২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১১:৩৮:০৪ অপরাহ্ন


মমতা রাজবংশীর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প
কংকনা রায়, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০২-২০২৩
মমতা রাজবংশীর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প মমতা রাজবংশীর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প


মমতা রাজবংশী। বয়স ৫০ ছুঁই ছুঁই। শিক্ষাগত যোগ্যতা শুধুমাত্র ১০ শ্রেণিতেই সীমাবদ্ধ। তবুও তার মধ্যে নেই, কোনো গুণের কমতি? তিনি যেমন একজন স্ত্রী, একজন মা, তেমনি একজন সঙ্গীত শিল্পী ও একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। নিজের প্রচেষ্টায় সংসারের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে তার অবদানও অপরিসীম।

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা শহর থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে আলাদীপুর ইউনিয়নের বারাই গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য বর্তমান কৃষক বাবু রামের স্ত্রী মমতা রাজবংশী। তিনি পেশায় গৃহিনী। সাংসারিক জীবনের তার চারটি কন্যা সন্তান রয়েছে।  

জানা যায়, দশম শ্রেণিতেই শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে পড়েন মমতা রাজবংশী। তারপর তিনি আনসার ভিডিপির প্রশিক্ষণ শেষে হ্যা-বল ও ভলিবল খেলোয়ার হিসেবে ছিলেন। তিনি জাতীয় পর্যায়েও খেলাতে অবদান রেখেছেন। এরপর ১৯৯৩ সালে তৎকালিন সেনাসদস্য বাবু রামের সাথে তার বিয়ে হয়। তবুও শুধুমাত্র সাংসারিক জীবনেই সীমাবন্ধ থাকেন’নি মমতা রাজবংশী। তিনি সংসারের পাশাপাশি স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা থেকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এছাড়াও তিনি সংগীতসাধন করতেন। পরে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিনের হিজল-তমাল অনুষ্ঠানের নিয়মিত শিল্পী হিসেবে নিয়োগ পান। এছাড়াও স্থানীয় নারীদের নিয়ে গড়ে তোলেন গ্রাম উন্নয়ন সমিতি। এদিকে তার স্বামী অবসরের পর নিজ গ্রামেই কৃষি কাজ করেন। যা দিয়েই চলছিল তার সংসার। পরে ২০১২ সালে প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে নিজ বাড়িতেই মমতা রাজবংশী শুরু করেন ভার্মি কম্পোস্ট সার (কেঁচো সার) তৈরি কাজ। তা থেকেই তার প্রতিমাসের আয় প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। এছাড়াও টেলিভিশনের গান গেয়ে, গ্রাম উন্নয়ন সমিতি চালিয়ে এবং বিভিন্নস্থানে প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে বাড়তি আয় করছেন এই নারী উদ্যোক্তা। সে তার আয়ের টাকায় এবং স্বামীর সহযোগিতায় নির্মাণ করেছেন আধাপাকা বাড়ি। একইসাথে বহন করছেন মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ। ইতোমধ্যে তিনি তার দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন এবং আরো দুই মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে তার ভার্মি কম্পোস্ট সার (কেঁচো সার) তৈরি দেখে এলাকার নারীরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। তিনি ১৫০ জন নারীকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণও প্রদান করেছেন। বর্তমানে তারাও সেই সার তৈরি করে বাড়তি আয়ের মাধ্যমে সংসারে অর্থ যোগান দিচ্ছেন। ২০২২ সালে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে মমতা রাজবংশী সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে জয়িতা সম্মাননা অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সামাজিক কাজে অবদান রাখায় সম্মাননা স্মারক লাভ করেছেন। 

বারাই গ্রামের গোলাপী রায়, মিনতি মুর্মু, মাধবী রানী রায়সহ আরো অনেকে বলেন, আমরা মমতা রাজবংশীকে দেখে সার তৈরিতে উদ্বুদ্ধ হই। পরে তার কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে আমরা সার তৈরি করছি। যা খুবই লাভজনক। তিনি সবসময় আমাদেরকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। এ সার বিক্রি করে আমরা সংসারে অর্থ যোগান দিয়ে স্বামীকে সহযোগিতা করছি।  

সেই সফল নারী উদ্যোক্তা মমতা রাজবংশী বলেন, ছোট বেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল নিজে কিছু করার। সেই ইচ্ছে এবং স্বামীর সহযোগিতায় বর্তমানে সামাজিকভাবে নিজস্ব পরিচয় তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। নিজে উপার্জনের পাশাপাশি অন্যান্য নারীদের উদ্বুদ্ধ করে তাদেরকেও স্বাবলম্বী করে তুলছি। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক কাজের পাশাপাশি দলিত জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে পড়া রোধকল্পসহ ৮দফা দাবি নিয়েও কাজ করছি। আমার এ অর্জনের পেছনে স্বামীসহ বেসরকারি সংস্থার অবদান রয়েছে। তাদের সহযোগিতা না পেলে হয়তো আজ এই অবস্থানে পৌঁছাতে পারতাম না।

তিনি আরো বলেন, নারীরা শুধুই সংসার সামলাবে তা নয়, নারীরা ইচ্ছে করলে বিশ্ব জয় করতে পারে। বর্তমানে নারীরা সমাজের সবকাজে অংশ নিচ্ছেন এবং সফলভাবে কাজ করছেন। তাই আমি মনে করি, ইচ্ছা শক্তিই বড় শক্তি। যেকোনো নারী ইচ্ছে করলেই সফল হতে পারবেন। 

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রিতা ম-ল বলেন, মমতা রাজবংশী মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে উদ্যোক্ত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। সে মহিলা অধিদপ্তর কিশোর-কিশোরী ক্লাব প্রকল্পের সঙ্গীত প্রশিক্ষক হিসেবেও দায়িত্বে রয়েছে। তিনি গ্রামীণ নারী মধ্যে একজন দৃষ্টান্ত উদ্যোক্তা। তাকে দেখে অন্য নারীরা অনুপ্রেরিত হয়। এছাড়াও সে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে।