১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৯:১০:০৩ পূর্বাহ্ন


ফুলবাড়ীতে সমপরিমাণ শ্রম দিয়েও মজুরি বৈষম্যের শিকার নারী শ্রমিকরা
কংকনা রায়, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি :
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০২-২০২৩
ফুলবাড়ীতে সমপরিমাণ শ্রম দিয়েও  মজুরি বৈষম্যের শিকার নারী শ্রমিকরা ফুলবাড়ীতে সমপরিমাণ শ্রম দিয়েও মজুরি বৈষম্যের শিকার নারী শ্রমিকরা


পুরুষের সাথে সমানতালে শ্রম করলেও মজুরিতে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার নারী কৃষিশ্রমিকরা। একই পরিমাণে শ্রম দিয়ে পুরুষরা ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা পেলেও নারী শ্রমিকদের ভাগ্যে জুটছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সবখানেই এখন পুরোদমে শুরু হয়েছে বোরোধান রোপণের কাজ। মাঠে শুধু পুরুষ শ্রমিক-ই নয়, বরঞ্চ পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে বেশি জমিতে কৃষি কাজ করতে দেখা যাচ্ছে নারী শ্রমিকদের। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি পুরুষের সমপরিমাণে মাঠে কাজ করছেন তারা। সকালে রান্না করে খাবার বেঁধে এসে জমির পাশেই সেড়ে নিচ্ছেন আহার।  

জানা যায়, পুরুষের সমপরিমাণ কাজ করেও মজুরি বৈষম্যের শিকার হন ওইসব নারী শ্রমিকরা। একই পরিমাণে শ্রম দিয়ে পুরুষরা ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা পেলেও নারী শ্রমিকদের ভাগ্যে জুটছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা।

উপজেলার এলুয়াড়ী ইউনিয়নের জুঝারপুর গ্রামে কাজ করতে আসা কলি কুন্ডু ও কথা মুর্মুর সাথে কথা বললে তারা জানান, ভোরে ঘুম থেকে ওঠে রান্না-বাড়ির কাজ শেষে খাবার বেঁধে বেড়িয়ে পড়তে হয় জমিতে কাজের উদ্দেশ্যে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ চলে। পুরুষরাও ওই একই সময় কাজ কররে তারা আমাদের থেকে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি মজুরি নিয়ে ফিরছেন। আর আমাদেরকে দেয়া হচ্ছে তাদের তুলনায় কম মজুরি।

জুঝারপুর গ্রামের কৃষক মন্টু চন্দ্র রায় বলেন, প্রতিবছরের মতো এবছরেও তিনি ৩ বিঘা জমিতো বোরো ধান চাষ করছেন। পুরুষ কৃষাণের তুলনায় নারী কৃষাণীদের কাজ ভালো হওয়ায় তিনিসহ বেশিরভাগ গ্রামবাসী নারী শ্রমিক দিয়ে কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। নারীদের যেমন কাজ ভালো তেমনি তারা কম মূল্যেই কাজ করেন। তাই নারী শ্রমিদের ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা দিয়েই ৮ ঘণ্টা জমিতে কাজ করিয়ে নেয়া হয়।  

একই গ্রমের মদন চন্দ্র রায় বলেন, কৃষি কাজে যত খরচ কমবে তাই ফসল উৎপাদনে লাভ হবে। তাই আমরা সবসময় স্বল্পমূল্যে যারা ভালো কাজ করে তাদেরকেই খুঁজে জমিতে কাজ করিয়ে নেই। এতে কিছুটা হলেও লাভবান হওয়া যায়।

ফুলবাড়ী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রীতা মন্ডল বলেন, এখনো আমরা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় আছি। আমরা সহজেই মেয়েদেরকে কম দিয়ে পার পেয়ে যাই। নারীরা এমনিতেই নানানভাবে চাপে থাকে। তাই নারীদের মধ্যে একটি ভীতি কাজ করে যে, বৈষম্যের কথা বললে হয়তো আর কাজই পাবো না। তাই যা পাচ্ছি তা নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। নারী শ্রমিকদের কোনো সংগঠন নাই তাই তারা একত্রিত হতে পারছেন না। প্রতিবাদ করতে পারছেন না। এটির প্রতিকার হওয়া উচিৎ কারণ নারীরা কোনো অংশে কম কাজ করে না। বরঞ্চ নারীরা দায়িত্ব ও আন্তরিকতার সাথে কাজ করে। তারা কাজে ফাঁকিবাজি কম করে। মেয়েরা কর্মস্থলে একটু দেরিতে আসলেও তারা একতালে কাজ করে। অন্যকোনো কিছুতে মনোযোগ দেয় না তাই নারীরা দেরিতে এলেও পুরুষের চেয়ে বেশিই কাজ করে। এ আমরা নারীদের অধিকারের কথা বিভিন্ন সভা-সেমিনারে তুলে ধরি। এ বৈষম্য নিয়ে সামাজিক সংগঠন ও সাংবাদিকরা ভূমিকা রাখতে পারে। নারী বৈষম্য দূর করতে সর্বস্তরের মানুষ যদি একত্রিত হয়, তবে নারী বৈষম্য দূর করা সম্ভব বলে আমি মনে করি।