১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ০৯:২১:৩৪ পূর্বাহ্ন


রাজশাহীতে কাউন্সিলর পদে লড়বেন তৃতীয় লিঙ্গের সাগরিকা
নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৫-২০২৩
রাজশাহীতে কাউন্সিলর পদে লড়বেন তৃতীয় লিঙ্গের সাগরিকা রাজশাহীতে কাউন্সিলর পদে লড়বেন তৃতীয় লিঙ্গের সাগরিকা


আসন্ন রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে লড়বেন তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর সুলতানা আহমেদ সাগরিকা।  

মঙ্গলবার (২ মে) দুপুরে সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন ফরম উত্তোলন করেন তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠির এই সদস্য।

সুলতানা আহমেদ সাগরিকার বাড়ি রাজশাহী নগরের শাহ মখদুম থানাধীন শিল্পীপাড়া এলাকায়। বাবা-মায়ের চার সন্তানের একজন তিনি। বাবা-মারা গেছেন। বর্তমানে মা-বোনের কাছে থাকেন। 

তিনি রাসিকের জোন-৭ অর্থাৎ সংরক্ষিত ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে লড়বেন।

মনোনয়ন ফরম উত্তোলন শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় সাগরিকা বলেন, তিনি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হওয়ায় নবম শ্রেণীতে ওঠার পরে আর স্কুলে টিকতে পারেননি। সহপাঠীদের নানা টিপ্পনির কারণে তিনি স্কুল ছাড়েন। শুধু তাই নয় সমাজের ও পারিপার্শিক জনগণের লাগাতার অত্যাচার ও তার পরিবারকে প্রতিনিয়ত হেয়প্রতিপন্ন করায় এক সময় তাকে নিজ বাড়ি ও বাবা-মাকে ছাড়তে হয়েছে। এরপর শুরু হয় তার সংগ্রামী জীবন। তার রয়েছে নানা তিক্ততা ও অভিজ্ঞতা।

তিনি বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের সন্তানরা ভিনগ্রহের মানুষ নয়। তারা এই পরিবার, সমাজ তথা দেশের মানুষ। তারাও কোনো কোনো বাবা-মায়ের মাধ্যমে এই পৃথিবীতে এসেছে। তারাও মানুষ। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এক শ্রেণীর মানুষ তাদের মানুষ হিসেবে মানতে চায় না। অথচ সরকার তাদের স্বীকৃতি দিয়েছে। সরকারের এই স্বীকৃতি ও ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার কারণে তিনি আজ অন্যদের সাথে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

সাগরিকা বলেন, সমাজের সব বাধা অতিক্রম করে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হয়ে তিনি জনগণের সেবা করতে চান। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষও যেসব ন্যায় মানুষকে ভালোবাসতে পারে এবং জনগণের সেবা করতে পারে তা তিনি দেখানোর জন্যই সমাজ সেবায় এই জনগুরুত্বপূর্ণ কাজে আসতে চাচ্ছেন। আর এই সুযোগটা করে দেওয়ার জন্য ওয়ার্ডবাসীর কাছে দোয়া ও ভোট প্রার্থনা করেন সাগরিকা।  

তিনি আরও বলেন, মূলত একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরির জন্য কাজ করছেন। যেখানে দাঁড়িয়ে তিনি জনসাধারণের ও তার সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকারের কথা বলতে পারবেন। মাঠপর্যায়ে প্রতিদিনই মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন নানা বিষয়ে। মানুষ ভিন্ন ধরনের নেতৃত্ব চায়। হিজড়াদের যোগাযোগ ক্ষমতা অন্যদের চেয়ে বেশি। নারী কাউন্সিলররা রাত-বিরাতে চলতে পারেন না। পুরুষরাও নারীদের নিয়ে কাজ করতে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগেন। কিন্তু হিজড়াদের বেড়ে ওঠাটাই অন্যদের থেকে আলাদা। তারা যেকোনো সময় মানুষের বিপদ-আপদে দাঁড়াতে পারবেন বলেও জানান।

তবে সিটি নির্বাচনে ভোটের মাঠে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে জানিয়ে সাগরিকা বলেন, ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা নানান কথা ছড়াচ্ছেন। তারা বলছেন যে, হিজড়া জনপ্রতিনিধি হলে অত্যাচার বেড়ে যাবে। হিজড়াদের সম্পর্কে আগে যে ধ্যান-ধারণা ছিল, তা সামনে আনার চেষ্টা করছেন তারা। তবে জনগণ তাদেরও ভালোবাসতে শিখে গেছে। অনেক জায়গায় তাদের সম্প্রদায়ের জনপ্রতিনিধিরা ভালো করছেন। তিনিও সব বাধা অতিক্রম করে ভাল কাজ করবেন।