২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১২:২৩:২১ অপরাহ্ন


আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিটকয়েন
তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৩-২০২৩
আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিটকয়েন ফাইল ফটো


ক্রিপ্টোকারেন্সি একটি চ্যালেঞ্জিং সময় পার করেছে গত বছর। এ সময়ের স্বপ্নের বিটকয়েনের দাম এসে ঠেকেছিল তলানিতে। অনেকেই বলছিলেন, স্বপ্ন দেখানো ক্রিপ্টোকারেন্সি স্রেফ ভাওতাবাজি ছাড়া কিছুই না।

ক্যাশলেস পৃথিবী ও ডিজিটাল কারেন্সি নিয়ে আলোচনা নতুন কিছু না। কিন্তু যেভাবে বিটকয়েনের দরপতন হয়েছে এবং শেষমেশ ক্রিপ্টোকিং খ্যাত স্যাম ব্যাংকম্যান ফ্রাইড দেউলিয়া হয়েছেন তাতে করে অনেকের মনেই দেখা দিয়েছিল চরম সংশয়।

তবে বছর পার হতে না হতেই আবারও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিটকয়েন। গত বছর মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার মিয়ামিতে মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিলিয়নিয়ার পিটার থিয়েল জনতাকে লক্ষ্য করে ছুড়ে দিয়েছিলেন ১০০ ডলারের একটি কাগুজে নোট। তিনি তার বক্তৃতায় বলেছিলেন কাগুজে নোটের দিন শেষ। বিশ্ব চলবে এখন বিটকয়েনের লেনদেনে।

থিয়েল তার বক্তৃতায় জোর দিয়ে বলেছিলেন, ‘দিন যত আগাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো তত বেশি দেউলিয়া হয়ে যাবে। আমাদের বুঝতে হবে, কাগুজে মুদ্রা দিনকে দিন সেকেলে হয়ে যাচ্ছে।’

তবে থিয়েলের এমন আত্মবিশ্বাসী বক্তব্য সাধারণ মানুষের কাছে তুড়িবাজি প্রমাণ হতে খুব বেশিদিন সময় লাগেনি। গত বছর বিটকয়েনের দাম কমেছে ৪০ শতাংশ। শুধু বিটকয়েন না, ইথিরাম ও বিন্যান্সের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সির দামও ৪৮ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। যারা ২০২২ সালের জানুয়ারিতে বিটকয়েনের দাম বাড়ায় দেদারসে বিনিয়োগ করেছিলেন, তারা কয়েক মাসের মধ্যে বড় রকমের ধাক্কা খান।

এ ছাড়া নভেম্বরের শেষের দিকে স্যাম ব্যাংকম্যানের ক্রিপ্টো প্রতিষ্ঠান এফটিএক্স দেউলিয়া হয়ে যাওয়াকে অনেকেই দেখেছেন বিটকয়েনের কফিনে সর্বশেষ পেরেক হিসেবে। তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এসে বদলাতে থাকে বিটকয়েনের বাজারও। আবার বাড়তে শুরু করে বিটকয়েনের দাম।

এই দাম বাড়াকে কেন্দ্র করেই ভারতীয় বংশদ্ভোত আমেরিকান উদ্যোক্তা বালাজি শ্রীনিবাস নিজের এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, এবার যে হারে বিট কয়েনের দাম বাড়তে শুরু করেছে এতে করে কয়েক মাসের মধ্যে বিটকয়েন প্রতি মূল্য দাঁড়াবে ১ মিলিয়ন ডলার।

এদিকে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিবি) দেউলিয়া হয়ে গেলে তা শাপেবর হয়েছে বিটকয়েনের জন্য। এসভিবি দেউলিয়া হওয়ার পরে আবারও থিয়েলের বক্তব্যের সারকথা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে মানুষের মনে। এ ঘটনার পরপরই বিটকয়েনের দাম বেড়েছে ৩৫ শতাংশ।

সম্প্রতি বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে ফেডারেল রিজার্ভের নেয়া সুদের হার বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের সুবিধা জনগণ না পেলেও পেয়েছে বিটকয়েন। অনেকটা স্বাধীন কারেন্সি হিসেবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির বাজারে বিটকয়েন তাদের অবস্থানকে পাকাপোক্ত করে নিয়েছে। এ ছাড়া বাজারে সঙ্গে মুদ্রার তরলীকরণ নীতি জড়িত থাকলেও এমনকি সোনার বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চললেও বিটকয়েন অনেকটা বাজারের প্রভাবমুক্ত থেকে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে পারে। এতে করে ভবিষ্যতে ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে আবারও পছন্দের তালিকায় থাকবে বিটকয়েন বা ক্রিপ্টোমুদ্রা- এমনটাই মনে করেন ব্যবসা বিশ্লেষকরা।

মার্কিন কর্তৃপক্ষ ডিজিটাল মুদ্রার বাজারটির ওপর কঠোর নজরদারি রাখার সত্ত্বেও মুদ্রাটির দর বাড়ছে। গত সপ্তাহেই ইউএস সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ ক্র্যাকেনকে স্টেকিং প্রোগ্রাম সঠিকভাবে নিবন্ধন করতে না পারার অভিযোগে ৩০ মিলিয়ন ডলার জরিমানা করেছে।

ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ লুনো-এর কর্পোরেট ডেভেলপমেন্ট এবং ইন্টারন্যাশনালের ভাইস প্রেসিডেন্ট বিজয় আইয়ার বলেন, ‘গত বছর বাজার তলানিতে ঠেকেছিল। কিন্তু ক্রমবর্ধমানভাবে সেই পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটছে। বাজারে এখন গতি এসেছে। আমরা আমাদের সবচেয়ে খারাপ সময় পার করে এসেছি।’

গত বছর ক্রিপ্টো বাজার থেকে প্রায় ১ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার হারিয়ে যায়। যার কারণে খাতটিতে অনেকেই দেউলিয়া হন। এসব অস্থিরতার মধ্যে ক্রিপ্টোর প্রধান এক্সচেঞ্জ এফটিএক্সে ধস নামে।

সে সময় অনেক বিলিয়নিয়ার বিটকয়েন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। এদের মধ্যে ইলন মাস্ক গত বছরের শুরুতে বিটকয়েনে বিনিয়োগ করলেও বছর শেষে এসে ৭৫ শতাংশ বিটকয়েন বিক্রি করে দিয়েছিলেন, যার বাজারমূল্য ছিল ৯৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

এদিকে বিটকয়েনের এমন অস্থির বাজার নিয়ে আরেক ধনকুবের ওয়ারেন বাফেট বলেন, ‘আপনি যদি আমাকে বিশ্বের সব বিটকয়েন ২৫ মার্কিন ডলারের (বাংলাদেশি মুদ্রায় দুই হাজার টাকার কিছু বেশি) বিনিময়েও কিনে নেয়ার প্রস্তাব দেন, আমি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করব না। এটা (বিটকয়েন) দিয়ে আমি কী করব? বিটকয়েনের পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রে কৃষি জমি কিংবা অ্যাপার্টমেন্ট কেনাও লাভজনক বলে মনে করেন ওয়ারেন বাফেট। তার মতে, বিটকয়েনের কোনো মূল্য নেই। কারণ এটি উৎপাদনশীল কিছু নয়।

বিটকয়েনের দরপতনের বড় ধরনের বিপদের মুখে পড়েছিল মধ্য আমেরিকার দেশ এল সালভাদর। দেশটিতে বিটকয়েন বৈধ হওয়ায় ও সরকারি কারেন্সি হিসেবে বিটকয়েনকে জায়গা দেয়ার গত বছরের দরপতনে বড় রকমের ধাক্কা খেয়েছিল দেশটি।

তবে সম্প্রতি মার্কিন আর্থিক প্রতিষ্ঠান রিফিনটিভের দেয়া এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি মার্চে বিটকয়েনের দাম ইতোমধ্যে ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বছর শেষে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। এর আগে ২০২১ সালে বিটকয়েনের সর্বোচ্চ দাম উঠেছিল ৬০ বাজার মার্কিন ডলার। বর্তমানে সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী বাজারতে প্রতি বিটকয়েনের মূল্য ২৭ হাজার ৯৩০ ডলার।