২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ০৯:৪৪:৩২ অপরাহ্ন


ব্যাংকে স্বল্পমেয়াদি ধার ৩৫ হাজার কোটি টাকা
অর্থনীতি ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৩-২০২৩
ব্যাংকে স্বল্পমেয়াদি ধার ৩৫ হাজার কোটি টাকা ফাইল ফটো


উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের সঞ্চয় ক্ষমতা কমেছে। অনেকে এখন আগের জমানো টাকা তুলে খরচ করছেন। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির ফলে প্রচুর টাকা বাজার থেকে  উঠে এসেছে। সব মিলিয়ে টান পড়েছে আমানতে। অন্যদিকে, ঋণ চাহিদাও কিছুটা বেড়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একের পর এক কম সুদের পুনঃঅর্থায়ন স্কিম চালু করলেও তাতে সাড়া মিলছে না। দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে প্রতিনিয়ত ধার করে চলছে কিছু ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এবং এক ব্যাংক আরেক ব্যাংকের কাছ থেকে বর্তমানে গড়ে ধারের পরিমাণ প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে গড় মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের কাছাকাছি। অনেকে এখন নতুন সঞ্চয় তো দূরে থাক, আগের সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন। যে কারণে গত বছরে পুরো ব্যাংক খাতে আমানত মাত্র ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেড়ে ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা হয়েছে। আর সঞ্চয়পত্রের বিক্রি না বেড়ে উল্টো কমছে। বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে শুধু চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এর বিপরীতে বাজার থেকে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি উঠে এসেছে। এর মধ্যে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণ বেড়েছে প্রায় ১৪ শতাংশ। মূলত বেশিরভাগ জিনিসের দর বেড়ে যাওয়ায় একই জিনিস কিনতে আগের তুলনায় বেশি খরচ হচ্ছে। যে কারণে দৈনন্দিন খরচ মেটাতে ঋণ চাহিদা বেড়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রেপোসহ বিভিন্ন উপায়ে ব্যাংকগুলোর স্বল্পমেয়াদি ধারের স্থিতি ছিল ২৪ হাজার ২২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সাত দিন মেয়াদি ধার ছিল ১৭ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা। আর ১৪ দিন মেয়াদি ধার ছিল ৫ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। এক দিন মেয়াদি ধারের স্থিতি ছিল ৯৮৪ কোটি টাকা। অন্যদিকে, এক ব্যাংক আরেক ব্যাংক থেকে যে ধার করে তার পরিমাণ অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৪ দিন বা তার কম মেয়াদি ধারের স্থিতি ছিল ৮ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা। বাকি ধার ছিল ১৮৬ দিন পর্যন্ত মেয়াদে। আন্তঃব্যাংক ধারের মধ্যে কলমানি বা এক রাতের জন্য ধারের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা। সাত দিন মেয়াদি ধারের স্থিতি ছিল ১ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত জুলাইয়ে সিএমএসএমই খাতের জন্য ২৫ হাজার কোটি টাকার নতুন একটি প্রাক অর্থায়ন স্কিম গঠন করে। এ তহবিল থেকে ব্যাংকগুলো মাত্র ২ শতাংশ সুদে অর্থ নিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে ৭ শতাংশ সুদে বিতরণ করতে পারবে, বাজারে যেখানে সুদহার রয়েছে ৯ শতাংশ। ১ শতাংশ সুদে অর্থ নিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে ৫ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে গত ডিসেম্বরে ‘গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড’ নামে ৫ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষি খাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয় গত নভেম্বর মাসে। মাত্র দশমিক ৫০ শতাংশ সুদে অর্থ নিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হবে। গম ও ভুট্টা উৎপাদন বাড়াতে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ সুদে তহবিল নিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়ার তহবিল রয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১০ হাজার কোটি টাকার রপ্তানি সহায়ক তহবিল করা হয়েছে। মাত্র দেড় শতাংশ সুদে অর্থ নিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে বিতরণ হবে ৪ শতাংশ সুদে। তবে ব্যাংক বা গ্রাহক থেকে এসব তহবিল থেকে ঋণ নিতে তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, এখন ব্যবসায়ীরা দৈনন্দিন খরচ মেটানোর অর্থায়ন চাচ্ছেন। নতুন বিনিয়োগে যাচ্ছে খুব কম। যে কারণে অনেক কম সুদে গ্রাহক ও ব্যাংককে এ তহবিল দেওয়ার পরও আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তহবিল নিতে অনেক ধরনের নিয়ম মানতে হয়। ব্যাংকগুলোর আগ্রহ না থাকার এটিও একটি কারণ হতে পারে।