২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ০১:৫৮:১৬ পূর্বাহ্ন


মামলা তুলে নিতে হুমকি অব্যাহত, রাজশাহীতে নারীদের ব্ল্যাকমেইলকারী ও প্রতারক চক্র সিন্ডিকেট বহাল তবিয়ত্যে!
ইব্রাহিম হোসেন সম্রাট:
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০৩-২০২৩
মামলা তুলে নিতে হুমকি অব্যাহত, রাজশাহীতে নারীদের ব্ল্যাকমেইলকারী ও প্রতারক চক্র সিন্ডিকেট বহাল তবিয়ত্যে! মামলা তুলে নিতে হুমকি অব্যাহত, রাজশাহীতে নারীদের ব্ল্যাকমেইলকারী ও প্রতারক চক্র সিন্ডিকেট বহাল তবিয়ত্যে!


রাজশাহী মহানগরীতে পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা দাবি করে ধোকা দিয়ে, বোকা বানিয়ে, দুই শিক্ষার্থী যুবতী ও রাবির এক ছাত্রকে ব্ল্যাকমেইল ও চরিত্র নিয়ে অপপ্রচারকারী ইমদাদ, লালু ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে ভুক্তভোগীরা।

মানববন্ধনের অয়োজন করেন, ভুক্তভোগী যুবতী শিক্ষার্থী জুলেখা খাতুন (২৯), তাসমিরা তাবাসসুম (২৪) ও রাবির মাস্টাস্রে ছাত্র দুর্জয় খান (২৪)। এ সময় বিভিন্ন পত্রিকার প্রায় অর্ধশতাধিক সাংবাদিকবৃন্দ মানববন্ধনে অংশগ্রহন করেন। 

সোমবার (৬ মার্চ) সকাল ১১টায় মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার সাহেববাজার রাজশাহী প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। 

অভিযুক্তরা হলো: দূর্গাপুর থানার চককৃষ্ণপুর গ্রামের মোঃ ইব্রাহিম সরদারের ছেলে মোঃ ইমদাদুল হক (৩৯), নগরীর মতিহার থানাধীন কাজলা মৃধাপাড়া এলাকার মোঃ সামশুর রহমান কান্দুর ছেলে রাফিকুর রহমান লালু (৫০), ও চন্দ্রীমা থানাধীন চন্দ্রীমা আবাসিক এলাকার মোঃ সেলিম রেজার ছেলে মোঃ সোহাগ আলী-সহ অজ্ঞাত ৩/৪জন।

ভুক্তভোগী জুলেখা বলেন, আমি রাজশাহী কলেজ থেকে ইকোনোমিক্স সাবজেক্ট নিয়ে মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। চাকরি খুঁজছিলাম। কাকতালীয় ভাবে ইমদাদ ও লালুর সাথে পরিচয় হয়। ইমদাদ বলে আমি ডিবি অফিসার, সরকার অনুমোদিত সংবাদ চলমান নামের তার একটি টিভি চ্যানেল ও একই নামে অনলাইন নিউজ পোর্টাল রয়েছে। অফিস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভেতরে। তাদের দেয়া ঠিকানায় গিয়ে দেখি সিয়ামুন চাইনিজ রেষ্টুরেন্টের নিচে একটি কর্ণারে ঘর ভাড়া নিয়ে অফিস করেছে ইমদাদ ও তার অনলাইনের উপদেষ্টা মাদকাশক্ত লালু। আমাকে তাদের সরকার অনুমোদিত টিভি চ্যানেলে মাসে ৭হাজার টাকা বেতনে চাকরী দেয়। ১৫দিন অতিক্রম না হতেই ইমদাদ ও লালু আমাকে নানা ভাবে উত্যাক্ত করতে থাকে ও কু-প্রস্তাব দেয়। সকল চেষ্টা ব্যর্থ হলে মূর্খ, ভুয়া ম্যজিস্ট্রেট, ভুয়া ডিবি অফিসার, চিট, প্রতারক খ্যাত ইমদাদ আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। আমি তাদের অঙ্গভঙ্গী কথাবার্তা শুনে ভয় পাই। মাস শেষ না হতেই অনুমানিক ২০দিনের মাথায় তাদের অফিসে গিয়ে অনলাইনের কার্ড জমা দেই। বলি চাকরি করবো না। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে ইমদাদ আমাকে অশ্লিল ভাষায় গালি দেয় এবং অফিসের ভেতরে জড়িয়ে ধরে শ্লীলতাহানী করে। কিছুক্ষন পর আমার সহকর্মী মোঃ দুর্জয় খান (২৬) অফিসে আসলে ইমদাদ লোহার রড দিয়ে তার বাম হাতে আঘাত করে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে একে অপরের নামে আজেবাজে স্বিকারোক্তি নেয় এবং ভিডিও ধারন করে। তারা এখনো তাদের অনলাইনে আজেবাজে অপপ্রচার অব্যাহত রেখেছে বলে দাবি করেন জুলেখা।

ভুক্তভোগী তাসমিরা তাবাস্সুম বলেন, গত (২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিজ ঘরে ঘুমাচ্ছিলাম। এদিন ইমদাদ, লালু ও তার সহযোগী সোহাগ আলী সহ অজ্ঞাত ২/৩ জন ব্যক্তি অনুমতি ছাড়াই শয়নকক্ষে প্রবেশ করে। ওই সময় তাদের হাতে থাকা ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন দিয়ে আমার শরীর অপ্রস্তুত থাকা অবস্থায় ভিডিও ধারণ করে। তারা দুর্জককে জড়িয়ে আপত্তিকর কথা এবং বিয়ের কাবিননামা বাবদ ৫ লক্ষ টাকার অপ্রসাঙ্গীক মিথ্যা ও বানোয়াট কথা ক্যামেরার সামনে বলতে বলে। তাদের কথায় সে রাজি না হলে বেশ্যা বলে গালি দেয়, হাত ধরে টানাটানি করে এবং কুপ্রস্তাব দেয় ইমদাদ ও লালু। এরপর (২০ ফেব্রুয়ারী) রাত ৯:৪৪ মিনিটে অনলাইন সংবাদ চলমান নামক কথিত সরকারী টিভি চ্যানেলে অপ্রস্তুত শরীরের ভিডিও সহ আমার কথা এডিট করে মানহানীকর সংবাদ আমার দুর্জয় ও জুলেখার নামে প্রচার করে।   

রাবি ছাত্র দুর্জয় খান বলেন, আমাকে রাবি অভ্যান্তরে রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করেছে লালু ও ইমদাদ। তার বানানো কথা জোর করে বলিয়ে ভিডিও ধারণ করেছে। আমি রাবি’র মাস্টার্সের ছাত্র হয়েও রাবি কর্তৃপক্ষ এই প্রতারকদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। তাহলে আমার নিরাপত্তা কোথায়? কে দেবে আমাকে নিরাপত্তা। তারা এখনও রাবি অভ্যান্তরে অবস্থান করছে। তাদের আশ্রয় প্রশ্রয় দাতা সিয়ামুন চাইনিজ রেষ্টুরেন্টের মালিক মোঃ ইব্রাহিম হোসেন মুন। তিনি জুলেখাকে ফোন দিয়ে মামলা তুলে নিতে এক প্রকার চাপসৃষ্টি করছে। কিসের স্বার্থে তিনি এই প্রতারক চক্র সিন্ডিকেটকে সাপোর্ট করছেন তা আমার বোধগম্য নহে। আমি রাবির ছাত্র আমাকে রাবি’র অভ্যান্তরে রড দিয়ে আঘাত করে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কলঙ্কিত করেছে বহিরাগত প্রতারক সিন্ডিকেটের সদস্যরা। আমি রাবি কর্তৃপক্ষের নিকট দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, সাংবাদিক সমাজের সম্মান অক্ষুন্ন রাখতে মূর্খ, প্রতারক, (চিট, বাটফার) ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট, ভুয়া ডিবি অফিসার, নারীদের কুপ্রস্তাবকারী, মাদকাসক্ত রাফিকুর রহমান লালু, ইমদাদুল হক ইমদাদ ও তাদের সহযোগীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। সেই সাথে অবৈধ উপায়ে চালানো অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও তাদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আরএমপি পুলিশ কমিশনার ও রাসিক মেয়র মহাদয়ের সুদৃষ্টি ও কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। 

উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে থাকা বহিরাগত এই প্রতারক চক্র সিন্ডিকেট উচ্ছেদ করে কলঙ্কমুক্ত করা হোক আমার রাবি’কে। আমি ভিসি মহাদয়ের নিকট অনুরোধ জানাচ্ছি বহিরাগতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। 

এদিকে, বৃহস্পতিবার (৯মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজশাহীর আদালতে উকিলের সাথে মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে কাজে গিয়েছিলেন যুবতী ভুক্তভোগী জুলেখা খাতুন।

এ সময় জুলেখাকে দেখে তেড়ে আসে তাদের দায়ের করা মামলার তিন আসামী মোঃ ইমদাদুল হক, রাফিকুর রহমান লালু  ও মোঃ সোহাগ আলী। এ সময় তারা অশ্লিল ভাষায় গালিগালাজ করে এবং মামলা তুলে না নিলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে।

এ ঘটনায় জুলেখা খাতুন বাদী হয়ে একটি সাধারন ডায়েরী করেছেন। রাজপাড়া থানার জিডি নং-৬০৭, তাং-০৯/০৩/২০২৩। 

অপরদিকে, সার্বিক বিষয় তুলে ধরে গণস্বাক্ষর সম্মেলিত একটি অভিযোগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রক্টর ও ভিসি বরাবর জমা দিয়েছেন কাজলার স্থানীয়রা। প্রক্টর ও ভিসি মহাদয় বহিরাগতদের অস্থানা উচ্ছেদে ব্যবস্থা গ্রহণের  আশ্বাসও দিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত রাবি অভ্যান্তরে প্রতারকদের ঘর থেকে উচ্ছেদ করা হয়নি। এনিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তাঘাট চায়ের স্টলে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।