানা করেও থামছে না বালু লুটেরাদের দৌরাত্ম্য!


“ ফুলবাড়ীতে জরিমানা করেও থামছে না বালু লুটেরাদের দৌরাত্ম্য, ছোট যমুনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে চলছে বালু লুটের মহোৎসব ‘প্রশাসনকে নজরদারী করতে রাস্তার মোড়ে মোড়ে পাহারায় থাকে লো ’’

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর ছোট যমুনা নদীর সরকারি বালুমহল জেলা প্রশাসন থেকে ইজারা দেওয়া না হলেও প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে বালু লুটের মহোৎসব চলছে এলাকার বালু দুস্যদের। কোথাও কোথাও নদীর পাড় ঘেঁষে ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি সরিয়ে নিচ থেকে বালু কেটে নেওয়া হচ্ছে। এতে ভাঙ্গনের হুমকিতে পড়েছে নদীর সংলগ্ন ঘরবাড়ী, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ ফসলি জমি।

জানা যায়, উপজেলার পৌর এলাকাসহ তিনটি ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট যমুনা নদী। পৌর এলাকায় বালু লুটের ঘটনা না ঘটলেও শিবনগর ইউনিয়ন, খয়েরবাড়ী ও দৌলতপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে প্রায় প্রকাশ্যেই ট্রলি দিয়ে বালু উত্তোলন ও বিক্রি। এসব বালু লুটের সঙ্গে জড়িতরা এলাকার কেউ প্রভাবশালী, কেউ রাজনৈতিক ব্যক্তি আবার কেউ বা জনপ্রতিনিধি। এতে ব্যক্তি বিশেষ আর্থিকভাবে লাভবান হলেও সরকার বঞ্চিত হচ্ছে রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে। বর্তমানে এসব অবৈধভাবে উত্তোলন করা বালু ডালা সমান প্রতি ট্রলি (১০০ সেপ্টি) এক হাজার ১০০ টাকা এবং হাইড্রোলিক ডালার থেকে ৪ ইঞ্চি উঁচু পরিমাপে প্রতি ট্রলি বালু এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি করছেন ওইসব বালু খেকোরা।

সরেজমিনে উপজেলার ৭নং শিবনগর ইউনিয়নের দেবীপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায় সেখানকার ছোট যমুনা নদীতে ট্রালি লাগিয়ে প্রকাশ্যেই বালু উত্তোলন ও বিক্রি চলছে। নদীর পাড় ঘেঁষে বালু তোলার কারণে ভাঙ্গনের হুমকির মুখে পড়েছে ব্যক্তি বিশেষের ফসলি জমি। গণমাধ্যমকর্মীদের দেখে বালু খেকোরা বালু বহনকারী ট্রলিসহ উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম নিয়ে সটকে পড়েন। প্রশাসন কিংবা গণমাধ্যমকর্মীদের বালু উত্তোলন নজরে না পড়ে সেজন্য রাস্তার মোড়ে মোড়ে পাহারা বসানো হয় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। কেউ আসলেই মোবাইল ফোনে সতর্ক করে দেওয়া হয়। এদের বিষয়ে কেউ নাম কিংবা মুখ খোলেন না। সবাই জানেন এবং চেনেন তবুও অজানা অতঙ্কে কেউই নাম মুখে নিতে ভয় পান। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন এলাকাবাসী বলেন, যে যার মতো ট্রলি লাগিয়ে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করে থাকছে।

এদিকে ৫নং খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের খয়েরবাড়ী জমিদার ঘাট গিয়ে দেখা যায়, ইজারা বন্ধ থাকলেও স্থানীয় কিসমত আলী ও বেনজির আহম্মেদ ডিটু নামের দুই ব্যক্তি নেতৃত্বে নদী ও ফসলি জমি থেকে দেদাচ্ছে বালু উত্তোলন ও বিক্রি চলছে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ ট্রলি বালু উত্তোলন ও বিক্রি হয়ে থাকছে। গণমাধ্যমকর্মীদের দেখে বালু বহনকারী ট্রলি নিয়ে পালিয়ে যায় বালু খেকোরা।

নদীর থেকে বালু উত্তোলনে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় কৃষক মোবারক হোসেন বলেন, বালুর ইজারা না থাকলেও কিসমত আলী ও বেনজির আহম্মেদ ডিটু নদী থেকে দিনে-রাতে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছে। তাদের কারণে নদীর পাড়ের আম বাগান নদীতে ধসে পড়েছে। অভিযোগ দিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না।   

অভিযুক্ত বেনজির আহম্মেদ ডিটু বলেন, নদীর বালু তোলা হচ্ছে না, বালু তোলা হচ্ছে নদী সংলগ্ন আমার মামার জমি থেকে। অপর অভিযুক্ত কিসমত আলী বলেন, বালু তোলার কারণে স্থানীয় কিছু বেকার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এ বালু সড়কসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের নির্বাচিত ইউপি সদস্য সুকুমার রায় পাখি নিজেও বালু তুলছেন নদীর বাঁধের পার্শ্বের পুকুর থেকে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, পুকুরটি তার আত্মীয়ের। পার্শ্বে তার দোকান আছে, সেই দোকানের কাজের জন্য পুকুর থেকে ট্রলি লাগিয়ে বালু তুলছেন। 

৬নং দৌলতপুর ইউনিয়নের বারাইপাড়া গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় বাবলু মিয়া নামের এক প্রভাবশালী ব্যক্তি ফসলি জমি ধ্বংস করে বালু উত্তোলন করছেন। একাধিকবার ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা গুণলেও বন্ধ নেই তার এই কর্মকান্ড। গণমাধ্যমকর্মীদের দেখে এলাকা ছেড়ে সটকে পড়ায় তার কোন মন্তব্য নেওয়া যায়নি। তবে ইতোপূর্বে রাতের আধারে গোপনে ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে বালু তোলার সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ওয়াসিকুল ইসলাম ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ড্রেজার মেশিন, বেলচা, রেঞ্জ, কোদালসহ মেশিনের হাতল জব্দ করেন।

উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. জাফর আরিফ চৌধুরী বলেন, ইতোপূর্বে অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলনের সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ওয়াসিকুল ইসলাম বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আগামীতেও এটি অব্যাহত থাকবে।