২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ০৭:৪৭:৩৫ অপরাহ্ন


মামলা তুলে নিতে রাজশাহী আদালত চত্বরে যুবতীকে হুমকি, থানায় জিডি
নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৩-২০২৩
মামলা তুলে নিতে রাজশাহী আদালত চত্বরে যুবতীকে হুমকি, থানায় জিডি মামলা তুলে নিতে রাজশাহী আদালত চত্বরে যুবতীকে হুমকি, থানায় জিডি


রাজশাহীর আদালতে উকিলের সাথে মামলা সংক্লান্ত বিষয়ে কাজে গিয়েছিলেন যুবতী ভুক্তভোগী জুলেখা খাতুন। এ সময় তাদের দায়ের করা মামলার তিন আসামী জুলেখাকে দেখে তেড়ে আসে। অশ্লিল ভাষায় গালিগালাজ করে এবং মামলা তুলে না নিলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজশাহীর আদালত চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। 

এ ঘটনায় জুলেখা খাতুন বাদী হয়ে একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন। রাজপাড়া থানার জিডি নং-৬০৭, তাং-০৯/০৩/২০২৩। 

অভিযুক্তরা হলো- দূর্গাপুর থানার চককৃষ্ণপুর গ্রামের মোঃ ইব্রাহিম সরদারের ছেলে মোঃ ইমদাদুল হক (৩৯), নগরীর মতিহার থানাধীন কাজলা মৃধাপাড়া এলাকার মোঃ সামশুর রহমান কান্দুর ছেলে রাফিকুর রহমান লালু (৫০), ও চন্দ্রীমা থানাধীন চন্দ্রীমা আবাসিক এলাকার মোঃ সেলিম রেজার ছেলে মোঃ সোহাগ আলী।

জুলেখা জানায়, আমি রাজশাহী কলেজ থেকে ইকোনোমিক্স সাবজেট নিয়ে মার্স্টাস কমপ্লিট করেছি। চাকরি খুঁজছিলাম। কাকতালীয় ভাবে ইমদাদ ও লালুর সাথে পরিচয় হয়। ইমদাদ বলে আমি ডিবি অফিসার সরকার অনুমোদিত সংবাদ চলমান নামের তার একটি টিভি চ্যানেল ও একই নামে অনলাইন নিউজ পোর্টাল রয়েছে। অফিস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভেতরে। তাদের দেয়া ঠিকানায় গিয়ে দেখি সিয়ামুন চাইনিজ রেষ্টুরেন্টের নিচে একটি কর্ণারে ঘর ভাড়া নিয়ে অফিস করেছে ইমদাদ ও তার অনলাইনের উপদেষ্টা মাদকাশক্ত লালু। আমাকে তার তাদের সরকার অনুমোদিত টিভি চ্যানেলে মাসে ৭হাজার টাকা বেতনে চাকরী দেয়। ১৫দিন অতিক্রম না হতেই ইমদাদ ও লালু আমাকে নানা ভাবে উত্যাক্ত করতে থাকে ও কু-প্রস্তাব দেয়। সকল চেষ্টা ব্যর্থ হলে মূর্খ, ভুয়া ম্যজিস্ট্রেট, ভুয়া ডিবি অফিসার, চিট, প্রতারক খ্যাত ইমদাদ আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। আমি তাদের অঙ্গভঙ্গী কথাবার্তা শুনে ভয় পাই। মাস শেষ না হতেই অনুমানিক ২০দিনের মাথায় তাদের অফিসে গিয়ে চলমানের কার্ড জমা দেই। বলি চাকরি করবো না। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে ইমদাদ আমাকে অশ্লিল ভাষায় গালি দেয় এবং অফিসের ভেতরে জড়িয়ে ধরে স্লীলতাহানী করে। কিছুক্ষন পর আমার সহকর্মী মোঃ দুর্জয় খান (২৬) অফিসে আসলে ইমদাদ লোহার রড দিয়ে তার বাম হাতে আঘাত করে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে একে অপরের নামে আজেবাজে শিকারোক্তি নেয়। 

ভুক্তভোগী তাসমিরা তাবাস্সুম বলেন, গত (২ ফেব্রুয়ারী) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিজ ঘরে ঘুমাচ্ছিলাম। এদিন ইমদাদ, লালু ও তার সহযোগী সোহাগ আলী সহ অজ্ঞাত ২/৩ জন ব্যক্তি অনুমতি ছাড়াই তার শয়নকক্ষে প্রবেশ করে। ওই সময় তাদের হাতে থাকা ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন দিয়ে শরীর অপ্রস্তুত থাকা অবস্থায় ভিডিও ধারণ করে। তারা দুর্জককে জড়িয়ে আপত্তিকর কথা এবং বিয়ের কাবিননামা বাবদ ৫ লক্ষ টাকার অপ্রসাঙ্গীক মিথ্যা ও বানোয়াট কথা ক্যামেরার সামনে বলতে বলে। তাদের কথায় সে রাজি না হলে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে, বেশ্যা বলে গালি দেয় এবং হাত ধরে টানাটানি করে এবং কুপ্রস্তাব দেয় ইমদাদ ও লালু। এরপর (২০ ফেব্রুয়ারী) রাত ৯:৪৪ মিনিটে অনলাইন সংবাদ চলমান নামক কথিত সরকারী টিভি চ্যানেলে যুবতীর অপ্রস্তুত শরীরের ভিডিও সহ তার কথা এডিট করে মানহানীকর সংবাদ তাবাস্সুম, দুর্জয় ও জুলেখার নামে প্রচার করে।   

এ ব্যপারে জুলেখা বাদি হয়ে মতিহার থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মতিহার থানার মামলা নং-১৯, তারিখ ২২/০২/২০২৩, ধারা- ১০, নারী ও শিশু নির্যাতন আইন (সংশোধনী- ২০২০) তৎসহ ৩২৩/৫০৬ পেলান কোড ১৮৬০। 

আর তাবাসসুম চন্দ্রীমা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। চন্দ্রীমা থানায় মামলা নাং- ১৬, তারিখ ২১/০২/২০৩, ধারা- ২০০০ সালের নারী ও শিশু আইন নির্যাতন (সংশোধনী- ২০০৩, ২০২০) এর ১০ সহ পেনাল কোড ১৪৩/৪৪৮/৫০৬ তৎসহ পর্ণগ্রাফি আইন ২০১২ এর ৮(১/৮(৩)।  

ভুক্তভোগী জুলেখা ও রাবি শিক্ষার্থী দুর্জয় জানায়, ইমদাদ ও লালু’র সার্বিক কর্মকান্ডের বিষয়ে আমরা অবগত হয়েছি। তারা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র ও গন্ডা মূর্খ। তাদের কাজ হলো মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করা ও নিউজের হুমকি দিয়ে টাকা হাতানো। এছাড়া তারা প্রশাসনিক তদবির যেমন: হাইকোট থেকে জামিন করানো, মামলা থেকে নাম বাদ দেয়া, মামলা থেকে খালাস করা ইত্যাদি মিথ্যা কথা বলে মানুষকে ধোকা দিয়ে বোকা বানিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে সটকে পড়া। আর এ কাজগুলি সাধারণত জেলা উপজেলার মানুষের সাথে করে থাকে। এছাড়া অনুমোদিক ইটভাটা, বিস্কুট ও চানাচুর ফ্যাক্টরী, পুকুর ভরাট, পুকুর খননের স্থানে গিয়ে হামকি ধামকি দিয়ে টাকা নিয়ে থাকে। 

তারা আরও বলেন, বহিরাগত হয়ে রাবি অভ্যান্তরে প্রতারণা সিন্ডিকেট। বহিরাগত প্রতারকচক্র সিন্ডিকেট রাবি অভ্যান্তরে থাকতে পারে না। এ ব্যপারে কর্তৃপক্ষের কঠোর হস্তক্ষেপ দাবি করেন তারা।   

সাধারণ ডায়েরী ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ এস এম সিদ্দিকুর রাহমান বলেন, জুলেখা খাতুন তিনজনের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরী করেছে, তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।