১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ১২:১৩:৩৯ অপরাহ্ন


রাজশাহীর গ্রামীণ জীবিকার একমাত্র চালিকা শক্তি পানের বরজ
মঈন উদ্দিন
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৩-২০২৩
রাজশাহীর গ্রামীণ জীবিকার একমাত্র চালিকা শক্তি পানের বরজ রাজশাহীর গ্রামীণ জীবিকার একমাত্র চালিকা শক্তি পানের বরজ


রাজশাহীর মোহনপুর, দুর্গাপুর, বাগমারা উপজেলার সিংহভাগ জমিতেই রয়েছে তিন ধরনের পানের রয়েছে পানের বরজ। এরমধ্যে দুধস্বর সাচি পান, মিষ্টি পান ও সাচি পান। এই অঞ্চলের কৃষক, চাষী বা ব্যবসায়ীদের জীবিকার একমাত্র চালিকা শক্তি পান। বরজ থেকে চাষিরা সরাসরি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন পান। স্থানীয় হাটে-বাজারে বেচাকেনায় সুবিধা থাকায় অন্য ফসলের তুলনায় অধিক লাভজনক পানের চাষাবাদ। এই জেলার নয়টি উপজেলাতেই রয়েছে পানের বরজ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৩৫ হেক্টর জমিতে পানের চাষাবাদ বেড়েছে। মোহনপুর, বাগমারা ও দুর্গাপুরের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবন-জীবিকা পান ও পানের বরজকে ঘিরে। এইসব উপজেলায় পানের বরজ নেই, এই রকম মানুষ খুব কম রয়েছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের পানের চাষ হয়েছিল ৪ হাজার ৩৬১ হেক্টর জমিতে। যার গড় ফল ছিল ১৬ দশমিক ৯১ মেট্রিক টন। উপাদন হয়েছিল ৭৩ হাজার ৭৭১ দশমিক ২ মেট্রিক টন। এছাড়া কৃষকের সংখ্যা ৩৭ হাজার ৯৩২ জন। পানের বরজ ছিল ৩৮ হাজার ৯০৬টি। আর চলতি বছরে পানের চাষ হয়েছে ৪ হাজার ৪৯৬ হেক্টর জমিতে। যার গড় ফল ছিল ১৭ দশমিক ০৫ মেট্রিক টন। সম্ভাব্য উপাদন ৭৬ হাজার ৬৭৮ দশমিক ৩৮ মেট্রিক টন। এছাড়া কৃষকের সংখ্যা ৩৮ হাজার ৯০০ জন। পানের বরজ রয়েছে ৩৯ হাজার ৬৭৪টি। এছাড়া একবিঘায় ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকার পান বিক্রি করে চাষী। তাহলে ৪ হাজার ৪৯৬ হেক্টর পানে দাম পড়ে প্রায় ৬২৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা।

জেলার মোহনপুরের ধোপাঘাটা, মৌগাছি, কেশরহাটের পান বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে কথা হলে তারা জানায়, পানের দাম বর্তমান সময়ে বেশি। প্রতিবছর এই সময়ে পানের দাম বেশি থাকে। বর্তমানে বড়-ছোট আকৃতি অনুযায়ী প্রতি পোয়া (৩২ বিড়া) পানের দাম দেড় হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যার মধ্যে ছোট পান বিক্রি হচ্ছে ১২ শো টাকা, মাঝারি ২ হাজার টাকা থেকে ২৮ শো টাকা এবং মোটা বা বড় পান সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পোয়া দরে।

উপজেলার কইকুড়ি বাজার এলাকার পানচাষী শাহাদাৎ হোসেন বলেন, পানের বরজ সন্তানের মতো যত্ন করতে হয়। যত্ন না করলে পানের বরজ ভালো হয় না। কোন কাজ না থাকলেও দিনে একবার হলেও আসতে হবে পানের বরজে। প্রতিবছর এই সময়ে পানের দাম বেশি থাকে। কৃষকরা পান বিক্রি করে অন্য ফসল ফলায়। এই অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ জমিতে সরিষা ছিল। তাদের মধ্যে কেউ সরিষা কেটে ঘরে তুলেছেন। আবার কারো জমিতে সরিষা রয়েছে। এই জমিতে সবাই ধান চাষ করবেন। কৃষকরা ধান চাষের খরচ চলবে পান বিক্রির টাকা দিয়ে। আর সরিষার দাম বেশি হলে কৃষকরা তখন বিক্রি করবেন। ভাল পান হলে ১০ কাঠার বরজ থেকে বছরে লাখ টাকার পান বিক্রি করা সম্ভব। এই অঞ্চলে একেক পরিবারে তিন থেকে চরটি করে পানের বরজ রয়েছে। এছাড়া যান নেই, তারও একটা পানের বরজ রয়েছে।

মোহনপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রহিমা খাতুন বলেন, চলতি বছর ১ হাজার ৩১৭ হেক্টর জমিতে পানের চাষাবাদ হয়েছে। যার সম্ভাব্য গড় ফলন ধরা হয়েছে ১৬ মেট্রিক টন। সম্ভাব্য উৎপাদন ২১ হাজার ৭২ মেট্রিক টন। কৃষকের সংখ্যা ১৭ হাজার ৮৫০ জন। পানের বরজ আছে ১৯ হাজার ৮৫৫ টি। আমরা কেজিতে পানের দাম নির্ধারণের পদ্ধতি বের করেছি। আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি- একটি পানের গড় ওজন ৫ গ্রাম। আর এক পোয়া বা ৩২ বিড়া পানের ওজন ১০ কেজি। এছাড়া একবিঘায় ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকার পান বিক্রি করে চাষী।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক শারমিন সুলতানা বলেন, রাজশাহীজুড়ে পানের চাষাবাদ হচ্ছে। এই জেলার সব উপজেলায় কম বেশি পানের চাষ হচ্ছে। তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি মোহনপুরে। এই উপজেলায় নিচু বা ডোবা ছাড়া সব জমিতেই পানের চাষ হয়।

উদাহারণ হিসেবে এই কর্মকর্তা বলেন, পান এমন একধরনের ফসল যা চাকরির মতো বেতন দেয়। একজন চাষী মাসে তিন-চার বার পান বরজ থেকে তুলে হাটে বিক্রি করেন। এছাড়া আপদ-বিপদেও দ্রুত টাকা পাওয়া যায় পান বিক্রি করে। পানকে সাধারণত ‘লিকুইট মানি’ বলা হয়।