২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার, ০৯:২১:১১ পূর্বাহ্ন


যেসব মানুষের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করতে থাকেন
ধর্ম ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৩-২০২৩
যেসব মানুষের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করতে থাকেন ফাইল ফটো


মানুষ কত বিষয়ে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন, কত অভাব-অভিযোগ তুলে ধরেন। মানুষের এসব দোয়া, অভাব-অভিযোগ সব কবুল হওয়া নিশ্চিত নয়। কিন্তু আল্লাহ তাআলার পবিত্র ও নিষ্পাপ মাখলুক ফেরেশতারা মানুষের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করে থাকেন। তাদের সে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। ফেরেশতারা ১৫ শ্রেণির মানুষের জন্য দোয়া করে থাকেন। তারা কারা?

১. যারা অজু করে ঘুমায়

ঘুম মানুষের ক্লান্তি দূর করে। ঘুমের জন্যই রাতকে কলো আবরণে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। তাই কেউ যদি অজু করে ঘুমায় তবে ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। হাদিসে এসেছে-

হজরত বারা ইবনে আজিব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেছেন,

إِذَا أَتَيْتَ مَضْجَعَكَ فَتَوَضَّأْ وُضُوءَكَ لِلصَّلَاةِ ثُمَّ اضْطَجِعْ عَلَى شِقِّكَ الْأَيْمَنِ

‘যখন তুমি তোমার শয্যা গ্রহণের ইচ্ছা করবে, তখন নামাজের ন্যায় অজু করে ডান কাত হয়ে শোবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

অজু করে ঘুমানোর ফজিলত সম্পর্কে ইবনে হিব্বানের এক হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি পবিত্রাবস্থায় (অজু অবস্থায় ) ঘুমায় তার সঙ্গে একজন ফেরেশতা নিয়োজিত থাকে। এরপর সে ব্যক্তি ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফেরেশতাটি আল্লাহ্‌র সমীপে প্রার্থনায় বলে থাকে-

‘হে আল্লাহ্‌! তোমার অমুক বান্দাকে ক্ষমা করে দাও, কেননা সে পবিত্রাবস্থায় ঘুমিয়েছিল।’ (ইবনে হিব্বান)

২. যারা নামাজের জন্য অপেক্ষা করে

কোরআনুল কারিমের ঘোষণা হলো- ‘নিশ্চয়ই বিশ্বাসীদের জন্য নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা আবশ্যক।’ আর এক ওয়াক্ত নামাজ পড়ার পর পরবর্তী ওয়াক্ত নামাজ পড়ার অপেক্ষায় থাকা অনেক সাওয়াবের কাজ। যাদের অন্তরে এ অপেক্ষা থাকে তাদেরকে মসজিদে সঙ্গে অন্তর বেধে রাখা মুসল্লি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। তাদের সঙ্গে হাদিসের ঘোষণা এমন-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যতক্ষণ বান্দা নামাজের স্থানে বসে নামাজের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে ততক্ষণ সে নামাজেই থাকে। আর ফেরেশতাগণ বলতে থাকেন-

‘হে আল্লাহ! তাকে করুণা করুন। এভাবে ফেরেশতাগণ দোয়া করতে থাকেন। বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত না (ওই ব্যক্তি) নামাজের স্থান ত্যাগ করে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

৩. প্রথম কাতারে তাকবিরে উলার সঙ্গে নামাজ পড়ে

ঘরে একা একা নামাজ পড়ার চেয়ে জামাতে নামাজ পড়ার ২৫/২৭ গুণ সাওয়াব বেশি। তাছাড়া প্রথম কাতারে দাঁড়িয়ে তাকবিরে উলার সঙ্গে নামাজ পড়ার ফজিলত আরও বেশি। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তা প্রমাণিত-

প্রথম কাতার

> নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথম কাতারের মুসল্লিদের জন্য তিনবার ও দ্বিতীয় কাতারের মুসল্লিদের জন্য একবার দোয়া করেছেন।

> দ্বিতীয় কাতারের নামাজ আদায় করার চেয়ে প্রথম কাতারে নামাজ পড়া উত্তম।

> প্রত্যেক কাতারের বাম দিক থেকে ডান দিক উত্তম।

> আল্লাহ তাআলা নামাজের জামাতের প্রথম কাতার এবং কাতারের ডান দিকের ওপর রহমত বষর্ণ করেন।

> ফেরেশতাগণ প্রথম কাতারের এবং কাতারের ডানদিকের লোকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

তাকবিরে উলা

হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ৪০ দিন প্রতি ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিতভাবে জামাতের সঙ্গে এমনভাবে আদায় করবে যে, তার প্রথম তাকবির ছুটে না যায়; তবে তার জন্য দুইটি জিনিস থেকে অব্যহতির ফয়সালা করা হয়।

> জাহান্নামের আগুন থেকে অব্যাহতি।

> মুনাফেকি থেকে অব্যাহতি ও রক্ষা।’ (তিরমিজি)

সুতরাং কোনো ব্যক্তি যখন ইখলাসের সঙ্গে প্রথম কাতারে তাকবিরে উলার সঙ্গে নিয়মিত নামাজ আদায় করে তবে তার জন্য যেমন ফেরেশতারা ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে। আবার তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে অব্যহতি দেওয়া এবং মুনাফেকির মতো মারাত্মক ফেতনা থেকে হেফাজত করা হয়। (সুবহানাল্লাহ!)

৪. নবিজীর প্রতি বেশি বেশি দরূদ পড়ে

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরূদ শরিফ পাঠকারীর জন্য ফেরেশতারা ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কেননা কোরআনুল কারিমের বর্ণনা ও হাদিসের দিকনির্দেশনায় তা প্রমাণিত। আল্লাহ নিজেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরূদ পড়ার দিকনির্দেশনা দিয়ে আয়াত নাজিল করেন এভাবে-

اِنَّ اللّٰهَ وَ مَلٰٓئِکَتَهٗ یُصَلُّوۡنَ عَلَی النَّبِیِّ ؕ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا صَلُّوۡا عَلَیۡهِ وَ سَلِّمُوۡا تَسۡلِیۡمًا

‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নবির প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণও নবির জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করে। হে বিশ্বাসীগণ! তোমরাও নবির জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা কর এবং তাকে উত্তমরূপে অভিবাদন কর (দরূদ ও সালাম পেশ কর)।’ সুরা আহজাব : আয়াত ৫৬)

দরূদ পড়ার অনেক ফজিলত আছে, তবে দরূদ পাঠকারীর জন্য ফেরেশতারা দোয়া করতে থাকেন। যতক্ষণ বান্দা দরূদ পড়তে থাকেন। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত আমের ইবনে রবিআহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে খুতবার মধ্যে এ কথা বলতে শুনেছি-

‘যে আমার উপর দরূদ পাঠকারী যতক্ষণ দরূদ পড়ে ততক্ষণ ফেরেশতারাও তার জন্য দোয়া করতে থাকে। সুতরাং বান্দার ইচ্ছা, সে দরূদ বেশি পড়বে না কম।’ (মুসনাদে আহমদ, ইবনে মাজাহ, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা)

এছাড়াও দরূদের রয়েছে অনেক ফজিলত-

>> ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার উপর দরূদ পাঠ করবে তার জন্য আমার সুপারিশ অবধারিত হয়ে যাবে।’ (তাবারানি)

>> রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন ওই ব্যক্তি আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে, যে আমার উপর সবচেয়ে বেশি দরূদ পড়েছে।’ (তিরমিজি)

>> রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে আমার উপর একবার দরূদ পড়বে আল্লাহ তার উপর ১০টি রহমত নাজিল করবেন, তার ১০টি গুনাহ ক্ষমা করা হবে এবং ১০টি (রহমতের) দরজা খুলে দেওয়া হবে।’ (মুসনাদে আহমদ, নাসাঈম মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা)

>> রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে মুসলমানের দান করার সামর্থ্য নেই সে যেন দোয়ায় বলে-

اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَ رَسُوْلِكَ وَ صَلِّ عَلَى الْمُؤمِنيْنَ وَالْمُؤمِنَاتِ وَالْمُسْلِمِيْنَ وَالْمُسْلِمَاتِ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন আবদিকা ওয়া রাসুলিকা ওয়া সাল্লি আলাল মুমিনিনা ওয়াল মুমিনাত ওয়াল মুসলিমিনা ওয়াল মুসলিমাত।’

‘এটা তার জন্য জাকাত (সদকা) হিসেবে গণ্য হবে।’ (ইবনে হিব্বান)

৫. যারা রোগীর সেবা করে

অসুস্থ ব্যক্তির সেবা-যত্ন করা সুন্নাত। যারা বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণে অসুস্থ ব্যক্তিদের দেখতে যায়, তার জন্য ফেরেশতারা দোয়া করতে থাকেন। হাদিসে এসেছে-

> হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি সকালে কোনো মুসলমান রোগীকে দেখতে যায়, সত্তর হাজার ফেরেশতা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য নেক দোয়া করতে থাকেন। যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় কোনো মুসলমান রোগীকে দেখতে যায়, পরদিন সকাল পর্যন্ত নেক দোয়া করতে থাকেন। আর ওই ব্যক্তিকে জান্নাতের একটি বাগান দান করা হয়।’ (তিরমিজি)

> অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘যখন তুমি কোনো রোগীর কাছে যাবে কিংবা মরণোন্মুখ ব্যক্তির কাছে যাবে, তখন তার সঙ্গে মঙ্গলজনক কথাবার্তা বলো। কেননা তুমি যা বল, ফেরেশতাগণ তার (ওই ভালো কথার) ওপর ‘আমিন’, ‘আমিন’ বলতে থাকেন।’ (মুসলিম ও মিশকাত)

৬. মুসলিম ভাইয়ের জন্য দোয়া করে

মুমিন মুসলমান নারী-পুরুষের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা মহান আল্লাহর নির্দেশ এবং নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَاسْتَغْفِرْ لِذَنبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ

(হে রাসুল! আপনি) ক্ষমা প্রার্থনা করুন, আপনার নিজের জন্য এবং মুমিন পুরুষ ও নারীদের জন্য।' (সুরা মুহাম্মাদ : আয়াত ১৯)

কোনা ব্যক্তি যদি অন্য কোনো ব্যক্তির জন্য তার অনুপস্থিতিতে দোয়া করেন, তবে আল্লাহ তাআলা সে দোয়া কখনও ফেরত দেন না। তার জন্য ফেরেশতারাও দোয়া করতে থাকেন। হাদিসে এসেছে-

> হজরত উম্মে দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, আমার স্বামী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'কোনো ব্যক্তি যদি তার কোনো ভাইয়ের জন্য তার পেছনে (তার অনুপস্থিতিতে) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, তবে ফেরেশতা সে দোয়া (কবুলে) 'আমিন' বলেন। (আর কান্নাকাটি করে দোয়া করলে) নিজের জন্যও এ দোয়া কবুল হয়।' (মুসলিম)

> হজরত আবদুল্লাহ ইবনে বুসর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার বাবার কাছে এলেন। আমরা তাঁর জন্য খাবার পরিবেশন করলে তিনি তা গ্রহণ করলেন। তারপর খেজুর আনা হলে তিনি তা খেতে থাকলেন। তারপর পানীয় আনা হলে তিনি তা পান করলেন, তারপর পানপাত্র তার ডান পাশের ব্যক্তিকে দিলেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে বুসর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তারপর আমার বাবা তাঁর সওয়ারীর লাগাম ধরে বললেন, আমাদের জন্য দোয়া করুন। তিনি বললেন-

‏ اللَّهُمَّ بَارِكْ لَهُمْ فِيمَا رَزَقْتَهُمْ وَاغْفِرْ لَهُمْ وَارْحَمْهُمْ ‏

উচ্চারণ : 'আল্লাহুম্মা বারিক লাহুম ফি মা রাযাক্বতাহুম ওয়াগফিরলাহুম ওয়ারহামহুম।'

অর্থ : 'হে আল্লাহ! তাদের যে রিজিক দিয়েছ তাতে বারকত দান করুন, তাদের ক্ষমা করে দিন আর তাদের প্রতি দয়া করুন।' (মুসলিম)

৭. মুমিনের কল্যাণ কামনা করে

ফেরেশতা মানুষকে কল্যাণের কাজে উৎসাহ দেয়া। শয়তান যখন মানুষকে অন্যায় ও খারাপ কাজের দিকে ধাবিত করে ফেরেশতারা তখন মানুষকে কল্যাণের দিকে যেতে প্রেরণা যোগায়। হাদিসে এসেছে-

> হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘শয়তান মানুষের মনে প্রেরণা জাগায় আবার ফেরেশতারাও মানুষের মনে প্রেরণা জাগায়। শয়তানের প্রেরণা অশুভ ও অকল্যাণের ওয়াদা করা এবং সত্যকে অস্বীকার করার প্রেরণা। আর ফেরেশতার প্রেরণা হলো কল্যাণ ও মঙ্গলের ওয়াদা করা এবং সত্যকে মেনে নেয়ার প্রেরণা। অতঃপর তিনি কুরআনের আয়াত তেলাওয়াত করেন-

‘শয়তান তোমাদেরকে অভাব অনটনের ভীতি দেখায় এবং অশ্লীলতার আদেশ দেয়। পক্ষান্তরে আল্লাহ তোমাদের নিজের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও বেশি অনুগ্রহের ওয়াদা করেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সুবিজ্ঞ।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৬৮)

> হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘প্রতিদিন আসমান থেকে ২ জন ফেরেশতা (জমিনে) অবতরণ করেন।

তাদের মধ্যে একজন (দানকারীর জন্য) দোয়া করে- ‘হে আল্লাহ! যে (তোমার পথে) ব্যয় করে; তাকে বিনিময় দান কর।’

আর দ্বিতীয় ফেরেশতা (দান থেকে বিরত থাকা ব্যক্তির জন্য) বদ-দোয়া (অভিশাপ) করে- ‘হে আল্লাহ! যে (তোমার পথে) সম্পদ ব্যয় করা থেকে বিরত থাকে; তার অর্থ সম্পদ ধ্বংস করে দাও।’ (মেশকাত)

৮. প্রতিদিন অল্পকিছু হলেও সদকা করে

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, প্রতিদিন সকালে দুজন ফেরেশতা (আসমান থেকে) অবতরণ করেন। তাঁদের একজন বলেন, হে আল্লাহ, যে দান করে তাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ, যে দান করে না, তাকে ধ্বংস করে দিন’। (বুখারি: ১৪৪২; মুসলিম ১০১০)

৯. যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে

আল্লাহ তাআলা বলেন- যারা আরশকে ধারণ করে এবং যারা এর চারপাশে রয়েছে, তারা তাদের রবের প্রশংসাসহ তাসবিহ পাঠ করে এবং তাঁর প্রতি ঈমান রাখে। আর মুমিনদের জন্য ক্ষমা চেয়ে বলে যে, ‘হে আমাদের রব, আপনি রহমত ও জ্ঞান দ্বারা সব কিছুকে পরিব্যপ্ত করে রয়েছেন। অতএব যারা তাওবা করে এবং আপনার পথ অনুসরণ করে আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন। আর জাহান্নামের আযাব থেকে আপনি তাদেরকে রক্ষা করুন।’ (সুরা মুমিন : আয়াত ৭)

‘হে আমাদের রব, আর আপনি তাদেরকে স্থায়ী জান্নাতে প্রবেশ করান, যার ওয়াদা আপনি তাদেরকে দিয়েছেন। আর তাদের পিতা-মাতা, পতি-পত্নি ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম সম্পাদন করেছে তাদেরকেও। নিশ্চয় আপনি মহাপরাক্রমশালী, মহাপ্রজ্ঞাময়।’ (সুরা মুমিন : আয়াত ৮)

‘আর আপনি তাদের অপরাধের আযাব হতে রক্ষা করুন এবং সেদিন আপনি যাকে অপরাধের আযাব থেকে রক্ষা করবেন, অবশ্যই তাকে অনুগ্রহ করবেন। আর এটিই মহাসাফল্য।’ (সুরা মুমিন : আয়াত ৯)

১০. যারা কাতারে ফাঁকা জায়গা বন্ধ করে কাতার পূর্ণ করে দাঁড়ায়

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যারা কাতারগুলো মিলিয়ে রাখে তাদের প্রতি আল্লাহ এবং তার ফেরেশতাগণ রহমত বর্ষণ করেন। যে ব্যাক্তি কাতারের ফাঁক বন্ধ করে, আল্লাহ তার বিনিময়ে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।’ (ইবনে মাজাহ ৯৯৫)

১১. যারা নামাজের জামাতের কাতারের ডান দিকে দাঁড়ায়

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয় কাতারের ডান দিকের (মুসল্লী­দের) উপর আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন এবং মালায়িকাহ (ফেরেশতাগণ) দোয়া করেন।’ (আবু দাউদ ৬৭৬)

১২. ইমামের সুরা ফাতেহা তেলাওয়াত শেষে ফেরেশতাগণও আমিন বলেন

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ইমাম غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ পড়লে তোমরা ‘আমিন’ বলো। কেননা, যার এ (আমিন) বলা মালাকগণের ( ফেরেশতাদের আমিন) বলার সাথে একই সময় হয়, তারআগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ (বুখারি ৭৮২)৯) যারা সলাত শেষে সেখানে (সলাতের স্থানে) অবস্থান করে।

১৩. যারা ফজর ও আসরের সলাত জামাতের সহীত আদায় করে

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ফেরেশতাগণ পালা বদল করে তোমাদের মাঝে আগমন করেন; একদল দিনে, একদল রাতে। ‘আসর ও ফজরের নামাজে উভয় দল একত্র হন। এরপর তোমাদের মাঝে রাত যাপনকারী দলটি উঠে যান। তখন তাদের প্রতিপালক তাদের জিজ্ঞাসা করেন, আমার বান্দাদের কোন্ অবস্থায় রেখে এলে? অবশ্য তিনি নিজেই তাদের ব্যাপারে সর্বাধিক অবগত। উত্তরে তাঁরা বলেন, আমরা তাদের নামাজে রেখে এসেছি, আর আমরা যখন তাদের কাছে গিয়েছিলাম তখনও তারা নামাজ আদায়রত অবস্থায় ছিলেন।’ (বুখারি ৫৫৫)

১৪. যারা অপর ভাই/বোনদের জন্য তাদের অগোচরে দু'আ করে

হজরত সাফওয়ান ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু সাফওয়ান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেছেন, আমি সিরিয়াতে আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহুর ঘরে গেলাম। আমি তাকে ঘরে পেলাম না; বরং সেখানে উম্মু দারদাকে পেলাম। তিনি বললেন, আপনি কি এ বছর হজ্জ পালন করবেন? আমি বললাম, জি হ্যাঁ। তিনি বললেন, আল্লাহর কাছে আমাদের কল্যাণের জন্যে দোয়া করবেন। কেননা, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন, একজন মুসলিম বান্দা তার ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য দোয়া করলে তা কবুল হয়। তার মাথার কাছে একজন ফেরেশতা নিয়োজিত থাকেন, যখন সে তার ভাইয়ের জন্য প্রার্থনা করে তখন নিয়োজিত ফেরেশতা বলে থাকে ‘আমিন এবং তোমার জন্যও অবিকল তাই’। (মুসলিম ২৭৩৩)

১৫. যারা মানবসেবায় নিজ সম্পদ ব্যয় করে

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক বান্দা যখন সকালে ওঠে দুজন মালাক (ফেরেশতা) অবতীর্ণ হন। তাদের একজন বলেন, ‘হে আল্লাহ! খরচকারীর ধন আরো বাড়িয়ে দাও’ এবং দ্বিতীয়জন বলেন, ‘হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দাও।’ (বুখারি ১৪৪২, মুসলিম ১০১০)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, উল্লেখিত ১৫ শ্রেণির মধ্যে নিজেদের নিয়োজিত রাখা। হাদিসের উপর যথাযথভাবে আমল করা। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে হাদিসের অনুসরণ ও অনুকরণে জীবন সাজানোই হবে উম্মতে মুহাম্মাদির কাজ।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত ১৫ শ্রেণির ব্যক্তির অন্তর্ভূক্ত হতে এবং এ আমলে নিজেদের তৈরি করার তাওফিক দান করুন। হাদিসে ঘোষিত ফজিলত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।