২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৭:৫৪:৫৩ পূর্বাহ্ন


পুরোদমে চলছে মাতারবাড়ী বন্দর তৈরির কাজ
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৩-২০২৩
পুরোদমে চলছে মাতারবাড়ী বন্দর তৈরির কাজ ফাইল ফটো


কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় বঙ্গোপসাগরের উপকূলজুড়ে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরির কাজ চলছে পুরোদমে। একটি চ্যনেল এবং দুটো বাঁধ তৈরি শেষ করার পর সমুদ্রবন্দর আরও দৃশ্যমান হয়েছে।

নৌ-প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানান, 'মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর দৃশ্যমান হয়েছে। ৪৬০ মিটার দীর্ঘ কন্টেইনার জেটি, ৩০০ মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাজ জেটি, কন্টেইনার ইয়ার্ডসহ বন্দরের অন্যান্য কাজ শুরু করার জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে।'

এছাড়াও মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক পাওয়ারপস্ন্যান্টের ফলেও বন্দরের কাজ অনেকখানি এগিয়ে গিয়েছে। প্রকল্পটির জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল নিয়ে ১১৭টি কার্গো জাহাজ ডকে ভিড়েছে।

২০২৬ সালে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর মাতারবাড়ী চালু হলে জাহাজের খরচ প্রায় ৫৭ শতাংশে নেমে আসবে, পণ্য পরিবহণের সময়ও ৬০ শতাংশ কমে আসবে।

মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (সিপিএ)-র চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান জানান, 'বর্তমানে এক টিইইউ (টুয়েন্টি-ইকু্যইভ্যালেন্ট ইউনিট) ফ্রেইটের জন্য কমপক্ষে ৩ হাজার ডলার খরচ হয়, ইউরোপে পৌঁছাতেও সময় নেয় ৪০-৪২ দিন। তবে বন্দর কার্যক্রম চালু হওয়ার পর ৮,২০০ টিইইউসের বেশি সক্ষমতাসম্পন্ন কন্টেইনার বহনকারী জাহাজ পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে আসতে পারবে, অন্য বন্দরে ভেড়ার প্রয়োজন হবে না। ইউরোপ থেকে জাহাজ আসতে মাত্র ১৬-১৭ দিন সময় লাগবে, খরচও কমে আসবে ১,৩০০ মার্কিন ডলারের নিচে। এটি দেশের অর্থনীতির চাকা অনেকখানি সচল করবে।'

সিপিএ চেয়ারম্যান আরও জানান, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে কোনো চালান সরাসরি ইউরোপে যায় না। প্রথমে কার্গো কন্টেইনারগুলো সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার মতো বন্দরে যায়, এবং সেখানে ইউরোপে যাওয়ার মতো কোনো মাদার ভেসেলের জন্য অপেক্ষা করে। এর ফলে সময় ও খরচ অনেক বেড়ে যায়।

তিনি আশা করছেন, ২০২৬-এর জানুয়ারি মাসের মধ্যে সমুদ্রবন্দরের কাজ শুরু হলে বড় আকারের ফিডার ভেসেল সরাসরি বাংলাদেশে আসতে পারবে এবং সময় ও খরচ বাচাবে। দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন এবং একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে এটি।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান হাইড্রোগ্রাফার এম আরিফুর রহমান জানান, 'বর্তমানে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের এবং ১০-মিটার গভীরতার (ড্রাফট) জাহাজ চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের জেটিতে ভিড়তে পারে। এই জাহাজগুলো ৮০০ থেকে ২,৪০০ টিইইউ সমান কন্টেইনার বহন করতে পারে।' একবার মাতারবাড়ী বন্দর নির্মাণ শেষ হলে ৩৫০ মিটার দীর্ঘ এবং ১৮ মিটার গভীরতার (ড্রাফট) জাহাজ এই বন্দরে ভেড়ানো সম্ভব হবে।

আরিফুর রহমান জানান, প্রথম পর্যায়ে বন্দরে দুটি জেটি এবং একটি টার্মিনাল তৈরি করা হবে, যাতে করে একই সময়ে দুটি জাহাজে পণ্য ওঠানামা করানো যায়।

চট্টগ্রাম থেকে মাতারবাড়ীর দূরত্ব ৩৪ নটিক্যাল মাইল, পায়রা বন্দর থেকে ১৯০ নটিক্যাল মাইল এবং মংলা বন্দর থেকে ২৪০ নটিক্যাল মাইল। তিনি জানান, মাতারবাড়ী বন্দর তৈরির পর এখানে মাদার ভেসেলকে ভিড়িয়ে সড়কপথ বা সমুদ্রপথে অন্যান্য বন্দরে খুব কম সময়ে পণ্য আনা-নেওয়া করা যাবে।

২০২০ সালে ১০ মার্চ একনেকে অনুমোদন হওয়া এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১৭,৭৭৭ কোটি টাকা। মোট ব্যয়ের মধ্যে ৮,৯৫৫ কোটি টাকাই খরচ হবে কেবল বন্দর তৈরির জন্য। এই প্রকল্পের জন্য জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ৬,৭৪২.৫৭ কোটি টাকা ঋণ দেবে। বাকি ২,২১৩.২৪ কোটি টাকা আসবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব তহবিল থেকে।

বন্দর বাদ দিয়ে ৮,৮২১ কোটি টাকা খরচ হবে সড়ক পথ নির্মাণের জন্য, যেটি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধীনে হবে