১৪ মে ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৯:২১:৩২ পূর্বাহ্ন


রাজশাহীতে শব্দ দূষণ ও সম্ভব্য প্রতিকারে গবেষণা
স্টাফ রিপোর্টার :
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০৫-২০২৩
রাজশাহীতে শব্দ দূষণ ও সম্ভব্য প্রতিকারে গবেষণা রাজশাহীতে শব্দ দূষণ ও সম্ভব্য প্রতিকারে গবেষণা


বর্তমান নগরায়নের যুগে শব্দ দূষণ দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে, যা আমাদের স্বাস্থ ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। মাত্রারিক্ত শব্দের জন্য মানুষের শ্রবণ শক্তি হ্রাস পায়, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, ঘুম অনিয়মিত হয়, রক্ত চাপ বাড়িয়ে দেয়, হার্টের ক্ষতি করে, এমন কি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও হ্রাস পেতে পারে।

UNEP এর ২০২২ সালের এক রিপোর্টে ঢাকাকে বিশ্বের প্রথম এবং রাজশাহীকে বিশ্বের চতুর্থ শব্দ দূষণকারী শহর হিসেবে দেখানো হয়। যেখানে রাজশাহীতে শব্দের পরিমান দেখানো হয় ১০৩ ডেসিবেল।  এই রিপোর্টের পরিপেক্ষিতে বরেন্দ্র পরিবেশ উন্নয়ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রাজশাহী শহরের পাঁচটি জনবহুল স্থানে দিনের বেলা নগরীর ব্যাস্ততম সময়ে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ২০২২ সালে, এবং একই স্থানে ২০২৩ সালে শব্দের মান নির্ণয় করে।

পরিবেশ বান্ধব শহর রাজশাহীর পাঁচটি স্থান, তালাইমারী মোড়, রেইলগেট, বিসিক মঠ পুকুর, লক্ষিপুর মোড় ও সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট এলাকায় শব্দের মান নির্ণয় করা হয়। ওই পরীক্ষায় নেতৃত্ব দেয় প্রকৌশলী মোঃ জাকির হোসেন খান (পি.এইচ.ডি.)। তাঁকে সহযোগিতা করেন অলি আহমেদ (পি.এইচ.ডি. গবেষক), ইফাত আরা, ওবায়দুল্লাহ, শামসুর রাহমান শরীফ, কলি আহমেদ, তারেক আজিজ প্রমুখ।

ব্যাস্ততম সময়ে দিনের বেলা সর্বোচ্চ গড় শব্দ পাওয়া যায় ৯০ ডেসিবেল করে নগরীর রেইলগেট এবং লক্ষিপুর মোড়ে। যা আন্তর্জার্তিক সংস্থার প্রাপ্ত ফলের চেয়ে বেশ অনেকটা কম।

বাংলাদেশের শব্দ দূষণ বিধিমালা ২০০৬ অনুযায়ী, সর্বোচ্চ শব্দের ঘনমাত্রার উপর নির্ভর করে বিভিন্ন এলাকাকে পাঁচটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে; নীরব এলাকা, আবাসিক এলাকা, মিশ্র এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা এবং শিল্প এলাকা। নগরীর শব্দের মান পরীক্ষা করা স্থান গুলোর মধ্যে তালাইমারী মোড় (১০০ মিটারের মধ্যে RUET এর সীমানা বিদ্যমান) ও লক্ষিপুর মোড় (১০০ মিটারের মধ্যে বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগোনিস্টিক সেন্টার) নীরব এলাকার মধ্যে; রেইলগেট ও সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট বাণিজ্যিক এলাকার মধ্যে এবং বিসিক মঠ পুকুর শিল্প এলাকার মধ্যে পরে। প্রাপ্ত ফলাফলের উপর ভিত্তি করে শব্দ দূষণের মূল কারণ ও এর সম্ভাব্য প্রতিকারের বিষয়ে বরেন্দ্র পরিবেশ উন্নয়ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে অনুসন্ধান করা হয়। শব্দ দূষণ যুক্ত এলাকায় পরীক্ষার সময় ব্যাটারি চালিত অটো এবং অটো রিকশার উল্লেখযোগ্য  উপস্থিতি দৃশ্যমান ছিল।

অধিকাংশ যানবাহন অযথা হর্ন বাজাতে থাকে। বর্তমানে রাজশাহীতে প্রায় পনের হাজার এর বেশি ব্যাটারি চালিত অটো এবং অটো রিকশা বিদ্যমান। এগুলো মূলত TT হর্ন ব্যবহার করে। তাই, বাংলাদেশ শব্দদূষণ বিধিমালা অনুসরণ করে নির্জন এলাকায় TT হর্ন ও ভেপু হর্ন থেকে প্রাপ্ত শব্দ ০.৫ মিটার, ৭.৫ মিটার, ১০.০ মিটার এবং ২০.০ মিটার দূরত্বে শব্দের মান পরীক্ষা করা হয়। গবেষণাটি একটি আন্তর্জার্তিক জার্নাল, World Journal of Advance Research and Review তে প্রকাশিত হয়েছে।

আশাকরা যায় গবেষণাটি বিশ্বের অন্যতম পরিষ্কার শহরে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।

উল্লেখ যে, নগরীর তালাইমারী ও রেলগেটে এলাকা বাস গুলোকে অযথা যত্রতত্র হর্ন বাজাতে দেখা যায়। আরো উল্লেখ যে, আমরা প্রতিটি স্থানে দিনের বেলা ৩০ মিনিট করে শব্দের মান নির্ণয় করেছিলাম। বাংলাদেশের শব্দের নীতিমালা অনুযায়ী, ভোর ৬ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত দিবাকালীন সময়। ধারণা করা হয়, উক্ত ১৫ ঘন্টা শব্দের মান পরীক্ষা করে গড় মান  প্রাপ্ত মানের চেয়ে অনেকটাই কম আসবে, কারণ আমরা চূড়ান্ত ব্যাস্ত সময়ে (সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১ টা) শব্দের মান পরীক্ষা করেছিলাম। অটো রিক্সা গুলোতে ভেপু হর্ন বাধ্যতামূলক করা উচিত, যেন অন্য কোনো হর্ন ব্যবহার করতে না পারে। একই সাথে অটো রিক্সা আর রিক্সা গুলো নির্দিষ্ট লেন ব্যবহার করলে এবং বাস গুলো যত্রতত্র না দাঁড়ালে কিন্তু অন্য গাড়ি গুলোকে অহেতুক হর্ন দেয়া লাগে না।

শহরের মধ্যে গতি সীমাও নির্দিষ্ট করলে এর পরোক্ষ প্রভাব শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ এর উপর পড়বে। শব্দ দূষণের প্রভাব শুধু মানুষের উপর না, প্রতিটি পশু-পাখির উপর পরে। গাছ শব্দের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে যথেষ্ট কার্যকর।

আমের শহর রাজশাহীতে আম-জাম জাতীয় ফলের গাছ, নিম, সজনে জাতীয় গাছ লাগানো যেতে পারে; যেগুলো বড় হলে শব্দ ও বায়ু দূষণ রোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। সজনে গাছ বায়ু থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে অক্সিজেন নির্গমনে কার্যকর গাছ গুলোর মধ্যে অন্যতম। রাজশাহীর মেয়র, খায়রুজ্জামান লিটন রাজশাহীকে বিশ্বের অন্যতম পরিবেশ বান্ধব শহর করার জন্য নিরলস কাজ করছেন। রাজশাহী শহরের ওই গবেষণা করতে পেরে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের কাছে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ জানান এই গবেষকগণ।